মেঘ জমেছে আকাশে, সেদিকে তাকিয়ে ইংল্যান্ড অধিনায়ক জস বাটলার
মেঘ জমেছে আকাশে, সেদিকে তাকিয়ে ইংল্যান্ড অধিনায়ক জস বাটলার

টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে খেলছে বৃষ্টিও

‘রেইন, রেইন, গো অ্যাওয়ে
কাম অ্যাগেইন সাম আদার ডে
উই ওয়ান্ট টু গো আউটসাইড অ্যান্ড প্লে’

বৃষ্টিতে যখন ম্যাচ বাতিল হচ্ছিল, নার্সারিতে পড়া এই ছড়াটাই কি মনে পড়ছিল বাভুমা–বাটলার–উইলিয়ামসনদের? কে জানে, পড়লেও পড়তে পারে!

তবে ভারত ম্যাচ সামনে রেখে পাকিস্তান অধিনায়ক বাবর আজমকে ঠিক এই গান নিয়েই প্রশ্ন করেছিলেন এক সাংবাদিক। জিজ্ঞেস করেছিলেন, বৃষ্টি–আতঙ্কে খেলোয়াড়দের গানটি গাইতে হচ্ছে কি না। বাবরের উত্তর ছিল, ‘নাহ্‌, আমরা বাচ্চাকে ঘুম পাড়ানি গান শোনাচ্ছি না।’

তবে এখন পরিস্থিতি এমন যে সামনের দিনে বাবরকে এই গান গাইতেও হতে পারে। বৃষ্টির চোটপাটে মাঠের লড়াই বাদ দিয়ে এখন যে তাদের বৃষ্টিদিনের হিসাব–নিকাশের টালি খাতা নিয়েও বসতে হচ্ছে।

বৃষ্টি গিলে নিয়েছে নিউজিল্যান্ড–আফগানিস্তান ম্যাচ, হয়েছে পয়েন্ট ভাগাভাগি।

অস্ট্রেলিয়ায় টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বৃষ্টি যে তৃতীয় শক্তি হয়ে আসতে যাচ্ছে, সে ভবিষ্যদ্বাণী আগে থেকেই ছিল। ভারত–পাকিস্তান ও বাংলাদেশ–নেদারল্যান্ডস ম্যাচেও ছিল বৃষ্টির হুমকি। সেখানেও কিছুটা খেলই দেখাল বৃষ্টি। ম্যাচ দুটিতে পূর্বাভাস থাকার পরও বৃষ্টির দেখা মেলেনি। তবে কে জানত, বৃষ্টি তখন অপেক্ষায় ছিল পুরোনো ‘শত্রু’ দক্ষিণ আফ্রিকার। বৃষ্টিতে বারবার কপাল পোড়া প্রোটিয়ারা প্রকৃতির আঘাতে আরেকবার ক্ষতিগ্রস্ত হলো। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে নিশ্চিত জয়ের পথে থাকা টেম্বা বাভুমার দলকে জয়বঞ্চিত রাখল বৃষ্টি।

বৃষ্টি অবশ্য এবার একটি দলকে লক্ষ্য করে বন্দুক তাক করেনি। বরং দক্ষিণ আফ্রিকার ক্ষতিটা তুলনামূলক কমই হয়েছে বলতে গেলে। একটি পয়েন্ট নিয়ে অন্তত মাঠ ছাড়তে পেরেছে তারা। সেই সৌভাগ্য হয়নি ইংল্যান্ডের। আজ বৃষ্টির বাগড়ায় আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে হার নিয়েই মাঠ ছাড়তে হয়েছে জস বাটলারের দলকে।

একইভাবে বৃষ্টি গিলে নিয়েছে নিউজিল্যান্ড–আফগানিস্তান ম্যাচকেও, সেখানেও হয়েছে পয়েন্ট ভাগাভাগি। শুরুতেই যে বৃষ্টিকে তৃতীয় শক্তি বলে মনে হয়েছে, এখন সেটিই যেন মূল শক্তিতে পরিণত হয়েছে। বিশ্বকাপ তো মাত্র শুরু হলো, সামনের ম্যাচগুলোতেও বৃষ্টি এমন বেরসিক হামলা অব্যাহত রাখলে ওলট–পালট হয়ে যেতে পারে পয়েন্ট টেবিলের সব হিসাব–নিকাশ।

