কাল ম্যাচে উত্তেজনার শুরু এখান থেকেই। আসিফ আলীর সঙ্গে বেধে যায় ফরিদ আহমেদের
কাল ম্যাচে উত্তেজনার শুরু এখান থেকেই। আসিফ আলীর সঙ্গে বেধে যায় ফরিদ আহমেদের

আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে আইসিসির কাছে প্রতিবাদলিপি দেবে পিসিবি

ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের চিরায়ত উত্তাপ এবারের এশিয়া কাপে অনেকটা অনুপস্থিত ছিল। মাঠের খেলায় উত্তেজনা দেখা গেলেও খেলোয়াড় ও সমর্থকদের মধ্যে বেশ সৌহার্দ্যই দেখা গেছে। তবে ভারত-পাকিস্তানের হারিয়ে যাওয়া সেই রোমাঞ্চ এখন দেখা যাচ্ছে আফগানিস্তান-পাকিস্তান ম্যাচে। গতকাল পাকিস্তানের কাছে আফগানদের ১ উইকেটে হারা ম্যাচে সব উত্তেজনা যেন মাত্রা ছাড়িয়েছে। যার রেশ ধরে এবার আফগানদের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ জানাবে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি)। মূলত গ্যালারিতে আফগান সমর্থকদের উৎপাত ও ভাঙচুরের ঘটনায় তৈরি হওয়া আতঙ্কজনক পরিস্থিতির কারণে এ অভিযোগ জানাবে পিসিবি।

ব্যাট হাতে দুই ছক্কায় ম্যাচ জিতিয়েছেন নাসিম শাহ

গতকাল রুদ্ধশ্বাস ম্যাচ শেষে গ্যালারিতে উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে পাকিস্তান-আফগানিস্তানের সমর্থকদের মধ্যে। এ ঘটনার পর বেশ কিছু ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। একটি ভিডিওতে আফগান সমর্থকদের চেয়ার দিয়ে পাকিস্তান সমর্থকদের মারতে দেখা যায়। ঘটনার ভয়াবহতা তুলে ধরে সংবাদমাধ্যমকে রমিজ বলেছেন, ‘আপনি সন্ত্রাসী কার্যকলাপকে ক্রিকেটের সঙ্গে যুক্ত করতে পারেন না। আর এ ধরনের পরিবেশ আপনাকে অসুস্থ করে তুলবে। আমরা আইসিসিকে লিখিতভাবে জানাব, নিজেদের উদ্বেগের কথা তুলে ধরব। যা করা সম্ভব করব। কারণ, দৃশ্যগুলো ছিল বীভৎস।’

আফগানিস্তানের সমর্থকদের এমন কাণ্ড এটিই প্রথম নয় উল্লেখ করে রমিজ বলেন, ‘এমন কিছু এবারই প্রথম ঘটেনি। হার ও জিত খেলারই অংশ। এটা তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ লড়াই ছিল। কিন্তু আবেগ নিয়ন্ত্রণে রাখা উচিত ছিল। পরিবেশ ভালো না থাকলে ক্রিকেট খেলুড়ে দেশ হিসেবে আপনি কখনো সামনে এগোতে পারবেন না। আর এ কারণে আমরা নিজেদের যন্ত্রণা ও হতাশার কথা আইসিসিকে জানাব। ভক্তদের কাছে আমাদের দায় আছে, যেকোনো কিছু হতে পারত। আমাদের দল বিপদে পড়তে পারত। প্রটোকল যা–ই হোক, আমরা তা মেনেই অভিযোগ জানাব।’

পিসিবির চেয়ারম্যান রমিজ রাজা

রমিজ নিজেও আইসিসির ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য। যে কমিটি গত বছর তালেবানদের দখলের পর দেশটিতে ক্রিকেটের অবস্থা ও কীভাবে তা চালিত হচ্ছে, সেটি পর্যালোচনা করেছিল। এদিকে গতকাল ম্যাচের পর আক্রমণাত্মক আচরণের দায়ে বেশ কয়েকজন আফগান সমর্থককে আটক করেছে শারজা পুলিশ। যদিও কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।
ধারণা করা হচ্ছে, আউট হওয়ার পর পাকিস্তান ব্যাটসম্যান আসিফ আলী ও আফগান বোলার ফরিদ আহমেদের মধ্যকার বাগ্‌বিতণ্ডা থেকে এ উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে।

