জফরা আর্চার ও অন্যান্য ইংলিশ খেলোয়াড়দের আইপিএলের প্রতি নিবেদন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সুনীল গাভাস্কার। আর্চার তাঁর চোটের ব্যাপারটি লুকিয়েছেন বলেও দাবি তাঁর। মুম্বাইয়ের কাছ থেকে পুরো টাকা পেলে এর অর্ধেক আর্চারের জন্য ‘কপালের ব্যাপার’ মনে করে গাভাস্কারের পরামর্শ—আর্চার যাতে অর্ধেক অর্থ দান করে দেন!
কনুইয়ের চোটের পরিচর্যার জন্য আইপিএলের মৌসুম শেষের আগেই যুক্তরাজ্যে ফিরে গেছেন আর্চার। সেখানে স্ক্যানে তাঁর কনুইয়ের পুরোনো চোট ধরা পড়েছে আবার, এমন জানিয়েছে ইসিবি। এর ফলে এ মৌসুম থেকেই ছিটকে গেছেন এই ফাস্ট বোলার।
গত মৌসুমে চোটের কারণে খেলতে পারেননি আর্চার। তাঁকে সেবার পাওয়া যাবে না জেনেও অবশ্য কিনেছিল মুম্বাই ইন্ডিয়ানস। তবে মিডডে-তে লেখা কলামে আর্চারের চোট নিয়েও সমালোচনা করেছেন ভারতের সাবেক অধিনায়ক ও এখনকার ধারাভাষ্যকার গাভাস্কার, ‘মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের জফরা আর্চারকে নিয়ে অভিজ্ঞতা কেমন? সে চোটগ্রস্ত জেনেও তাকে নিয়ে জুয়া খেলা হয়েছে, এ মৌসুম থেকে পাওয়া যাবে এই আশায়। তাকে মোটা অঙ্কের টাকা দেওয়া হয়েছে, বিনিময়ে সে কী দিয়েছে? তাকে শতভাগ ফিট মনে হয়নি এবং এ ব্যাপারে ফ্র্যাঞ্চাইজিকে জানানো উচিত ছিল তার। (তবে) সে যখন বোলিংয়ে এসে তার নিয়মিত গতিতে করতেই পারছিল না, তখনই কেবল তার ফ্র্যাঞ্চাইজি এটি বুঝতে পেরেছে।’
ইংল্যান্ডে ফিরে যাওয়ার আগেও একবার চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করতে ভারত ছেড়েছিলেন আর্চার, এমন সংবাদও এসেছিল। যদিও টুইটারে সেটি একরকম অস্বীকারই করেছিলেন আর্চার। গাভাস্কার বলেছেন সেটির কথাও, ‘টুর্নামেন্টের মধ্যেই সে চিকিৎসার জন্য বিদেশে গেছে, তার দেশের ক্রিকেট বোর্ড এমনই বলেছে। সে কখনোই পুরো ফিট ছিল না, তবুও খেলতে এসেছে। যে ফ্র্যাঞ্চাইজি তাকে হয়তো ইসিবির চেয়ে বেশি টাকা দেয়, তাদের প্রতি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ থাকলে সে শেষ পর্যন্ত থাকত। না খেললেও থাকত, ফ্র্যাঞ্চাইজির প্রতি নিবেদন দেখাত। এর বদলে সে যুক্তরাজ্যে ফিরে যাওয়াটাই বেছে নিয়েছে।’
সেই আর্চারকেই পুরো বছরের জন্য দলে নিতে চায় মুম্বাই, এমন খবরও এসেছে। গাভাস্কার উড়িয়ে দিয়েছেন সেটিকেও, ‘বিশ্বের বিভিন্ন লিগে মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের হয়ে খেলার জন্য কোটি কোটি টাকার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে তাকে, এমন খবরও এসেছে। মানুষের দৃষ্টি ঘুরিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে হয়তো ইতিহাসের বড় কৌশলগুলোর একটি এটি। ভবিষ্যতের কোনো দৌড়ের জন্য খোঁড়া ঘোড়াকে দলে নেবে, মুম্বাই ইন্ডিয়ানস এত বোকা নয়। ভুলে যাবেন না, যা ঘটেছে তাতে মুম্বাই ইন্ডিয়ানস মুগ্ধ হবে না। তাকে ছাড়াও যেহেতু টুর্নামেন্টে ভালোভাবে তারা ঘুরে দাঁড়িয়েছে, ফলে আইপিএলের পুরো টাকা পেলে সে নিজেকে ভাগ্যবান ভাবতে পারে। সে ক্ষেত্রে এর অর্ধেক প্রিয় কোনো দাতব্য প্রতিষ্ঠানেও দিয়ে দিতে পারে সে।’
শুধু আর্চার নয়, ইংলিশ খেলোয়াড়দেরই আইপিএলের দলগুলোর প্রতি নিবেদন নিয়ে সমস্যা আছে বলেও মনে করেন গাভাস্কার। অন্য কারও নাম উল্লেখ না করলেও তিনি লিখেছেন, ‘আইপিএল ফ্র্যাঞ্চাইজি নাকি দেশের হয়ে খেলা—কোনটি বেছে নেবে, তা খেলোয়াড়ের ওপর। আইপিএলের বদলে দেশকে বেছে নিলে পুরো নম্বর তার। তবে আইপিএলকে বেছে নিলে তার প্রতিজ্ঞা রাখতে হবে। আগেভাগে চলে যাওয়ার কোনো অজুহাত দেখালে চলবে না, বিশেষ করে যখন প্লে-অফে যাওয়ার ক্ষেত্রে সময়টা গুরুত্বপূর্ণ। বেশ অনেক দিন ধরেই ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো এসব মেনে নিয়েছে, টুর্নামেন্টের পরের ধাপে খেলোয়াড়দের ছেড়ে দিয়েছে। এটা মূলত ইংলিশ খেলোয়াড়দেরই সমস্যা।’
এরপর গাভাস্কার বলেছেন, ‘নিউজিল্যান্ডের যেসব খেলোয়াড় শেষ পর্যন্ত থাকে, এরপর ইংল্যান্ডে কোনো সিরিজ খেলতে যায়, তাদের তো সমস্যা হয় না। অস্ট্রেলিয়ানদের ক্ষেত্রেও ঝামেলা হয় না। প্যাট কামিন্সের মতো যারা বিশ্রাম চায়, তারা নিজেদের নামই তোলে না, কোটি টাকা হারাচ্ছে জেনেও। এর ফলে পরের বছর যখন তাকে পাওয়া যাবে, ফ্র্যাঞ্চাজিগুলো হুড়োহুড়ি করবে তাকে নিতে। কারণ, তারা জানে, প্রতি ম্যাচেই তার কাছ থেকে পূর্ণ প্রচেষ্টা পাওয়া যাবে। অন্যান্য দেশের খেলোয়াড়দেরও এ সমস্যা নেই।’