ইনিংসের শেষ ওভার। স্ট্রাইকে পাকিস্তানের খুশদিল শাহ। বল হাতে শরীফুল ইসলাম। প্রথম বলটা ডট দিলেন। পরের দুটি বল শরীফুল এই ফিনিশারের সামনে করতে চাইলেন ইয়র্কার। এটাকে মোটেই ভুল ভাবনা বলা যাবে না। উইকেট যেমনই হোক, ইয়র্কার করতে পারলে যেকোনো ব্যাটসম্যানের জন্যই বড় শট খেলা কঠিন। তবে বিপদও আছে, যদি সেটা জায়গামতো না পড়ে। শরীফুলের বলও জায়গামতো পড়ল না।
ওভারের প্রথম বলটা ডট দেওয়া শরীফুল পরের দুই বলে খেলেন ছক্কা। প্রথম ছক্কাটা কাভারের ওপর দিয়ে। আর দ্বিতীয়টা খুশদিল মারলেন মিড উইকেট দিয়ে। এমন পরিস্থিতিতে শরীফুলের কাছে ছুটে এলেন অভিজ্ঞ তাসকিন আহমেদ ও ঢাকার অধিনায়ক মোসাদ্দেক হোসেন। বুদ্ধি দিলেন—ইয়র্কার নয়, এই উইকেটে করো গতির পরিবর্তন! শরীফুল সেটাই করলেন, শেষ ৩ বলে ৩ উইকেট। এবারের বিপিএলের প্রথম ম্যাচেই পেলেন হ্যাটট্রিক।
খুশদিল স্লোয়ার বলে বড় শট খেলতে গিয়ে থার্ড ম্যানে ক্যাচ দিলেন তাসকিনকে। রোস্টন চেজের ক্যাচটা নিলেন মোহাম্মদ নাঈম আর মাহিদুল ইসলামের ক্যাচ নিয়েছেন উইকেটকিপার ইরফান শুক্কুর। এই দুই বলও ছিল স্লোয়ার। এবারের বিপিএলে প্রথম হ্যাটট্রিক এটি। সব মিলিয়ে বিপিএলে সপ্তম।
ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে তাসকিন ও মোসাদ্দেকের সঙ্গে সেই কথোপকথনের কথা জানিয়েছেন এই পেসার। তিনি বলেছেন, ‘দুটি ছক্কা খাওয়ার পর তাসকিন ভাই আর সৈকত ভাই (মোসাদ্দেক) বলেছিল এই উইকেটে চেঞ্জ অব পেসটা করলে হয়তো ভালো হবে। কারণ, উইকেটে একটু আলাদা বাউন্স আছে।’
গত বছরটা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দারুণ কেটেছে শরীফুলের। ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশের হয়ে তিন সংস্করণেই খেলে গেছেন। সব মিলিয়ে ৩২ ইনিংসে উইকেট নিয়েছেন ৫২টি, যা বাংলাদেশের সর্বোচ্চ। চলতি বছরে প্রথমবার মাঠে নেমেছেন বিপিএল দিয়ে। এই বছরটাও গত বছরের মতো দুর্দান্ত কাটাতে চান শরীফুল।
যার শুরুটা হলো বেশ ভালোভাবেই, ‘অনুশীলনের সময় ভাবছিলাম, আমি গত বছর যেভাবে শেষ করেছি, এ বছর সেভাবে শুরু করতে চাই। আলহামদুলিল্লাহ, প্রথম ম্যাচটা ওই রকম হয়েছে। চেষ্টা করব বাকিগুলোতেও করার। আর মিরপুরের উইকেট আজ একটু ভালো, খুব ভালো লাগছিল বল ক্যারি করায়। ভালো স্কোরিং উইকেট ছিল।’
একে তো যেকোনো পর্যায়ের ক্রিকেটে ক্যারিয়ারের প্রথম হ্যাটট্রিক, সঙ্গে আজ প্রথমবার খেলা দেখতে এসেছিল পরিবারও। শরীফুলের জন্য এই হ্যাটট্রিকটা তাই বিশেষ, ‘আমার পরিবার আজ প্রথম খেলা দেখতে মাঠে এসেছে এবং সেদিনই আমার হ্যাটট্রিক হয়েছে, এটা খুব ভালো লাগছে। হ্যাটট্রিকের চিন্তাভাবনা ছিল না, দুই ছক্কা খাওয়ার পর চিন্তা করেছি আমার হাতে তখনো বল আছে আরও তিনটা। আমি ভালোভাবে ফিরে আসতে পারব। হয়তো এখান থেকে একটা উইকেট নিতে পারব। দুটি ছক্কা খাওয়ার পর মনে করছিলাম, কীভাবে রান আটকে দেওয়া যায়। কারণ, হয়তো আরেকটা যদি ছয় খেতাম স্কোরটা বড় হয়ে যেত। আমার লক্ষ্যটা ছিল যেন আমি ডট বল করতে পারি।’