বোর্ড সভাপতি ফারুক আহমেদকে পেলেই সংবাদমাধ্যমে কৌতূহল—চন্ডিকা হাথুরুসিংহে জাতীয় দলের কোচ থাকছেন তো? ফারুক কখনো কূটনৈতিক উত্তর দিচ্ছেন, কখনোবা জানিয়ে দিচ্ছেন—শ্রীলঙ্কান এই কোচের ব্যাপারে তাঁর নিজের অবস্থান এখনো আগের মতোই। অর্থাৎ হাথুরুসিংহে বাংলাদেশ দলের কোচ থাকুন, সেটি ব্যক্তিগতভাবে অন্তত চান না বিসিবির সভাপতি।
নিজেকে নিয়ে ঢাকার এই নেতিবাচক আলোচনার উত্তাপ রাওয়ালপিন্ডিতে বসে যেন একটু উপেক্ষাই করতে চাইছেন হাথুরুসিংহে। এটা ঠিক যে জীবিকার ভবিষ্যৎ নিয়ে যখন প্রশ্ন ওঠে, তখন আসলে কেউই তা পুরোপুরি উপেক্ষা করতে পারে না।
বিশেষ করে স্বয়ং বোর্ড সভাপতির ‘ব্যক্তিগত মত’টা যখন তাঁর বিপক্ষে যাচ্ছে এবং সভাপতি সেটা প্রকাশ্যে বলেও দিচ্ছেন, তখন বাকি বার্তাটা বুঝে নিতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয় হাথুরুসিংহের। তবে দল সিরিজের মধ্যে থাকায় অন্তত সামনের চারটি দিন কোচ তাঁর মনোযোগটা রাওয়ালপিন্ডিতে চলমান দ্বিতীয় টেস্ট থেকে কোনোভাবেই সরাতে চাইছেন না। ভেতরে কোনো চিন্তা যদি থেকেও থাকে, বাহ্যত তিনি থাকতে চাইছেন পুরোপুরি পেশাদার।
খেলোয়াড়দের প্রতিও হাথুরুসিংহের একই বার্তা। তিনি থাকছেন না যাচ্ছেন, বিসিবি তাঁকে নিয়ে কী ভাবছে, ঢাকায় ফিরলে কী হবে—এসব ভাবনায় খেই না হারিয়ে সবাই খেলায় মনঃসংযোগ ধরে রাখবে, দলের প্রতি এটাই নির্দেশনা কোচের। তাঁর আশা, পাকিস্তান সিরিজ নিয়ে যেভাবে পরিকল্পনা করে গেছেন, যেভাবে পরিকল্পনা অনুযায়ী খেলা হচ্ছে; সিরিজ শেষ হওয়া পর্যন্ত সেটার মধ্যেই সবাই থাকবে। দলের প্রতি কোচের বার্তার সারমর্ম অনেকটা এ রকম, ‘আমারটা আমি বুঝব, তোমরা তোমাদের কাজ করে যাও।’
বাংলাদেশ দলের সঙ্গে নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে চাওয়াটা অবশ্য হাথুরুসিংহে এই টেস্টের আগে সংবাদ সম্মেলনেই পরিষ্কার করে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘নতুন নেতৃত্ব (বিসিবির) ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আসবে, এটা আমি বুঝি। আমি তাদের সঙ্গে কথা বলার অপেক্ষায় আছি। আমার কাজ হচ্ছে যতটা সম্ভব ভালোভাবে দলটাকে প্রস্তুত করা। আমরা কয়েক মাস ধরে কঠোর পরিশ্রম করেছি। এখনো ভিন্ন কিছু করছি না। আমাদের সব মনোযোগ পরের ম্যাচের (চলতি দ্বিতীয় টেস্ট) দিকে।’
কোচের এ–ও আশা, তাঁর সঙ্গে সামনাসামনি কথা না বলে অন্তত কোনো সিদ্ধান্ত নেবে না বিসিবি। হাথুরুসিংহের সঙ্গে বিসিবির চুক্তি আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় চ্যাম্পিয়নস ট্রফি পর্যন্ত। বিসিবি যদি তার আগেই তাঁকে বিদায় করতে চায়, সে ক্ষেত্রে সে সিদ্ধান্তের যৌক্তিক ব্যাখ্যা আশা করবেন কোচ।
অতীতে বাংলাদেশ দলের সঙ্গে কাজ করেছেন, এমন এক স্থানীয় কোচের নাম নাকি আলোচনায় আছেও। স্থানীয় কাউকে জাতীয় দলের প্রধান কোচ করার প্রশ্নে দ্বিমতও আছে বিসিবিতে।
চুক্তি অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ হিসেবে হাথুরুসিংহেকে তখন তিন মাসের বেতন দিতে হবে বিসিবিকে, আয়করসহ যা সব মিলিয়ে এক লাখ মার্কিন ডলারের ওপরে পড়বে। চ্যাম্পিয়নস ট্রফির আগে হাথুরুসিংহেকে বাদ দিতে চাইলে বিসিবি এই টাকা দিয়ে মুক্তির পথ খুঁজতেই পারে, তবে তা চুক্তি শেষ না করে বিদেশি কোচ বিদায়ে বাংলাদেশের নেতিবাচক অতীতকে আরেকটু ভারী করবে। ২০১৯ বিশ্বকাপের পর স্টিভ রোডস ও ২০২২ সালের ডিসেম্বরে রাসেল ডমিঙ্গোকেও বিদায় করা হয়েছে চুক্তি শেষ হওয়ার আগে। এ ছাড়া চুক্তি শেষ করে যাওয়া কয়েকজন কোচিং স্টাফ সদস্যও বাংলাদেশ থেকে ঠিক সন্তুষ্টচিত্তে বিদায় নিতে পারেননি।
এই ধারাবাহিকতায় হাথুরুসিংহের নামটাও যোগ হলে ভবিষ্যতে বাংলাদেশ দলের দায়িত্ব নেওয়ার আগে যেকোনো বিদেশি কোচই কয়েকবার ভাববেন। তা ছাড়া হাথুরুসিংহের বিদায়ের আলোচনা এমন এক সময়ে হচ্ছে, যখন দল ভালো খেলছে। অবশ্য তাঁকে এখনই বিদায় করলে আপৎকালীন কোচ হিসেবে স্থানীয় কারও কথাও ভাবতে পারে বোর্ড। অতীতে বাংলাদেশ দলের সঙ্গে কাজ করেছেন, এমন এক স্থানীয় কোচের নাম নাকি আলোচনায় আছেও।
স্থানীয় কাউকে জাতীয় দলের প্রধান কোচ করার প্রশ্নে দ্বিমতও আছে বিসিবিতে। কোচের কাজ তো শুধু খেলোয়াড়দের অনুশীলন করানোই নয়, মাঠ ও মাঠের বাইরে দলের সব দায়িত্বই নিতে হয় তাঁকে। বিদেশের মাঠের সিরিজ, বিশেষ করে আসন্ন চ্যাম্পিয়নস ট্রফির মতো বড় আসরে স্থানীয় কোচরা সেই চাপ কতটা নিতে পারবেন, তা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্ব আছে বোর্ডের মধ্যেই। তা ছাড়া কোচিং স্টাফের অন্য সব সদস্য বিদেশি আর প্রধান কোচ স্থানীয় হলে তাঁদের মধ্যে কাজের সমন্বয়টা ভালো হবে কি না, সেটাও দেখার বিষয়।