আসিফকে ফিরিয়ে তাঁর কাছাকাছি গিয়ে উদ্‌যাপনের ভঙ্গিতে হাওয়ায় ঘুষি ছোড়েন ফরিদ

আসিফকে ফিরিয়ে তাঁর কাছাকাছি গিয়ে উদ্‌যাপনের ভঙ্গিতে হাওয়ায় ঘুষি ছোড়েন ফরিদ। জবাবে আসিফ ফরিদকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে তাঁর মুখের সামনে ব্যাট উঁচিয়ে ধরেন। সতীর্থদের হস্তক্ষেপে লড়াই থামার আগপর্যন্ত দুই ক্রিকেটার কথার লড়াইয়েও মেতে ওঠেন। যার রেশে সমর্থকেরাও নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। এ সময় গ্যালারির চেয়ারও ভেঙে ফেলেন অনেকে। কর্তৃপক্ষ ও পুলিশের তৎপরতা শুরু হওয়ার আগেই গ্যালারির বেশ ক্ষতিও হয়ে যায়।

এ ঘটনার পর আজ দুটি আলাদা টুইট বার্তায় আফগান ক্রিকেট বোর্ড ক্রিকেটসংশ্লিষ্ট দেশগুলোর মধ্যে ভালোবাসা ছড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানায়। বোর্ডের পক্ষে লেখা হয়,‘ক্রিকেটকে দেশগুলোর মধ্যে সৌহার্দ্য ও গভীর সম্পর্কের একটি ক্রীড়নক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। চলুন ক্রিকেট পরিবারকে কাছাকাছি আনতে একসঙ্গে কাজ করি। ক্রিকেট আমাদের মাঠে নেতিবাচক আবেগ দেখানোর এবং বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে সহিংসতায় রূপান্তরিত করার অনুমতি দেয় না।’

অন্যদিকে আরেক টুইট বার্তায় আফগান ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান নির্বাহী শফিক স্তানিকজাই আসিফ আলীকে নিষিদ্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, ‘আসিফ আহাম্মকির চূড়ান্ত করেছে এবং তাকে টুর্নামেন্টের বাকি ম্যাচে নিষিদ্ধ করা উচিত। যেকোনো বোলারের উদ্‌যাপন করার অধিকার আছে, তবে শারীরিকভাবে আগ্রাসী হওয়া মেনে নেওয়া যায় না।’

এর জবাব দিয়ে পাকিস্তানের সাবেক ফাস্ট বোলার শোয়েব আখতার আফগানদের ‘বেয়াদব’ বলে মন্তব্য করেছেন। বলেছেন, ‘আমরা তোমাদের ভাই বলে মনে করি। প্রতিবেশী দেশ, তোমাদের আমরা ভালোবাসি, খেয়াল রাখি। আর সেই তোমরা এমন বেয়াদবি করছ? এটা মানা যায় না।’

এদিক ব্রিসবেনে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রস্তুতি ম্যাচে আগামী ১৯ অক্টোবর মুখোমুখি হবে আফগানিস্তান ও পাকিস্তান। টুর্নামেন্টের মূল পর্বে অবশ্য দুই দল আলাদা আলাদা গ্রুপে খেলবে। আফগানিস্তান ও পাকিস্তান সমর্থকদের মধ্যকার এমন উত্তপ্ত পরিস্থিতির ঘটনা এবারই প্রথম নয়। গত বছর দুবাইয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও দুই দলের টিকিটবিহীন সমর্থকেরা জোরপূর্বক মাঠে ঢোকার চেষ্টায় হট্টগোলের সৃষ্টি করেন।

এর আগে ২০১৯ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপেও একই ধরনের পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। সমর্থকদের বিবদমান সম্পর্কের মধ্যেও দুই দেশের ক্রিকেটারদের সম্পর্ক অবশ্য আন্তরিক। আফগান ক্রিকেটাররা পাকিস্তান সুপার লিগে নিয়মিত খেলে থাকেন। পাকিস্তান কিংবদন্তি ইনজামাম-উল-হক এবং রশিদ লতিফ তো দেশটির কোচ হিসেবেও কাজ করেছিলেন। আর পাকিস্তানের সাবেক ফাস্ট বোলার উমর গুল এখন আফগানদের বোলিং কোচের দায়িত্বে আছেন।