বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে (ডব্লিউটিসি) অন্তত তিন ম্যাচের সিরিজ চায় ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া (সিএ)। এটি অনুমোদনের চেষ্টা করবেন বলেও জানিয়েছেন সিএর প্রধান নির্বাহী নিক হকলি।
টি–টোয়েন্টির ক্রমবর্ধমান প্রসারের কারণে টেস্ট ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনেক দিন ধরেই প্রশ্ন উঠছে, যা আরও বড় হয়ে উঠেছে সম্প্রতি ঘরোয়া টি–টোয়েন্টি লিগে তারকা খেলোয়াড়দের খেলাতে নিউজিল্যান্ড সফরে টেস্ট সিরিজের জন্য দক্ষিণ আফ্রিকা প্রায় নতুন এক দল নির্বাচন করায়। এমন এক দল, যেটির অধিনায়কেরই এখনো আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয়নি। এটাকেই ‘জেগে ওঠার সংকেত’ মনে হচ্ছে হকলির কাছে। টেস্ট ক্রিকেট যে দুই রকম অর্থনীতিতে (টু স্পিড ইকোনমি) চলছে, সেটা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ পেয়েছে তাঁর কথায়।
দুই রকম অর্থনীতি বলতে অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড ও ভারত আর্থিকভাবে শক্তিশালী হওয়ায় যেমন নিশ্চিন্তে টেস্ট ক্রিকেট খেলতে পারছে, অন্য দেশগুলো তা পারছে না। এই সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেওয়ার কথাও আছে হকলির বক্তব্যে।
বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে বর্তমানে কমপক্ষে দুই ম্যাচের সিরিজ হয়। ভারত যেমন দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে এখন দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলছে। ১৭ জানুয়ারি থেকে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলবে ওয়েস্ট ইন্ডিজও। পাকিস্তান এই মুহূর্তে অস্ট্রেলিয়া সফর করছে, সেখানে টেস্ট সিরিজটা তিন ম্যাচের। অস্ট্রেলিয়া, ভারত ও ইংল্যান্ডের বাইরে অন্য দলগুলো সর্বশেষ তিন ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলেছে ২০১৮-১৯ মৌসুমে। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে গিয়ে তিন ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলেছিল পাকিস্তান।
অস্ট্রেলিয়ার রেডিও স্টেশন এসইএনকে হকলি বলেছেন, ‘অন্তত তিন ম্যাচের টেস্ট সিরিজকে অগ্রাধিকার দিতে চাই। আমরা এটার পক্ষে যুক্তি ও সমর্থন দেব। আমার মনে হয়, ভবিষ্যৎ সফরসূচি নিয়ে কাজ করার প্রয়োজন আছে। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ভিত শক্ত করতে অন্তত তিন ম্যাচের টেস্ট সিরিজের পক্ষেই যুক্তি উপস্থাপন করতে হবে।’ হকলি এরপর ব্যাখ্যা করেন, ‘এরপর আমরা যেটা করতে পারি, ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি প্রতিযোগিতা যেসব দেশের আয়ের গুরুত্বপূর্ণ উৎস, তাদের টুর্নামেন্টগুলো যেন অন্য সিরিজের সঙ্গে সাংঘর্ষিক না হয়। তাহলে সব দেশই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে গুরুত্ব দেবে, বিশেষ করে টেস্ট ক্রিকেটকে।’
