২০২২ এশিয়া কাপের ট্রফি।
২০২২ এশিয়া কাপের ট্রফি।

এশিয়া কাপ নিয়ে নীরব কেন বিসিবি 

টুর্নামেন্ট শেষ পর্যন্ত কোথায় হবে, এখনো নিশ্চিত নয় সেটি। তবে ধারণা করা হচ্ছে, ২৭ মে বিসিসিআইয়ের বিশেষ সাধারণ সভার পর সবকিছু পরিষ্কার হবে।

এশিয়া কাপ নিয়ে কিছু না কিছু বলে প্রায় প্রতিদিনই সংবাদের শিরোনাম হচ্ছেন পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) প্রধান নাজাম শেঠি। তাঁর সব কথার সারবত্তা অবশ্য মোটামুটি একই এবং তা হলো, এশিয়া কাপ নিয়ে আয়োজক হিসেবে পিসিবির প্রস্তাব সবাইকে মেনে নিতে হবে।

‘সবাই’ না বলে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই) বলাই ভালো। যেকোনো ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ বিশ্ব ক্রিকেটেই আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়ায়। তার ওপর সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠেয় এশিয়া কাপ নিয়ে এই দুই দেশের মধ্যে ম্যাচের আগে চলছে আরেক ‘ম্যাচ’, রাজনৈতিক ও নিরাপত্তাজনিত সমস্যায় ভারত পাকিস্তানে এশিয়া কাপের ম্যাচ খেলবে না বলার পর যার শুরু। এ বিষয়ে সর্বশেষ পরিস্থিতিটাও বেশ পুরোনো। ভারতকে খেলাতে এশিয়া কাপের জন্য একটা ‘হাইব্রিড মডেল’ প্রস্তাব করেছে পিসিবি। সে মডেল অনুযায়ী টুর্নামেন্টে ভারতের ম্যাচগুলো হবে কোনো নিরপেক্ষ ভেন্যুতে। গতকাল জানা গেছে সেটি দুবাই। পিসিবির প্রস্তাবের সারমর্ম—ভারতের ম্যাচগুলো হবে নিরপেক্ষ ভেন্যু দুবাইয়ে। বাকি ম্যাচগুলোর ভেন্যু লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়াম।

পিসিবি প্রধান নাজাম শেঠি একাধিকবারই বলেছেন, তাঁদের ‘হাইব্রিড মডেলে’ নাকি সায় আছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) এবং শ্রীলঙ্কা ক্রিকেটের (এসএলসি)। তবে প্রস্তাবটা যাদের জন্য, সেই বিসিসিআই-ই এখনো এ নিয়ে নিজেদের মনোভাব জানায়নি। এদিকে বিসিবিও বলছে, এশিয়া কাপ নিয়ে আনুষ্ঠানিক মন্তব্যের সময় এখনো আসেনি। এশিয়া কাপ নিয়ে সর্বশেষ অবস্থা ও ‘হাইব্রিড মডেলের’ ব্যাপারে বাংলাদেশের অবস্থান জানতে চাইলে গতকাল বিসিবির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন চৌধুরী বলেছেন, ‘এখনো আগের অবস্থায়ই আছে সবকিছু। কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে আশা করি, অল্প কয় দিনের মধ্যে সবকিছু পরিষ্কার হয়ে যাবে।’

এখনো আগের অবস্থায়ই আছে সবকিছু। কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে আশা করি, অল্প কয় দিনের মধ্যে সবকিছু পরিষ্কার হয়ে যাবে
নিজাম উদ্দিন চৌধুরী, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, বিসিবি 

এই ‘অল্প কিছুদিন’–এর মেয়াদ শেষ হতে পারে ২৭ মে। সেদিন আহমেদাবাদে বসবে বিসিসিআইয়ের বিশেষ সাধারণ সভা। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের খবর, ‘হাইব্রিড মডেল’ নিয়ে বিসিসিআইয়ের সিদ্ধান্ত জানা যেতে পারে ওই সভার পরই। অবশ্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিসিসিআইয়ের এক কর্মকর্তা নাকি বলেছেন, অন্য কোনো ভেন্যুতে (পাকিস্তান ছাড়া) এশিয়া কাপ খেলার সিদ্ধান্তে তারা এখনো অটল, তবে সেটি কোনোভাবেই সংযুক্ত আরব আমিরাতে নয়। আমিরাতের প্রচণ্ড গরমে খেলিয়ে খেলোয়াড়দের চোটের ঝুঁকিতে ফেলতে চায় না বিসিসিআই। তাদের দাবি, এশিয়া কাপ হতে হবে শ্রীলঙ্কায়।

বিকল্প ভেন্যুর তালিকায় শুরুতে বাংলাদেশের নামও এসেছিল। তবে বিসিবি তখনই জানিয়ে দেয়, সেপ্টেম্বরে বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকে বলে বাংলাদেশ এশিয়া কাপ আয়োজনে আগ্রহী নয়। গরমের কারণে দুবাইয়ে খেলার ব্যাপারেও আপত্তি ছিল বিসিবির। কিন্তু এখন শোনা যাচ্ছে, গরমের কথা মাথায় রেখে দুবাইয়ে ম্যাচ শুরুই হবে বিকেল বা সন্ধ্যার পর। সে ক্ষেত্রে বিসিবির মত বদলাতেও পারে।

তবে শেষ পর্যন্ত যদি বাংলাদেশ দলকে পাকিস্তানেই খেলতে যেতে হয়, সে সিদ্ধান্ত হয়তো শুধু বিসিবির হাতে থাকবে না। পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস এবং পাকিস্তানের বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিরতা বিবেচনায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্তটা বিসিবি নেবে সরকারের সবুজ সংকেত পেলে। কাজেই বিসিবি আপাতত বিসিসিআইয়ের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় থাকলেও ভারত শেষ পর্যন্ত ‘হাইব্রিড মডেলে’ রাজি হলে দেখতে হবে বাংলাদেশের ম্যাচগুলো কোথায় হচ্ছে। সে কারণেই এশিয়া কাপ নিয়ে বিসিবি এখনই সরাসরি কোনো মন্তব্য করছে না।

বিসিসিআইয়ের একটি সূত্র অবশ্য ভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছে, শর্ত সাপেক্ষে ভারত পিসিবির ‘হাইব্রিড মডেলে’ রাজি হতেও পারে। শর্তটা হলো পাকিস্তানকেও ভারতে এসে ২০২৩ বিশ্বকাপের ম্যাচ খেলার নিশ্চয়তা দিতে হবে। কারণ, পিসিবি এরই মধ্যে বলেছে, ভারত যদি পাকিস্তানে এশিয়া কাপের ম্যাচ খেলতে না যায়, তাহলে ২০২৩ বিশ্বকাপে তারাও ভারতে দল পাঠাবে না। আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ খেলার ব্যাপারেও আপত্তি আছে পিসিবির। এ মাঠে যদি পাকিস্তান কোনো ম্যাচ খেলে, শুধু ফাইনালই খেলবে বলে জানিয়ে রেখেছে তারা।

আগামী ৫ অক্টোবর বিশ্বকাপ শুরু হয়ে ফাইনাল হবে ১৯ নভেম্বর। আহমেদাবাদে উদ্বোধনী ম্যাচ ও ফাইনাল রেখে বিসিসিআই নাকি ১২টি ভেন্যুও ঠিক করে ফেলেছে বিশ্বকাপের জন্য।