‘ক্যাম্পবেল! হ্যালো, ক্যাম্পবেল!’—জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে ফটোসাংবাদিকেরা জোনাথন ক্যাম্পবেলকে ডাকছিলেন এই নামেই। ২৬ বছর বয়সী জোনাথনও হাসি মুখে ব্যাট উঁচিয়ে সাড়া দিচ্ছিলেন। বাংলাদেশ সফর দিয়ে প্রথমবার জিম্বাবুয়ে দলে ডাক পাওয়া অলরাউন্ডার জোনাথন জানেন, বাবার ‘ক্যাম্পবেল’ নামটাই তাঁর প্রথম পরিচয়।
জিম্বাবুয়ের সাবেক ক্রিকেটার অ্যালিস্টার ক্যাম্পবেলের ছেলে জোনাথন ক্যাম্পবেল। অভিষেকের অপেক্ষায় থাকা এই অলরাউন্ডারের নিজের নামে পরিচিত হওয়ার সুযোগ তো সবেমাত্র এল। ঘরোয়া ক্রিকেটের সিঁড়ি বেয়ে তিনি এখন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেকের অপেক্ষায়।
কাল জিম্বাবুয়ে দলের ঐচ্ছিক অনুশীলন শেষে জোনাথন শোনালেন প্রথমবারের মতো জাতীয় দলে ডাক পাওয়ার প্রতিক্রিয়া, ‘দারুণ! দুর্ভাগ্যবশত গত (পরশু) রাতে খেলার সুযোগ পাইনি, তবে আমি নিশ্চিত, সুযোগ আসবে।’ প্রথমবার বাংলাদেশে এসেছেন। এখাকার কন্ডিশনে অনুশীলনটাও দারুণ উপভোগ্য মনে হচ্ছে জোনাথনের কাছে, ‘খুব ভালো অনুশীলন হচ্ছে। গরম একটু বেশি। আমরা এক মাস আগে আফ্রিকা গেমসের জন্য ঘানায় গিয়েছি। সে দেশের সঙ্গে এখানকার তাপমাত্রায় মিল আছে। অনেকটাই মানিয়ে নিতে পেরেছি।’
জোনাথন লেগ স্পিনিং অলরাউন্ডার, ব্যাটসম্যান হিসেবেও স্পিনের বিপক্ষে নিজের দক্ষতায় তাঁর দারুণ আস্থা, ‘পেসারদের চেয়ে স্পিনারদের খেলতে আমি বেশি পছন্দ করি। তো এখানের স্পিনারদের খেলতে মুখিয়ে আছি। আমার ব্যাটিং এই কন্ডিশনের সঙ্গে মানানসই হবে আশা করি।’ উপমহাদেশের কন্ডিশনে খেলার শিক্ষাটা বাবার কাছ থেকেই পেয়েছেন জোনাথন, ‘বাবা এই কন্ডিশন সম্পর্কে অনেক কিছু জানেন। তিনি যখন এই দেশে এসেছেন, ভালো খেলেছেন। এখানে কীভাবে খেলতে হবে, সে সম্পর্কে তাঁর কাছ থেকে অনেক তথ্য পেয়েছি।
সেগুলো মাঠে কাজে লাগানোর অপেক্ষায় আছি।’ উপমহাদেশে বাবা অ্যালিস্টার ক্যাম্পবেলের রেকর্ডের উদাহরণও দিলেন বেশ গর্ব করে, ‘ভুল না করলে বাবার প্রথম ওয়ানডে সেঞ্চুরি ঢাকায়। তিনি উপমহাদেশে খেলাটা উপভোগ করতেন। সম্ভবত ভারতের মাঠে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেছেন। আশা করি, আমিও তাঁর মতো কিছু করতে পারব।’
অ্যালিস্টার ক্যাম্পবেল ছিলেন জিম্বাবুয়ের সোনালি প্রজন্মের ক্রিকেটারদের একজন। বেড়ে ওঠার সময়টায় বাবার মুখে হিথ স্ট্রিক, অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার, গ্লান্ট ফ্লাওয়ার, নিল জনসনদের গল্প শুনেছেন জোনাথন।
জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটের সেই সোনালি সময় আবারও ফিরিয়ে আনায় ভূমিকা রাখতে চান অ্যালিস্টার তনয়, ‘আমরা জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটকে আবারও আগের সেই অবস্থানে নেওয়ার চেষ্টা করছি। যে পর্যায়ে দলটা ছিল...বিভিন্ন দলকে হারানো, বড় টুর্নামেন্টে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা, দক্ষিণ আফ্রিকা, ইংল্যান্ডের মতো দলগুলোকে হারানো...অবশ্যই সেটি পুরোপুরি ভিন্ন সময় ছিল। আমি বিশ্বাস করি, সেই জায়গায় ফেরার জন্য জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটে যথেষ্ট গভীরতা আছে, সামর্থ্যবান ক্রিকেটারও আছে। অনেক তরুণ প্রতিভা আছে। তাদের ঠিকঠাক গড়ে তোলা হলে জিম্বাবুয়ে আবার পাওয়ার হাউস হতে পারবে।’
পেশাদার ক্রিকেটার হয়ে ওঠার পেছনে জোনাথনের বড় অনুপ্ররণাও হয়তো এটাই। খেলা হিসেবে জোনাথনের প্রথম পছন্দ গলফ। বাবার ইচ্ছাতেই গলফ ছেড়ে তাঁর ক্রিকেটে আসা। মুখে অবশ্য বললেন, ‘দুটি বিষয়ই কাজ করেছে। নিজেও চেয়েছি (ক্রিকেটার হতে), বাবাও চেয়েছেন।’
পেশা হিসেবে ক্রিকেটকে বেছে নিলেও গলফের নেশা এখনো আছে জোনাথনের। এতটাই যে ক্যাম্পবেলদের বাড়িতে রাতের খাবারের টেবিলে ক্রিকেটের চেয়ে বেশি খুনসুটি হয় গলফ নিয়েই, ‘আমি গলফ ভালোবাসি, এটি আমার শখ। আমি বন্ধুদের সঙ্গে অনেক গলফ খেলি। ক্রেগ আরভিন, রায়ান বার্লদের সঙ্গে খেলি। আমার ছোট ভাই পেশাদার গলফার হওয়ার চেষ্টা করছে। আমাদের পরিবার গলফ পছন্দ করে। আমার মা–ও ভালো গলফ খেলেন।’
পরিবারেই গলফপ্রীতি—ক্রিকেটার বাবার ছেলের গলফের নেশায় পড়ার এটাই হয়তো বড় কারণ ছিল। তবে জোনাথানের পরিচয় এখন আর গলফার নয়, ক্রিকেটার। তাঁর সব স্বপ্নও শুধুই জিম্বাবুয়ের ক্রিকেট নিয়ে।