অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি হওয়ার আগে গতকাল অ্যান্টিগায় শেষ প্রস্তুতিতে বাংলাদেশ দল
অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি হওয়ার আগে গতকাল অ্যান্টিগায় শেষ প্রস্তুতিতে বাংলাদেশ দল

উৎপল শুভ্রর লেখা

সুপার এইটে এবার কি অন্য কিছু হবে

প্রথম লক্ষ্য ছিল সুপার এইট। সেটি হয়ে গেছে। এবার?

সুপার এইটের পর আর কী লক্ষ্য থাকতে পারে? লক্ষ্য থাকতে পারে একটাই—সেমিফাইনাল!

এমন নয় যে বাংলাদেশের অধিনায়ক সুপার এইটে ওঠার পর সেই স্বপ্নের কথা বলছেন। সেই স্বপ্ন চোখে নিয়েই এসেছেন বিশ্বকাপে। তার প্রমাণও আছে। দেশ ছাড়ার আগে বিশ্বকাপের চার সেমিফাইনালিস্টের নাম বলতে গিয়ে তিনটির বেশি বলেননি। বলেছিলেন একটা জায়গা ফাঁকা রাখতে।

নিউইয়র্কে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হেরে যাওয়ার পর তাওহিদ হৃদয় কী বলেছিলেন, মনে আছে তো? বাংলাদেশের সুপার এইট তখনো অনেক দূরের পথ। দুই ম্যাচে একটি জয়, একটি হার। সেই সময়েও তাওহিদ হৃদয় সাংবাদিকের চোখে চোখ রেখে বলে দিয়েছিলেন, শুধু সুপার এইট নয়, বাংলাদেশ সেমিফাইনাল-ফাইনালে খেলার মতো দল।

নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে জয়ের পর সংবাদ সম্মেলন শেষ করে ফিরছেন নাজমুল হোসেন। সেমিফাইনালের একটা জায়গা ফাঁকা রাখতে বলার প্রসঙ্গটা তুলতেই হাসি দিয়ে বললেন, ‘দেখেন না কী হয়! হয়েও যেতে পারে।’

তা তো পারেই। তিন ম্যাচ জিতে এরই মধ্যে এটি বাংলাদেশের সেরা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। স্বপ্ন কেন তাহলে ডানা মেলে উড়বে না?

তা উড়ুক। চোখে স্বপ্ন থাকুক, তবে মাথায় বাস্তবতাও। সুপার এইটের তিন প্রতিপক্ষের মধ্যে আফগানিস্তানের সঙ্গে ১০টি ম্যাচ খেললে বাংলাদেশ হয়তো ৬টি জিতবে, ৪টি হারবে। আবার উল্টোটাও হতে পারে। দুই দলের সাম্প্রতিক ইতিহাস এমনই বলে। কিন্তু সুপার এইটে বাংলাদেশের গ্রুপে বাকি দুই দল?

সেমিফাইনালে ওঠার স্বপ্ন দেখেন অধিনায়ক নাজমুল। গতকাল অ্যান্টিগায় দলের অনুশীলনে কোচের সঙ্গে

সেমিফাইনাল-স্বপ্ন তো সেখানেই বাঁধা। অস্ট্রেলিয়া বা ভারত—কোনো একটা ম্যাচ জিততেই হবে। সুপার এইটে বাংলাদেশের প্রথম দুই ম্যাচই আবার এদের সঙ্গে। দুটিতেই হেরে গেলে অ্যান্টিগাতেই বাংলাদেশের বিশ্বকাপ কার্যত শেষ। সেন্ট ভিনসেন্টে আফগানিস্তানের সঙ্গে তখন খেলার জন্যই খেলা।

ভারতের চেয়েও কি অস্ট্রেলিয়া কঠিন? ভারতও চার ম্যাচে জিতে সুপার এইটে উঠেছে। তবে পাকিস্তানের বিপক্ষে ওই ম্যাচ তাদের জেতার কথা ছিল না। যেখানে অস্ট্রেলিয়া হেসেখেলে উঠে গেছে সুপার এইটে। ওঠার পথে ইংল্যান্ডকে নিয়েও একটু খেলেছে। স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে একটু হিসাব-নিকাশ করে খেললেই চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে বিদায় করে দেওয়া যায়। জশ হ্যাজলউডের এই কথাটাই এখন পর্যন্ত এই বিশ্বকাপের সবচেয়ে আলোচিত উক্তি। আইসিসিকে পর্যন্ত যা নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে হয়েছে।

হ্যাজলউড যে মজা করেই কথাটা বলেছিলেন, এটা বিশ্বাস করাতে অস্ট্রেলিয়ার সেকি চেষ্টা! যা না করলেও হতো। স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচই তো যথেষ্ট ছিল এ জন্য। অস্ট্রেলিয়া কেন অস্ট্রেলিয়া—এটাও সবচেয়ে ভালো বোঝা গেছে ওই ম্যাচেই।

সুপার এইটে অস্ট্রেলিয়াই বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে কঠিন প্রতিপক্ষ। অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যানদের কি সামলাতে পারবেন মোস্তাফিজ? গতকাল অ্যান্টিগায় অনুশীলনে