দক্ষিণ আফ্রিকার ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি ফ্র্যাঞ্চাইজি এসএ২০ লিগের ধাক্কা অস্ট্রেলিয়ার গায়েও লেগেছে। গত বছর এই টুর্নামেন্টের জন্য অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ বাতিল করেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। কিন্তু গত ৩০ ডিসেম্বর নিউজিল্যান্ড সফরে (দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ) দক্ষিণ আফ্রিকার দ্বিতীয় সারির দল ঘোষণা বিতর্কটা নতুন করে উসকে দেয়। ভারতের বিপক্ষে চলতি সিরিজ থেকে মাত্র তিনজনকে রেখে এই স্কোয়াড ঘোষণা করা হয়। ১৪ জনের এই স্কোয়াডে ৭ জনই টেস্ট অভিষেকের অপেক্ষায়। দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট (সিএসএ) অবশ্য আত্মপক্ষ সমর্থন করে বলেছে, তারা এখনো টেস্ট ক্রিকেটকেই অগ্রাধিকার দিচ্ছে।
সিএসএর বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, ‘২০২২ সালে যখন ২০২৩-২৭ চক্রের এফটিপি চূড়ান্ত হলো, তখনই এই সিরিজের সময় ঠিক করা হয়। ওই সময়ে এসএ ২০ টুর্নামেন্ট দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেট সূচিতে ছিল না। যখন এটা প্রতীয়মান হলো যে নিউজিল্যান্ড সফর ও এসএ ২০-এর সূচি সাংঘর্ষিক হচ্ছে, আমরা নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটের (এনজেডসি) সঙ্গে মিলে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজটা অন্য কোনো সময়ে সরিয়ে নেওয়ার। কিন্তু বৈশ্বিক ক্রিকেটের ব্যস্ত সূচি আমাদের সেই চেষ্টাকে অসম্ভব করে তোলে। আর যেহেতু বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের জন্য ২০২৫ সালের এপ্রিলের আগেই সিরিজটি খেলার বাধ্যবাধকতা ছিল আমাদের, তাই কিছু করার ছিল না। তবে এরপর আর এফটিপিতে থাকা আমাদের দ্বিপক্ষীয় সিরিজগুলোর সঙ্গে এসএ ২০ টুর্নামেন্টের সূচি সাংঘর্ষিক হবে না।’
সিএর প্রধান নির্বাহী হকলি বলেছেন, ‘এটা সবার জন্যই জেগে ওঠার ডাক। টি-টোয়েন্টি বাচ্চাদের ক্রিকেটে নিয়ে আসছে, নিয়ে আসছে নতুন দর্শকও, যা ছোট করে দেখার সুযোগ নেই। তবে দুটিই (সংস্করণ—টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি) পাশাপাশি থাকতে পারে। কিন্তু সূচিটা (নিউজিল্যান্ড-দক্ষিণ আফ্রিকা) ভালো হয়নি।’ হকলি এরপর অস্ট্রেলিয়ার উদাহরণ টেনে বলেন, ‘অস্ট্রেলিয়ায় আমরা সব সময় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বেশি গুরুত্ব দিই। তবে এই (দক্ষিণ আফ্রিকার দ্বিতীয় সারির দল) ব্যাপারটি নতুন একটা দিকে আমাদের নজর ফিরিয়েছে। আমরা অবশ্যই আইসিসি এবং সূচিসংশ্লিষ্টদের নিয়ে এটা নিশ্চিত করার চেষ্টা করব যে এমন সাংঘর্ষিক সূচি যেন না হয় এবং লোকে যেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকেই গুরুত্ব দেয়।’
অস্ট্রেলিয়া, ভারত ও ইংল্যান্ডের বাইরে অন্যান্য দেশগুলো টেস্ট ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ সুনিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করবে বলেও আশাবাদ জানিয়েছেন হকলি। তবে এই সংস্করণের আর্থিক ব্যাপারগুলোই মূল চ্যালেঞ্জ বলে স্বীকার করলেন সিএ নির্বাহী, ‘চ্যালেঞ্জটা হলো অর্থনীতি। বিশ্বে এমন কিছু জায়গা আছে, যেখানে টি-টোয়েন্টি, ওয়ানডে ও টেস্ট থেকে সমান রাজস্ব আয় হয়। তবে টেস্ট ম্যাচের খরচ তাৎপর্যপূর্ণভাবে বেশি।’
হকলি এরপর যোগ করেন, ‘কয়েক বছর ধরে আমরা অস্ট্রেলিয়া এবং ইংল্যান্ডে যেটা দেখেছি, টেস্ট ক্রিকেট সত্যিই কিছু দেশে সমৃদ্ধ হয়ে উঠছে। এই দিকটা বিচারে ব্যাপারটা আসলে “টু স্পিড ইকোনমি” (দুই রকম গতিসম্পন্ন অর্থনীতি)। আমাদের চ্যালেঞ্জ হলো, যেসব দেশ টেস্ট ক্রিকেট নিয়ে ভুগছে, তাদের সমর্থন দেওয়া।’