আরও একটি ইনিংস, আরও একবার ব্যর্থ বাংলাদেশের টপ অর্ডার। দ্বিতীয় সারির ভারতের বিপক্ষেও আজ আগে ব্যাট করতে নেমে ৫৯ রানে ৪ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। সেখান থেকে সাকিব আল হাসান (৮০) ও তাওহিদ হৃদয়ের (৫৪) জোড়া ফিফটি দলের রানটাকে দুই শ’র কাছাকাছি নিয়ে যায়। ভারতের সঙ্গে লড়াইয়ের মতো স্কোর এসেছে আসলে লোয়ার অর্ডারের সৌজন্যে। নাসুম আহমেদ (৪৪), শেখ মেহেদী হাসান (২৯) ও অভিষিক্ত তানজিম হাসানের (১৪) ব্যাটে ভর করে শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ তুলেছে ৮ উইকেটে ২৬৫ রান। ভারতের হয়ে সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নিয়েছেন শার্দূল ঠাকুর।
আজকের ম্যাচটায় দুই দলেই কিছু পরিবর্তন প্রত্যাশিতই ছিল। খেলাটা এশিয়া কাপের ফাইনালিস্ট ভারতের বিপক্ষে হলেও এ ম্যাচ থেকে বাংলাদেশের পাওয়ার কিছু নেই বললেই চলে। টুর্নামেন্ট থেকে যে আগেই ছিটকে গেছে সাকিবের দল। তাই শেষ ম্যাচটায় দল নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার অপ্রত্যাশিত সুযোগ পেয়েছে টিম ম্যানেজমেন্ট। মূল পেসার তাসকিন আহমেদ, হাসান মাহমুদ ও শরীফুল ইসলামকে বিশ্রাম দিয়ে দলে ফিরিয়ে আনা হয় মোস্তাফিজুর রহমানকে।
দ্বিতীয় পেসার হিসেবে অভিষেক হয় তানজিম হাসানের। ৯ মাস পর দলে ফেরেন এনামুল হকও। শেখ মেহেদী হাসান ও ওপেনার তানজিদ হাসান আজকের ম্যাচটা খেলছেন। ওদিকে পাঁচটি পরিবর্তন এনে একাদশ নামিয়েছে রোহিত শর্মার দলও। অভিষেক হয়েছে তিলক বর্মার।
এত পরিবর্তনের ম্যাচে বদলায়নি শুধু বাংলাদেশের টপ অর্ডারের ব্যর্থতা। মোহাম্মদ নাঈমের জায়গায় আজ তানজিদকে নিয়ে উদ্বোধনে নামেন লিটন দাস। ইনিংসের প্রথম বলেই মোহাম্মদ শামির করা প্যাডের ওপরের বলে ফ্লিক করে বাউন্ডারি মারেন তানজিদ। দ্বিতীয় ওভারেই শার্দূলের বলে কাভার ড্রাইভ আরও দুটি বাউন্ডারি মেরে তানজিদ ভালো শুরুরই আভাস দিয়েছিলেন। কিন্তু উদ্বোধনী জুটিটা জমতে দেননি শামি। তৃতীয় ওভারের প্রথম বলেই ভালো লেংথ থেকে ভেতরে আসা বলে লিটনকে বোল্ড করেন এই ডানহাতি পেসার। ২ বল খেলে কোনো রান না করেই আউট হন লিটন।
পরের ওভারে যে শার্দূলকে স্বাচ্ছন্দ্যে খেলছিলেন, তাঁকেই উইকেট দিয়েছেন তানজিদ। কম গতির একটি বলে পুল শট খেলতে গিয়ে বল টেনে আনেন স্টাম্পে। ১২ বলে ১৩ রানে থামে তানজিদের ইনিংস। বিপদের তখন শুরু মাত্র। ইনিংসের ষষ্ঠ ওভারে আবারও উইকেট হারায় বাংলাদেশ। ভারতের বিপক্ষে গত ডিসেম্বরে সর্বশেষ জাতীয় দলের হয়ে খেলা এনামুল তিনে নেমে ১১ বল খেলে ৪ রান করে আউট হন পুল শট খেলতে গিয়ে। ২৮ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়া বাংলাদেশ ইনিংসের হাল ধরতে পাঁচ নম্বরে পাঠানো হয় মেহেদী হাসান মিরাজকে।
কিন্তু ইনিংসের শুরু থেকেই মিরাজের ব্যাটে বলে হচ্ছিল না। শার্দূলের করা পাওয়ার প্লে’র শেষ ওভারে ব্যক্তিগত ৩ ও ৫ রানে দুইবার মিরাজের ক্যাচ ছাড়েন ভারতীয় ফিল্ডাররা। শর্ট মিড উইকেটে তিলক সহজ ক্যাচ ছাড়ার পর স্লিপে সূর্যকুমার যাদবও ক্যাচ লুফে নিতে পারেননি। তবে মিরাজ সে সুযোগটা কাজে লাগাতে পারেননি। ১৪তম ওভারে অক্ষর প্যাটেলের বলে স্লিপে ক্যাচ তোলেন মিরাজ। এবার রোহিতের দুর্দান্ত ক্যাচে থামে মিরাজের ২৮ বলে ১৩ রানের দৃষ্টিকটু ইনিংস।
মাত্র ৫৯ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশের ইনিংস যখন অন্ধকারে, তখন সুড়ঙ্গের শেষে আলো হয়ে আসে সাকিব-হৃদয় জুটি। দুজন মিলে বাজে বলে বাউন্ডারি বের করেছেন, ভালো বলে ছিলেন সতর্ক। সাকিব ৬৭ বল খেলে ফিফটি করে যেভাবে এগোচ্ছিলেন, তাতে মনে হচ্ছিল ওয়ানডে ক্রিকেটের দশম সেঞ্চুরিটা বোধ হয় আজই হয়ে যাবে।
কিন্তু শার্দূলের স্লোয়ার বল স্টাম্পে টেনে এনে বোল্ড হন সাকিব। ৬টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৮৫ বলে ৮০ রানের ইনিংস খেলেন বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক। ফিফটি করেছেন হৃদয়ও। তাঁর ৮১ বলে ৫৪ রান বাংলাদেশের রানটাকে দুই শ’র কাছাকাছি পৌঁছে দেয়। ৫টি চার ও ২টি ছক্কায় সাজানো ইনিংসটির ইতি ঘটে অসময়ে। ৪২তম ওভারে শামির বলে পুল শট খেলে স্কয়ার লেগ বাউন্ডারিতে ক্যাচ আউট হন তিনি।
বাংলাদেশ ইনিংসের বাকি পথটা পাড়ি দেয় নাসুম আহমেদের ব্যাটে চড়ে। ওয়ানডে ক্রিকেটে তো বটেই, লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটেও ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস খেলে বাংলাদেশের রানটাকে আড়াই শ’র কাছাকাছি নিয়ে যান এই বাঁহাতি স্পিনার। ৪৮তম ওভারে প্রসিধ কৃঞ্চার বলে বোল্ড হওয়ার আগে ৪৫ বল খেলে ৬টি চার ও ১টি ছক্কায় ৪৪ রান করেন নাসুম। লড়াই করেছেন মেহেদী ও তানজিমও। দুজনের মিলে যোগ করেন ১৬ বলে আরও ২৭ রান।