বাংলাদেশের সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষাটা কি তাহলে আজই? আজ না কাল—এই প্রশ্ন করছেন তো! আবার সেই ব্যাখ্যা দিতে হয়। এই বিশ্বকাপ যেখানে হচ্ছে, বাংলাদেশ ভূগোলকের ঠিক উল্টো পাশে। অ্যান্টিগায় আজ রাত সাড়ে ৮টায় শুরু ম্যাচ তাই বাংলাদেশে শুরু হবে আগামীকাল শুক্রবার সকাল সাড়ে ৬টায়।

আফগানিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের ১০ ম্যাচের কল্পিত যে হিসাব দেওয়া হয়েছে, সেটির ভিত্তি দুই দলের মুখোমুখি লড়াইয়ের ইতিহাস। অস্ট্রেলিয়ার ক্ষেত্রে তাহলে কেন অন্য বিবেচনা? রেকর্ড তো বলছে, টেস্ট আর ওয়ানডেতে লড়াইটা যতই একতরফা হোক, টি-টোয়েন্টিতে দুই দলের ইতিহাস তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতার। ১০ ম্যাচের ৬টিতে জিতেছে অস্ট্রেলিয়া, ৪টিতে বাংলাদেশ। কী আশ্চর্য, এটা তো আফগানিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশ ১০ ম্যাচ খেললে কী হতে পারে, সেই কল্পিত স্কোরলাইনের সঙ্গে মিলে যাচ্ছে!

রেকর্ডটাতে যে একটু ফাঁকি আছে, তা মনে হয় আপনিও জানেন। অস্ট্রেলিয়াকে বাংলাদেশ চারটি টি-টোয়েন্টি হারিয়েছে বটে, তবে সেই ম্যাচগুলো হয়েছিল ধানখেতসম মিরপুরের উইকেটে। ২০২১ সালের ওই সিরিজের অস্ট্রেলিয়া দলটাও খুব একটা সুবিধার ছিল না। এই বিশ্বকাপে সেন্ট ভিনসেন্ট মিরপুরের ওই উইকেটের কথা মনে করিয়ে দিয়েছে। তবে অ্যান্টিগার উইকেট মোটেই ও রকম নয়। এখানে রান হবে।

সুপার এইটে ব্যাটসম্যানদের রানে ফেরার বিকল্প নেই। টপ অর্ডারে রানের খোঁজে থাকা লিটন কি ফিরবেন

বিশ্বকাপ যে এরই মধ্যে রং বদলাতে শুরু করেছে, তা খেয়াল করেছেন নিশ্চয়ই। বোলারদের দাপট শেষ হয়ে ব্যাটসম্যানদের সময় মনে হয় এসেই গেছে। সুপার এইটে খেলাটা তাই অন্য রকম হবে বলেই ধরে নেওয়া যায়। বাংলাদেশ যেখানে উঠেছে মূলত বোলারদের কৃতিত্বে। তাঁদের জন্যও খেলাটা হয়তো এখানে একটু বদলাবে।

ব্যাটসম্যানদের জন্যও কি? বাংলাদেশের প্রথম তিনের মধ্যে তানজিদ আর লিটনের বলার মতো একটি করে ইনিংসই আছে। নাজমুলের একটাও নেই। অ্যান্টিগার উইকেট কি তাঁদের ভাগ্যবদলে সহায় হয়ে আসবে! বৃষ্টিকেও অবশ্য বিবেচনায় রাখতে হয়। অ্যান্টিগায় যেভাবে বৃষ্টি হচ্ছে, সেই প্রভাব উইকেটেও পড়তে পারে। ম্যাচের দৈর্ঘ্যে তো বটেই।

দীর্ঘ সময় রানখরায় ভোগা নাজমুলকেও ব্যাট হাতে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে হবে সুপার এইটে

বিশ্বকাপ, সুপার এইট, ওয়েস্ট ইন্ডিজ—এই তিনটি শব্দ বললে ভবিষ্যতে হয়তো এই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের কথাই বেশি মনে হবে আপনার। তবে এই শব্দ তিনটি এর আগেও একবার মিলে গিয়েছিল বাংলাদেশের ক্রিকেটে। এই ওয়েস্ট ইন্ডিজেই ২০০৭ ওয়ানডে বিশ্বকাপের সুপার এইটে উঠেছিল বাংলাদেশ। পুরোনো কথা টেনে আনার কারণ আরেকটি মিল। এবারের মতো ২০০৭ বিশ্বকাপের সুপার এইটেও বাংলাদেশের প্রথম দুই ম্যাচ পড়েছিল অ্যান্টিগায়। প্রথম ম্যাচটাও এবারের মতোই অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে। বৃষ্টি যে ম্যাচটিকে একরকম টি-টোয়েন্টিই বানিয়ে দিয়েছিল। ২২ ওভারের সেই ম্যাচে বাংলাদেশকে রীতিমতো উড়িয়ে দিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া।

এবার সত্যিকার টি-টোয়েন্টি। এবার কি অন্য কিছু?