কখনো নামিবিয়া, কখনো উগান্ডা, কখনো আবার দক্ষিণ আফ্রিকা বা ইংল্যান্ড—তিন মাস ধরে হংকং ক্রিকেট দল চষে বেড়াচ্ছে এ দেশ থেকে ও দেশে। এ সময় বাবর হায়াত, এহসান খান, ইয়াসিম মুর্তাজা—হংকংয়ের এই তিন ক্রিকেটার বাবা হয়েছেন। তবে সন্তানের মুখ এখনো দেখা হয়ে ওঠেনি তাঁদের।
এই যে হংকংয়ের ক্রিকেটাররা টানা তিন মাস ক্রিকেট খেলে যাচ্ছেন, এমনকি সন্তানসন্ততির মুখ পর্যন্ত দেখা হচ্ছে না, এটা এক বিস্ময়কর ব্যাপারই! কারণ, হায়াত-এহসান-ইয়াসিমরা যে পুরোদস্তুর পেশাদার ক্রিকেটার নন। শুধু এই তিনজন কেন, হংকং দলের বেশির ভাগ ক্রিকেটারই অন্য পেশার সঙ্গে যুক্ত। এটাই তো হওয়ার কথা! হংকংয়ে ক্রিকেট খেলে মনের ক্ষুধা মিটতে পারে, কিন্তু পেটের ক্ষুধা দূর হওয়ার নয়। দেশটিতে ক্রিকেট খেলাটা এখনো ওই রকম পেশা হয়ে ওঠেনি যে শুধু ক্রিকেট দিয়ে সেখানে পেট চলবে!
হংকং দলের ক্রিকেটাররা এটা ভালো করেই জানেন, আর এ কারণেই তাঁরা পেট চালাতে চাকরি কিংবা ব্যবসা করেন। আর ক্রিকেটটাকে ভালোবাসেন বলেই শত বিপত্তি পেরিয়ে ক্রিকেট খেলাটা চালিয়ে যান।
দলের কেউ করেন ব্যবসা, কেউ সরকারি চাকরি—দল সম্পর্কে বলতে গিয়ে ইএসপিএনক্রিকইনফোতে এভাবেই বলছিলেন হংকং জাতীয় দলের কোচ ট্রেন্ট জনস্টন, ‘দলের তিন–চারজন ক্রিকেটার কোচিং পেশার সঙ্গে যুক্ত। দলের বেশ কয়েকজন ক্রিকেটার ফুড পান্ডা বা ডেলিভারো নামে খাবার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানে ডেলিভারি ম্যান হিসেবে কাজ করে। দলের সহ-অধিনায়ক কিঞ্চিৎ শাহ করে জুয়েলারি ব্যবসা। স্কট ম্যাকচিনির নিজের ব্যবসা আছে, তাই তার ক্রিকেটে সময় দেওয়া নিয়ে ঝামেলা কম। ওপেনিং বোলার ইয়াং শাহ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। এ ছাড়া কয়েকজন সরকারি চাকরিও করে।’
চাকরি ছেড়ে গত তিন মাস ক্রিকেটের সঙ্গে। তাঁদের অবর্তমানে তাই পরিবারকে নিতে হয় বাড়তি দায়িত্ব। তবু একজন ক্রিকেটারও বাড়ি যাওয়ার কথা বলেননি, যা হংকং কোচকে মুগ্ধ করেছে। বাড়তি দায়িত্ব পালনের জন্য আয়ারল্যান্ডের সাবেক এই ক্রিকেটার ধন্যবাদ দিয়েছেন ক্রিকেটারদের পরিবারকে, ‘গত তিন মাসে ক্রিকেট খেলতে গিয়ে অনেক কিছুই ত্যাগ করেছে তারা। তাদের পরিবারকে ধন্যবাদ দিলে সেটা কমই হবে। ক্রিকেটারদের স্ত্রী, প্রেমিকা, সন্তানেরা তাদের ঘরে ফেরার জন্য অপেক্ষা করছে। অথচ দলের একজনও কখনো বলেনি যে সে বাড়ি ফিরতে চায়। তাদের সঙ্গীরাও অসাধারণ কাজ করেছে, সংসারটা চালিয়ে নিচ্ছে।’
হংকংয়ের ক্রিকেট সবচেয়ে বড় ধাক্কা খায় কোভিড মহামারির সময়। টানা দুই বছর ক্রিকেটাররা খেলার বাইরে ছিল। তবে ক্রিকেটাররা অনুশীলন ছাড়েননি। সে সময় বোর্ড থেকে খেলোয়াড়েরা কোনো সুযোগ–সুবিধা পাননি। এ নিয়ে তাঁদের কোনো অভিযোগও ছিল না। সেই সময়ের কথা মনে করে হংকং কোচ ট্রেন্ট জনস্টন বলেছেন, ‘সম্ভবত করোনার সময় ছয়টা লকডাউন ছিল। আমরা এক বছরের বেশি সময় অনুশীলনই করিনি। ছেলেরা জুমের মাধ্যমে ঘরে, গাড়ির পার্কে, স্থানীয় পার্কে, কন্ডিশনিং ক্যাম্প ও স্ট্রেনদ ক্যাম্প করেছে। তারা দলের প্রতি যে দায়বদ্ধতা দেখিয়েছে, তা সত্যিই অসাধারণ। তারা শুধু কাজটাই করেছে, কোনো কিছু নিয়েই প্রশ্ন কিংবা অভিযোগ তোলেনি।’
এত বাধা উতরে আবারও হংকংয়ের ক্রিকেটারদের নিজেদের প্রমাণের সময় এসেছে। কারণ, ওমানে এশিয়া কাপের বাছাইপর্বের সেরা দল হয়ে মূল পর্বে খেলছে হংকং। গ্রুপ ‘এ’-তে তাদের প্রতিপক্ষ ভারত ও পাকিস্তান। আজ নিজেদের প্রথম ম্যাচে তারা মাঠে নামবে ভারতের বিপক্ষে। চার বছর আগে এশিয়া কাপে ভারতের বিপক্ষে শেষবার খেলেছিল হংকং। ভারতকে সেবার ভয়ও পাইয়ে দিয়েছিল হংকং। তবে ওই ম্যাচের পর গত চার বছরে তারা আর ভারতের বিপক্ষে খেলেনি।
সামনে আবার ভারতের বিপক্ষে খেলতে হয়তো অন্য কোনো এশিয়া কাপের অপেক্ষাতেই থাকতে হবে তাদের। তবে এই মুহূর্তে ‘আগামীকাল কী হবে’ নিয়ে ভাবছেন না হংকংয়ের ক্রিকেটাররা। তাঁদের পুরো মনোযোগ এখন দুবাইয়ে ভারতের বিপক্ষে আজকের ম্যাচে। ভারতের বিপক্ষে আরেকটি ম্যাচ খেলতে নামার জন্য উন্মুখ হয়ে আছেন তাঁরা!