একটা পর্যায়ে গিয়ে মানুষ ঠিকই অসহায়। একটা পর্যায়ে গিয়ে আত্মসমর্পণই বাস্তবতা।
ম্যানচেস্টারে অ্যাশেজের চতুর্থ টেস্টের সমাপ্তি নিয়ে এমনই অনুভূতি এখন ইংল্যান্ডের খেলোয়াড় ও সমর্থকদের। চতুর্থ দিন শেষে ম্যাচ যেখানে দাঁড়িয়েছিল, ইংল্যান্ডের জয়ের সম্ভাবনা নিয়ে সংশয় ছিল খুব কম মানুষেরই। কিন্তু সেই জয়টা ইংল্যান্ড পায়নি শেষ পর্যন্ত। পঞ্চম দিনে ৯৮ ওভার খেলা হওয়ার কথা থাকলেও একটি বলও মাঠে গড়ায়নি। পুরো দিনের খেলা বৃষ্টিতে ভেসে যাওয়ায় ম্যাচ শেষ হয়েছে ড্রয়ে। এই ড্রয়ের ফলে সিরিজে ২–২ সমতা আনার সম্ভাবনা নষ্ট হয়ে গেছে ইংল্যান্ডের। শেষ হয়ে গেছে ৩–২ ব্যবধানে সিরিজ জয়ের আশাও।
বিপরীতে বড় প্রাপ্তিই ঘটেছে অস্ট্রেলিয়ার। ওভালে শেষ টেস্ট হারলেও এবারের অ্যাশেজে তারা হারছে না। ২০১৭ থেকে অস্ট্রেলিয়ার হাতে থাকা অ্যাশেজ আরও দুই বছর তাদেরই থাকছে।
তবে যেভাবে এই প্রাপ্তি নিশ্চিত হয়েছে, সেটি চাননি বলেই ম্যাচ শেষে মন্তব্য করেছেন অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক প্যাট কামিন্স। আর ড্রয়ের ভুক্তভোগী ইংল্যান্ড দলের অধিনায়ক বলেছেন, ‘হজম করাটা কঠিন।’
সাধারণত ম্যাচ শেষে সম্প্রচার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বলে থাকেন ক্রিকেটাররা। এবারের অ্যাশেজেই যেটা প্রতি ম্যাচের পর দেখা গেছে। তবে ম্যানচেস্টার টেস্টের শেষ দিনে ইংল্যান্ড দলের কেউ স্কাই স্পোর্টসের সঙ্গে কথা বলেননি। বৃষ্টির কারণে একপর্যায়ে খেলা সমাপ্ত ঘোষণার পর স্কাইয়ের ইয়ান ওয়ার্ড জানান, ইংল্যান্ডের খেলোয়াড়দের কেউ কথা বলতে রাজি হননি। এর মাধ্যমে স্টোকসের দলের হতাশাই ফুটে উঠেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
তবে অধিনায়ক হিসেবে স্টোকসকে ঠিকই পুরস্কার বিতরণী ও আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনের মুখোমুখি হতে হয়েছে। সেখানে বৃষ্টির কারণে খেলা না হওয়ার হতাশা লুকাননি ইংল্যান্ড অধিনায়ক, ‘আবহাওয়া আমাদের সহায়তা করেনি। আমরা এটা নিজেদের চাওয়া মতো বদলাতেও পারি না। এটা হজম করা কঠিন। কারণ, এর (আবহাওয়া) কারণেই আমাদের এখন ড্র নিয়ে বসে থাকতে হচ্ছে। অথচ যতক্ষণ খেলা হয়েছে, নিজেদের পক্ষে সম্ভব সবই আমরা করে রেখেছি। পুরোটা সময় আমরা দাপট দেখিয়েছি, কিন্তু যেটা হলো, কী আর করা।’
চতুর্থ দিন শেষে ইংল্যান্ড এগিয়েছিল ৬১ রানে। এর মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার শেষ ৫ উইকেট তুলে ফেলতে পারলে হতো ইনিংস ব্যবধানে জয়। আর সেটা না হলেও চতুর্থ ইনিংসে ম্যাচ জেতার সুযোগ তো ছিলই। সেটাই ম্যাচ শেষে বলছিলেন স্টোকস, ‘অস্ট্রেলিয়াকে অলআউট করে দিয়ে ভালো রান সংগ্রহ করা, ম্যাচে আমরা কোনো ভুল করেছি বলা যায় না। কিন্তু এরপরও ড্র মানাটা কঠিন। কারণ, আমরাই এগিয়ে ছিলাম।’
স্টোকসের যেখানে হতাশা, সেখানেই স্বস্তির উপাদান অস্ট্রেলিয়ার। বিশেষ করে, এই মৌসুমে হার এড়ানোর সুবাদে অ্যাশেজ ধরে রাখার দিক থেকে। তবে অর্জনটা নিজেদের নৈপূণ্যের বদলে আবহাওয়ার বদান্যতায় এসেছে বলে খুব একটা উচ্ছ্বসিতও হতে পারছে না অস্ট্রেলিয়া। ম্যাচ শেষে বিবিসিকে সেটাই বলেছেন অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক কামিন্স, ‘অ্যাশেজ ধরে রাখাটা দারুণ ব্যাপার, তবে এভাবে আমরা অবশ্যই চাইনি। একটু কেমন যেন লাগছে। তবে বৃষ্টির সহায়তার পরও ফলটা দারুণই বলতে হবে।’
এবারের অ্যাশেজের শেষ ম্যাচ শুরু হবে ২৭ জুলাই ওভালে।