পাকিস্তানি ফাস্ট বোলার মোহাম্মদ আমির
পাকিস্তানি ফাস্ট বোলার মোহাম্মদ আমির

আমিরকে ফেরানোর পক্ষে নন রমিজ রাজা

গত দুই মাসে পাকিস্তান ক্রিকেটে ঘটেছে একাধিক বড় ঘটনা। তিন বছরের জন্য পিসিবি চেয়ারম্যানের পদে বসেছেন মহসিন নাকভি, শাহিন আফ্রিদির জায়গায় টি–টোয়েন্টি অধিনায়ক হয়েছেন বাবর আজম আর অবসর ভেঙে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরার ঘোষণা দিয়েছেন ইমাদ ওয়াসিম ও মোহাম্মদ আমির।

এর মধ্যে ইমাদের জাতীয় দলে ফেরার পক্ষে থাকলেও আমিরকে স্বাগত জানাতে রাজি নন রমিজ রাজা। পাকিস্তানের এই সাবেক অধিনায়ক আফ্রিদিকে সরিয়ে বাবরকে অধিনায়ক করার বিষয়টিও পিসিবি সঠিকভাবে সামাল দিতে পেরেছে বলে মনে করেন না। এর মাধ্যমে নেতৃত্ব হারানো ব্যক্তির মধ্যে স্বার্থপরতা চলে আসতে পারে বলে শঙ্কা তাঁর।

সাবেক ক্রিকেটার ও অধিনায়ক রমিজ বর্তমানে ধারাভাষ্যকার হিসেবে কাজ করছেন। মাঝে ইমরান খান প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় পিসিবি চেয়ারম্যানের দায়িত্বও পালন করেছেন। সম্প্রতি পাকিস্তানের ‘সুনো নিউজ’–এ পাকিস্তান ক্রিকেটের অতীত–বর্তমান বিষয়ে দীর্ঘ সাক্ষাৎকার দেন রমিজ। সেখানে তাঁকে ইমাদ ও আমিরের বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হয়, যাঁরা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরার ঘোষণা দেওয়ার পর পাকিস্তান দলের ফিটনেস ক্যাম্পে ডাক পেয়েছেন।

চলতি মাসে ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচের টি–টোয়েন্টি সিরিজ খেলবে পাকিস্তান। এই সিরিজে ইমাদের জাতীয় দলে ডাক পাওয়া অনেকটাই নিশ্চিত। গত নভেম্বরে আচমকা অবসর নেওয়া এই স্পিনিং অলরাউন্ডার গত মাসে পিএসএলে ভালো খেলার পর পিসিবির সঙ্গে কথা বলে ফেরার ঘোষণা দিয়েছেন।

ফিটনেসে উতরে গেলে আমিরকেও দেখা যেতে পারে, যিনি ২০২০ সালের ডিসেম্বরে তখনকার টিম ম্যানেজমেন্টের ওপর মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ এনে অবসরের ঘোষণা দিয়েছিলেন। ইমাদকে জাতীয় দলে দেখতে চাইলেও আমিরকে স্বাগত জানাতে রাজি নন রমিজ, ‘ইমাদের ব্যাপারে আমার কোনো সমস্যা নেই। সে পিএসএলে খুবই ভালো করেছে। সে বুদ্ধিমান এবং প্রতিভাবান। আমিরের ব্যাপারে আমার মতামত একদম পরিষ্কার। ওর জন্য আমার সহানুভূতি আছে, কিন্তু ক্ষমা নেই। আল্লাহ না করুক, আমার ছেলেও যদি এ ধরনের কাজে জড়ায়, তাকে আমি মেনে নেব না।’

রমিজ আমিরকে ক্ষমা করতে রাজি নন ফিক্সিংয়ের কারণে। ২০১০ সালে লর্ডস টেস্টে স্পট ফিক্সিং করে পাঁচ বছরের জন্য নিষিদ্ধ ছিলেন আমির। কয়েক মাস কাটিয়েছিলেন কারাগারেও। ক্রিকেটে সৎ বা অসৎ—এ দুইয়ের মাঝে অন্য কিছু নেই মন্তব্য করে রমিজ নিজেও ফিক্সিংয়ের ঘটনায় ভুক্তভোগী ছিলেন বলে জানান, ‘আমার মনে পড়ে এই খেলোয়াড়েরা (সালমান বাট ও মোহাম্মদ আসিফসহ) যখন ফিক্সিং করে, আমি তখন লর্ডসে ধারাভাষ্য দিচ্ছি। তাদের পরিচয়ের কারণে মানুষ আমাকে ঘৃণা করতে শুরু করল। পরের এক বছর গণমাধ্যমেও আমরা যে পরিমাণ সমালোচিত হয়েছি, আমি সেটা কখনোই ভুলব না।’

পিসিবির সাবেক চেয়ারম্যান রমিজ রাজা

আমির ও ইমাদের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরার ঘোষণার পরপর অধিনায়কত্বে বদল এসেছে পাকিস্তানে। গত নভেম্বরে বোর্ডের চাপে বাধ্য হয়ে নেতৃত্ব ছেড়েছিলেন বাবর, নতুন টি–টোয়েন্টি অধিনায়ক হয়েছিলেন শাহিন আফ্রিদি। কিন্তু মাত্র এক সিরিজ পরই আফ্রিদিকে সরিয়ে বাবরকে নেতৃত্বে ফেরানো হয়েছে। অনেকের শঙ্কা, এতে পাকিস্তান দলে গ্রুপিং বাড়বে—এ বিষয়ে কী মনে করেন প্রশ্নে রমিজ বলেন, ‘কঠিন প্রশ্ন। বিশ্বকাপ থেকে আসার পরই বাবরকে যেভাবে সরানো হয়েছিল, সেটা ঠিক ছিল না। কারণ, যে আপনাকে এত দিন সেবা দিয়েছে, পরিশ্রম করে এসেছে, তাঁকে এভাবে রাজনীতির মাধ্যমে সরিয়ে দেওয়া ঠিক হয়নি। আবার শাহিনের ক্ষেত্রে আপনি পর্যাপ্ত সময় দিলেন না। এক সিরিজের ভিত্তিকে মূল্যায়ন করা বাড়াবাড়ি হয়ে যায়। তার মানে, আপনার পরিকল্পনা সঠিক ছিল না। অধিনায়কত্ব অনেক বড় সিদ্ধান্তের ব্যাপার।’

এখন পিসিবি এবং বাবরের আফ্রিদির সঙ্গে বসে সময় নিয়ে কথা বলা দরকার মনে করেন রমিজ। এ ক্ষেত্রে নিজের অধিনায়কত্ব হারানোর পরের সময়ের স্মৃতিও তুলে ধরেছেন তিনি, ‘এখন শাহিনের সঙ্গে প্রচুর কথা বলা দরকার। আমাকে যখন অধিনায়কত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল, প্রথমত আমি ক্রিকেটই খেলতে চাইনি। দ্বিতীয়ত, আমি খুবই স্বার্থপর হয়ে গিয়েছিলাম। নিজেকে নিয়ে বেশি ভাবতে শুরু করলাম। মনে হতো, দল জাহান্নামে যাক। দল আমার কথা ভাবলে আমি দলের কথা ভাবব। তারপর আমার সঙ্গে বসা হলো। কথা বলল, দুঃখ প্রকাশও করল। সুতরাং পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করাটা গুরুত্বপূর্ণ।’