সমালোচকেরা যতই বলুন না কেন, নিজের খেলার ধরন বদলাবেন না জো রুট। তাঁর খেলা সবচেয়ে ভালো তিনিই বোঝেন, সেটিও মনে করিয়ে দিয়েছেন এ ইংলিশ ব্যাটসম্যান।
রাজকোটে সিরিজের তৃতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসে যশপ্রীত বুমরাকে রিভার্স স্কুপ করতে গিয়ে স্লিপে ক্যাচ তোলেন রুট। তাঁর মতো ব্যাটসম্যানের কেন অমন শট খেলতে হবে, এমন সমালোচনা ওঠে এরপর। কেউ কেউ আবার তাঁর ওই শট খেলার সময় নিয়েও প্রশ্ন তোলেন।
স্কাই স্পোর্টস ক্রিকেটের পডকাস্টে সাবেক দুই অধিনায়ক মাইকেল আথারটন ও নাসের হুসেইনের সঙ্গে আলোচনায় রুট তাঁর ওই আউট প্রসঙ্গেও কথা বলেছেন।
টেস্টে ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহক বলেন, ‘এ সিরিজে আমি কীভাবে আউট হয়েছি, আমার জন্য কোনটি সবচেয়ে ভালো হতো—তা নিয়ে লোকে ভিন্ন ভিন্ন কথা বলবে। তবে কোনো পরিস্থিতিতে যেটা সবচেয়ে ভালো মনে হবে, আমি সে অনুযায়ী খেলে যাব। আমার খেলা আমার চেয়ে ভালো কেউ জানে না।’
এরপর রুট যোগ করেন, ‘আমি এখন যেখানে, সে পরিস্থিতিতে এসেছি কারণ, আমি সব সময়ই আরও ভালো করার চেষ্টা করেছি, উন্নতির চেষ্টা করেছি, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলানোর চেষ্টা করেছি। এটা চলতে দিতে হবে। যদি আপনি থমকে যান, তাহলে সবার কাছে যে পরিমাণ তথ্য ও বিশ্লেষণ আছে—তাতে তারা (প্রতিপক্ষ) আপনাকে বুঝে ফেলবে।’
আর ইনিংসের ওই পর্যায়ে ওই শট খেলা প্রসঙ্গে রুটের যুক্তি, ‘হয়তো আপনি বলবেন, ওই সময়ে খেলা উচিত হয়নি। তবে এটা কিন্তু আগেও যখন খেলেছি, তখনো বলতে পারতেন। একইভাবে অফ স্টাম্পের ওপর থেকে যে ড্যাব করি আমি, সেটাতেও অনেক রান করি। বোলারকে বিভিন্ন প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয়।’
মায়ের অসুস্থতার কারণে টেস্টের ওই দিন অনুপস্থিত ছিলেন ভারতের স্পিনার রবিচন্দ্রন অশ্বিন। এর ফলে একজন বোলার কম ছিল, এরপরও রুট কেন বুমরাকে দেখেশুনে খেললেন না, এমন প্রশ্নও তুলেছেন কেউ কেউ। রুটের ভাবনা অবশ্য ছিল ভিন্ন রকমই, ‘এটা (ওই শটে সফল হলে) ওই দিন সকালের পুরো চিত্রটাই বদলে দিতে পারত। তাদের একজন বোলার কম ছিল। (রবিচন্দ্রন) অশ্বিন ছিল না বলে বুমরাকে দেখেশুনে খেলার কথা বলা হয়েছে। তবে বুমরা যদি ওভারে ৪ করে দিত, তাহলে (চাপ তৈরি করতে) তাদের আরও একজন কমে যেত। আমরা আরও দ্রুত খেলায় এগিয়ে যেতে পারতাম। যে পিচ ভাঙার ইঙ্গিত দিচ্ছিল, যেখানে ভারতের ওপর আরও চাপ তৈরি করতে পারতাম। আমি এমনটিই ভেবেছি।’
রাঁচিতে পরের টেস্টে অবশ্য রুট নিজেকে বদলে ফেলে পান দারুণ একটি সেঞ্চুরি। কেন নিজের খেলার ধরন সে টেস্টে বদলে ফেললেন, সে ব্যাখ্যায় রুট বলেন, ‘এমনটা বললে হয়তো আমি ভিতু হয়ে যাব না—আমি কাভার ড্রাইভ খেলতে গিয়েও স্টাম্পে বল টেনে আনতে পারতাম (রাঁচিতে)। হয়তো স্লিপে ক্যাচ তুলতে পারতাম। আগের টেস্টেও বুমরার বলে এভাবে আউট হতে পারতাম। তখন আলোচনা উঠত, ওই বোলারের বিপক্ষে অফ স্টাম্পের বাইরে দুর্বলতা আছে। আসলে বলটা (রাজকোটে) নিচু হয়েছিল। এ কারণেই কানায় লেগেছে।’
এরপর রুট বলেন, ‘ওই কন্ডিশনে (রাঁচিতে) চোখধাঁধানো কিছু দরকার ছিল না। কারও শান্ত থেকে খেলে যাওয়ার দরকার ছিল। জুটি গড়ার দরকার ছিল। দুজন মিলে যদি খেলা শুরু করে, তাহলে শুরুর চেয়ে অনেক আলাদা মনে হয় উইকেটটিকে। প্রথম ১০-২০ বল পর এমন মানসিকতা নিয়েই থেকেছি। বুঝেছি, ওই উইকেটে আমার ধরনে খেলে রান করার সবচেয়ে সফল উপায় সেটিই।’
তবে চতুর্থ টেস্টে সেঞ্চুরি পাওয়ার আগে এ সিরিজে নিজের পারফরম্যান্স নিয়ে হতাশাটা লুকোননি রুট, ‘আমি আসলে সামনে যা আছে, সেটিই খেলার চেষ্টা করি। এ সফরে যেভাবে চেয়েছিলাম, নিজের কাছে যে প্রত্যাশা ছিল, সেভাবে অবদান রাখতে পারিনি বলে মনে হয়েছে। বিশ্বের এ জায়গায় ব্যাটিং করতে ভালো লাগে, এর আগে সাফল্যও পেয়েছি এখানে। নিজের প্রতি তাই প্রত্যাশা ছিল অনেক। শেষ টেস্টের আগে আমি নিজেকে যেখানে দেখতে চেয়েছিলাম, তার অনেক নিচে ছিল।’