আগামীকাল দক্ষিণ আফ্রিকা–বাংলাদেশ ম্যাচেও আছে বৃষ্টির চোখরাঙানি। একইভাবে ভারত–নেদারল্যান্ডস ম্যাচেও আছে বৃষ্টির সম্ভাবনা। সামনের দিনগুলোতে যদিও পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে সবকিছু একেবারে যে ঘড়ির কাঁটা ধরে হচ্ছে না তার প্রমাণ তো আগেই মিলেছে।

তবে বৃষ্টিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবক হিসেবে নিয়েই এখন নতুন করে কৌশল সাজাতে হবে দলগুলোকে। মাথায় রাখতে হবে ভগ্নাংশের হিসাবকেও। হিসাব–নিকাশের একটু গরমিল ওলট–পালট করে দিতে পারে সব সম্ভাবনা।

এই যেমন ইংল্যান্ড–আয়ারল্যান্ড ম্যাচটিই ধরা যাক। ইংলিশদের সামনে লক্ষ্যটা খুব বড় ছিল না। ১৫৭ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ১৪.৩ ওভারে ৫ উইকেটে ইংল্যান্ডের সংগ্রহ ছিল ১০৫ রান। শেষ ৬ ওভারে ইংল্যান্ডের প্রয়োজন ছিল ৬৫ রান। এমন পরিস্থিতিতে ম্যাচ জেতা একেবারে অসম্ভব ছিল না, হারার সম্ভাবনাও অবশ্য উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তবে ইংল্যান্ড তো চেষ্টায় করার সুযোগটাই পেল না। উল্টো ডাকওয়ার্থ–লুইস পদ্ধতিতে ম্যাচটা ৫ রানে হেরে বসে তারা।

ইংল্যান্ডের এ হার টুর্নামেন্টের বাকি দলগুলোর জন্য বার্তাও বটে। ম্যাচ চলাকালেই বাড়তি একটা হিসাবের খাতা নিয়ে হয়তো বসে যেতে হবে। কৌশল এমন হতে হবে যেন আকস্মিক আকাশ ভেঙে বৃষ্টি নামলেও যেন প্রতিপক্ষ দল থেকে এগিয়ে থাকা যায়। পরিস্থিতি বুঝে খেলার কৌশল বদলাতে হবে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বাড়তি ঝুঁকিও নিতে হবে।

ইংল্যান্ড–আয়ারল্যান্ড ম্যাচে বৃষ্টি হানা দিয়েছে একাধিকবার

একইভাবে ফিল্ডিংয়ে থাকা দলটিকেও একই হিসাব মাথায় নিয়ে মাঠে থাকতে হবে। অনেক ক্ষেত্রে বাইরে থেকেও আসতে পারে গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা।
কখন আগ্রাসী হতে হবে বা প্রতিপক্ষকে চেপে ধরতে হবে, তা নিয়েও হতে পারে আলাদা কাটাছেঁড়া। সহজ কথা হচ্ছে, বৃষ্টি এ মুহূর্তে বিশ্বকাপের বড় একটি প্রভাবক হয়ে দাঁড়িয়েছে।

প্রতিদ্বন্দ্বী দুই দলের জন্য বৃষ্টি এখন সমান প্রতিপক্ষ। একটু হালকাভাবে নিলেই বিদায়ঘণ্টা বেজে যেতে পারে বিশ্বকাপে। যেভাবে ২০০৩ সালে বৃষ্টি আইনের হিসাব ভুল করে দক্ষিণ আফ্রিকাকে বিদায়ের পথ মাপতে হয়েছিল। তাই হিসাবে ভুল করা যাবে না। অপেক্ষাকৃত দুর্বল দলের বিপক্ষে চেষ্টা করতে হবে দ্রুত ম্যাচ শেষ করে দেওয়ার।

এখানেও অবশ্য আছে বিপদের উঁকিঝুঁকি। অতিরিক্ত ঝুঁকি জন্ম দিতে পারে আরও কিছু অঘটনের। তখন বিশ্বকাপে চলমান রোমাঞ্চে আসতে পারে নতুন বাঁক। সব মিলিয়ে গৌরবময় অনিশ্চয়তার খেলা ক্রিকেটকে এ বিশ্বকাপে বৃষ্টি আরেকটু বেশি অনিশ্চিত করে তুলেছে। এ অনিশ্চয়তায় দলগুলোকে নিজেদের পারফরম্যান্সের সঙ্গে কিছুটা ভাগ্যের দিকেও চেয়ে থাকতে হবে।