ইংল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক মাইকেল ভনকে বর্ণবাদের বিপক্ষে ইংলিশ ক্রিকেটের লড়াইয়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন মঈন আলী। এ ক্ষেত্রে ভনদের মতো মানুষের আরেকটু ‘স্মার্ট’ হওয়ার প্রয়োজন আছে বলেও মনে করেন এ অলরাউন্ডার।
যুক্তরাজ্যের চ্যানেল ফোরে প্রচার হতে যাওয়া নতুন তথ্যচিত্র ‘ইজ ক্রিকেট রেসিস্ট?’ (ক্রিকেট কি বর্ণবাদী)–এ কথা বলেছেন মঈন। সেখানে ২০১৭ সালে ভনের টুইট প্রসঙ্গে মঈনকে প্রশ্ন করেন উপস্থাপক আদিল রে। সে টুইটে টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব পিয়ার্স মরগানের ডেইলি মেইলে লেখা একটি কলাম শেয়ার করেছিলেন ভন। সে কলামে মরগানের ভাষ্য ছিল, নিজেদের মধ্যে থাকা চরমপন্থীদের উৎপাটন মুসলিম সম্প্রদায়কেই করতে হবে।
সে সময় রে তাঁর একটি টুইটে ভনকে জিজ্ঞাসা করেন, তবে কি মঈন আলী টেস্ট খেলার ফাঁকে ফাঁকে গিয়ে মুসলিমদের জিজ্ঞাসা করবেন তাঁদের ভেতর কোনো সন্ত্রাসী আছে কি না? জবাবে ‘হ্যাঁ’ বলে ভন মন্তব্য করেছিলেন, ‘যদি এর মাধ্যমে আমাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ ও পরিবেশ আরেকটু নিরাপদ হয়।’
ভনের এই টুইটের জবাবে এত দিন পর মুখ খুললেন মঈন। তিনি বলেন, ‘এটা আসলে ছেলেমানুষি ছিল। বোকামো আসলে। তাঁর মতো মানুষের এগিয়ে আসা দরকার এখন। সেটি শুধু মুসলিমদের জন্য নয়, যেকোনো বিশ্বাসের মানুষদের জন্যই। (তাঁদের) আরেকটু স্মার্টও হতে হবে। আমার ধারণা, তিনি এখন বুঝেছেন যে সময় বদলাচ্ছে। এখন তাঁকে বদলাতে হবে।’
ভন অবশ্য তাঁর পূর্বের টুইটের জন্য ক্ষমা চেয়েছেন। গত মার্চে ক্রিকেট ডিসিপ্লিন কমিশনের বর্ণবাদবিষয়ক শুনানিতে হাজির হয়েছিলেন ইংল্যান্ডের ২০০৫ সালের অ্যাশেজজয়ী অধিনায়ক। ২০০৯ সালে ইয়র্কশায়ারের একটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচে আজিম রফিক ও দক্ষিণ আফ্রিকান বংশোদ্ভূত অন্য তিনজনের উদ্দেশে বর্ণবাদমূলক মন্তব্য করেছিলেন ভন, এমন অভিযোগও উঠেছিল। যদিও সেসব অভিযোগ থেকে ভনকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
অবশ্য মঈনকে নিয়ে করা ভনের ওই টুইটও তাঁর বিপক্ষে গঠিত অভিযোগে প্রভাব রেখেছিল। ইসিবির প্রধান প্রসিকিউটর জেন মুলকাহি কেসি বলেছিলেন, ভনের টুইটগুলোর সুর এবং ওই খেলোয়াড়দের প্রতি ইঙ্গিত করে করা ভনের কথিত মন্তব্যের সুর কাছাকাছি ছিল। ভন শেষ পর্যন্ত কোনো শাস্তি না পেলেও ইয়র্কশায়ার ক্রিকেট ক্লাবসহ এর ছয় খেলোয়াড় ও সাপোর্ট স্টাফকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়।
এরপর ‘ইকুইটি ইন ক্রিকেট’ (ক্রিকেটে সাম্য) নামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে স্বতন্ত্র একটি কমিশন। ক্রিকেটসংশ্লিষ্ট প্রায় চার হাজার ব্যক্তির সাক্ষ্যের ভিত্তিতে গঠিত সেই প্রতিবেদনের একটি অংশে পেশাদার ক্রিকেটে দক্ষিণ এশীয় খেলোয়াড়ের কম প্রতিনিধিত্ব করার ব্যাপারটিও উঠে আসে।
এ প্রসঙ্গে মঈন তথ্যচিত্রটিতে বলেছেন, ‘অন্য যে কারও চেয়ে ভালো, এমন ব্রিটিশ এশিয়ান খেলোয়াড় আছে। তবে লোকে তাদের দলে নেবে না কোনো এক কারণে। বেশিরভাগ সময়ই দক্ষিণ এশীয় খেলোয়াড়দের অসাধারণ কিছু করতে হয়। বিশেষ করে ট্রায়ালে। একজন শ্বেতাঙ্গ ক্রিকেটার অসাধারণ না হলেও তাকে নেওয়া হবে।’
মঈন বলেছেন, রফিকের অভিযোগ এবং এর পরবর্তী সময়ে যা ঘটেছে, সেটিই ক্রিকেটের খোলনলচে বদলে দেওয়ার প্রয়োজনীয়তার অংশ। এর পর থেকে লোকে এখন কথা বলছে, এটিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখেন মঈন। তাঁর মতে, এসব ব্যাপারে আগে কথা বলতে সবাই ভয় পেতেন।