বাংলাদেশের বিপক্ষে রাওয়ালপিন্ডি টেস্টে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে ৬ উইকেটে ৪৪৮ রান তুলে প্রথম ইনিংস ঘোষণা করে পাকিস্তান। তবে রানের পাহাড় গড়েও স্বস্তিতে নেই স্বাগতিকেরা। ৪ ফিফটিতে বাংলাদেশ যে দারুণ জবাব দিচ্ছে!
সাদমান ইসলাম ও মুমিনুলের হকের পর কাল তৃতীয় দিনের শেষ সেশনে ফিফটি পেরিয়ে অপরাজিত আছেন মুশফিকুর রহিম ও লিটন দাস। দুই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানের অবিচ্ছিন্ন ৯৮ রানের জুটি বাংলাদেশকে যেমন বড় কিছুর ভরসা জোগাচ্ছে, তেমনি পাকিস্তানকে ফেলে দিয়েছে অস্বস্তিতে।
আজ চতুর্থ দিন শুরুর আগে ৫ উইকেট হাতে নিয়ে ১৩২ রানে পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। পাকিস্তান পেসসহায়ক পিচ বানালেও তাদের তারকা পেসার শাহিন শাহ আফ্রিদি এখনো উইকেটশূন্য। মুশফিক-লিটনের জুটিটা আরও বড় হলে লিডের দিকেই এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ। অথচ পাকিস্তানের টিম ম্যানেজমেন্টের মনে হয়েছে, প্রথম ইনিংসে তারা যে রান তুলেছে, সেটাই যথেষ্ট। কিন্তু তাদের ধারণা বদলে দিয়েছেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা।
তবে পাকিস্তানের সহকারী কোচ আজহার মেহমুদের দাবি, রাওয়ালপিন্ডিতে তাঁরা যে ধরনের পিচ আশা করেছিলেন, তেমনটা পাননি। পিচের আচরণে বিস্মিত মেহমুদ কাল তৃতীয় দিনের খেলা শেষে সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘যেমন চেয়েছিলাম, পিচ তেমন আচরণ করছে না। এ নিয়ে আমাদের কিছুই করার নেই। তবে আমরা পিচ পড়তে ভুল করিনি।’
রাওয়ালপিন্ডির এই পিচ তৈরিতে সহায়তা করেছেন টনি হেমিং। এই অস্ট্রেলিয়ান পিচ কিউরেটর মাস দেড়েক আগেও ছিলেন বাংলাদেশে। তবে গ্রাউন্ডস বিভাগের এক কর্মকর্তার সঙ্গে মনোমালিন্যের জেরে গত জুলাইয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) চাকরি ছেড়ে দেন। এরপর তাঁকে প্রধান পিচ কিউরেটর হিসেবে নিয়োগ দেয় পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি)।
রাওয়ালপিন্ডির পিচে হেমিং যথেষ্ট ঘাস রাখায় পাকিস্তান টিম ম্যানেজমেন্টের মনে হয়েছিল, এখান থেকে আরও পেস ও বাউন্স পাওয়া যাবে। এ কারণে চার পেসারকে নিয়ে বোলিং আক্রমণ সাজিয়েছে তারা। রাখা হয়নি কোনো স্বীকৃত স্পিনার। সংবাদ সম্মেলনে সে কথাই বলেছেন মেহমুদ, ‘যখন পিচে গতি ও বাউন্স থাকে অথবা বল তীক্ষ্ণভাবে বাঁক নেয়, তখন ব্যাটসম্যানের ভুল করার সম্ভাবনা বেশি থাকে। কিন্তু পিচ মন্থর হলে ব্যাটসম্যানরা অতিরিক্ত সময় পায় (বুঝেশুনে খেলতে পারে)।’
পাকিস্তান টিম ম্যানেজমেন্ট এমন ব্যাটিং–সহায়ক পিচ চায়নি বলেও দাবি মেহমুদের, ‘আমাদের দল নির্বাচনের দিকে তাকালেই বুঝবেন, আমরা ফ্ল্যাট উইকেট চাইনি। আমরা এমন উইকেট চেয়েছিলাম, যেখান থেকে সবাই সহায়তা পাবে। আমরা এটা নিশ্চিত করার চেষ্টা করব দ্বিতীয় ম্যাচের পিচে যেন সিম, বাউন্স ও গতি থাকে।’
ঘরের মাঠে পাকিস্তানি বোলারদের এমন বিবর্ণ পারফরম্যান্স নিয়ে আজহার মেহমুদ পিচের আচরণকে দায়ী করলেও তা মানতে নারাজ রমিজ রাজা। পাকিস্তানের সাবেক এই অধিনায়ক ও পিসিবির সাবেক চেয়ারম্যান একাদশ সাজানোয় গলদ দেখছেন। একই সঙ্গে শান মাসুদের অধিনায়কত্বেরও সমালোচনা করেছেন।
গত রাতে নিজের ইউটিউব চ্যানেল ‘রমিজ স্পিকস’-এ একটি ভিডিও পোস্ট করেছেন রমিজ, যার শিরোনাম দিয়েছেন ‘স্পিনবিহীন পাকিস্তানের সাংঘাতিক ভুল’। ভিডিওতে তিনি বলেছেন, ‘প্রতিটি বলের আগে বোলারদের সঙ্গে কথা বলার জন্য শান মাসুদ মিড অন বা মিড অফে ফিল্ডিং করছে। তার অধিনায়কত্ব আমার কাছে পুরোনো ধাঁচের মনে হচ্ছে। খেলাকে আরও ভালোভাবে বুঝতে হলে তার স্লিপে দাঁড়ানো উচিত।’
ইনিংসে তিনটি ডিআরএস থাকলেও পাকিস্তান এরই মধ্যে সব কটি শেষ করে ফেলেছে। অর্থাৎ বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসে স্বাগতিকেরা আর কোনো রিভিউ নিতে পারবে না। মাসুদের অযথা রিভিউ নেওয়ার সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন রমিজ, ‘বোলাররা বিশেষ কিছু করতে পারছে না। এর অর্থ এই নয় যে তোমাকে উইকেট পাওয়ার জন্য রিভিউ নিতে হবে। একজন সাধারণ মানুষও দেখে বলতে পারবে, সেটা আউট ছিল না। এরপরও কিপার, স্লিপে থাকা ফিল্ডাররা সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে দ্বিধা সৃষ্টি করছে এবং (তাদের কথা শুনে মাসুদ) রিভিউ নষ্ট করছে।’
পাকিস্তান দলের সমালোচনা করলেও বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের প্রশংসায় ভাসিয়েছেন রমিজ, ‘লিটন দাসকে আমার খুবই পছন্দ। সে অসাধারণ হুক শট খেলে, ফাস্ট বোলারদেরও ভালো খেলে। মুশফিক সব চাপ শুষে নিচ্ছে। সে খুব দায়িত্বশীলতার সঙ্গে ব্যাট করে যাচ্ছে। লিটন ও মুশফিকের ইনিংস বাংলাদেশকে সাহস জোগাচ্ছে। তারা এভাবে ব্যাট করতে থাকলে বাংলাদেশ এই টেস্টকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ বানিয়ে ফেলতে পারে।’