১৬ দফা দাবি নিয়ে আজ মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের বিসিবি কার্যালয়ে এসেছেন ৬৪ জেলার বিভিন্ন পর্যায়ের একদল ক্রিকেটার। বিসিবিও ক্রিকেটারদের বেশির ভাগ দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে।
ক্রিকেটাররা ঘরোয়া ক্রিকেটের নির্দিষ্ট সময়সূচি, জাতীয় ক্রিকেট লিগের প্রত্যেক বিভাগে দ্বিতীয় সারির আরেকটি দল গঠন করে লিগ আয়োজনের দাবি করেন। প্রথম বিভাগ ক্রিকেট লিগে তিন সংস্করণের লিগসহ প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় বিভাগের সেরা ৩০ জন খেলোয়াড়সহ ৯০ জন খেলোয়াড়কে বেতনের আওতায় আনার বিষয়টিও আছে দাবিদাওয়ার মধ্যে।
এ ছাড়া ঢাকা লিগের ক্লাবের সঙ্গে চুক্তি করার ক্ষেত্রে ক্লাবগুলোকে আরও পেশাদার হওয়ার কথা বলেছেন ক্রিকেটাররা। প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় বিভাগ লিগের পাশাপাশি টি-টোয়েন্টি লিগ আয়োজন, জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ ক্রিকেটের চূড়ান্ত পর্বে তিন দিনের ক্রিকেট ম্যাচ চালু করা, আম্পায়ারিংয়ের মান উন্নয়ন ও ভালো উইকেট নিশ্চিত করা, দেশের প্রত্যেক জেলায় ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি লিগ ও অনুশীলনের সুযোগ–সুবিধা নিশ্চিত করার কথাও বলেছেন ক্রিকেটাররা।
বিসিবির বেতনভুক্ত কোচরা যেন কোনো একাডেমিতে কাজ না করেন, এ দাবিও তুলেছেন। ঢাকার প্রথম বিভাগ লিগের ম্যাচ যেন অনলাইন সরাসরি সম্প্রচারের ব্যবস্থা করা হয়, ক্রিকেটার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনকে নতুন করে পুনর্গঠন ও স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দেওয়ার বিষয়টিও উল্লেখ করেছেন তাঁরা। এ ছাড়া রেজিস্টার্ড কোনো ক্রিকেটার চোটে পড়লে ক্রিকেট বোর্ড যেন তাঁদের চিকিৎসার দায়িত্ব নেয়, তৃতীয় বিভাগ কোয়ালিফায়ার যেন সর্বনিম্ন এন্ট্রি ফিতে সঠিক সময় মাঠে গড়ায় এবং ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগের প্লেয়ার্স ড্রাফট যেন সব ক্রিকেটারের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়, বলেছেন সেসব কথাও।
এ নিয়ে প্রথম বিভাগ ক্রিকেট লিগের খেলোয়াড় রিয়াজুল রিয়াদ সংবাদমাধ্যমে বলেন, ‘অনেক দিন ধরেই অনিয়ম হয়ে আসছে। যদি বিসিবি আশাবাদ ব্যক্ত করে, তাহলে আমরা আশা করছি দ্রুতই এ সমস্যার সমাধান হবে।’ প্রথম বিভাগ লিগের আরেক ক্রিকেটার রিয়াজুরের কথা, ‘আমরা বিসিবিকে প্র্যাকটিসের সুযোগ–সুবিধা বাড়ানোর কথাও বলে এসেছি। এখানে দেখেন যখন বিপিএল খেলা হয়, তখন একই একাডেমি মাঠে ছয়-সাতটা দল অনুশীলন করে। অথচ বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড চাইলে কিন্তু এমন পাঁচটা একাডেমি করতে দিতে পারে বিভিন্ন জায়গায়। যদি মাঠের সংখ্যাও বাড়ে, তাহলেও আলহামদুলিল্লাহ।’
প্রথম বিভাগ লিগের আরেক ক্রিকেটার আসাদুজ্জামান বলেন, ‘আমরা চাই কোয়াবকে নতুন করে পুনর্গঠন করা হোক। এই কোয়াব আসলে ক্রিকেটারদের অনেক কিছুই জানে না। আমাদের সঙ্গে কখনো কথাও বলেনি। আমরা যখন আমাদের সমস্যাগুলো কোয়াবকে জানিয়ে এসেছি, তারা কোনো উদ্যোগ নিত না। আমরা ৬৪ জেলার যারা এসেছি, সবার একই দাবি, কোয়াব পুনর্গঠন করা হোক।’
ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক নাজমূল আবেদীন ক্রিকেটাদের বেশির ভাগ দাবিকে যৌক্তিক মনে করেন। ক্রিকেটারদের প্রতি তাঁর কথা, ‘ক্রিকেট বোর্ড কী করলে আমার লাভ হবে বা তোমার লাভ হবে, সেটা নয়…কী করলে ক্রিকেটের লাভ হবে, এখন সেটা দেখা দরকার। সেটার জন্য যা যা করা দরকার, ক্রিকেট বোর্ড সামর্থ্য অনুযায়ী সেই জিনিসটা করবে।’
পরে যোগ করেন, ‘জেলা ক্রিকেট চালু করা, জেলা পর্যায়ে একটা উইকেট থাকা শুরু করে প্লেয়ারদের ওয়েলফেরার…প্রতিযোগিতা বাড়ানোর কথা যদি বলি, সিস্টেমেটিক্যালি সবখানে যেন ফেয়ারলি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, ট্যালেন্ট আইডেন্টিফিকেশনের জন্য সবাই যেন সমান সুযোগ পায়, এসব ব্যাপার অবশ্যই ক্রিকেট বোর্ড দেখবে। আমরাও চোখ রাখব। তোমরা একটা ব্যাপার নিশ্চিন্ত থাকতে পারো, ক্রিকেট বোর্ড তার সামর্থ্য অনুযায়ী তোমাদের পাশে থাকার চেষ্টা করবে। তোমরা ক্রিকেট খেলে যেন নিজেদের মেধাকে প্রেজেন্ট করতে পারো, নিজেদের মেধা অনুযায়ী যেন মূল্যায়ন হয় (সেটা দেখা হবে)। তোমাদের সব দাবি হয়তো এখনই পূরণ করা সম্ভব না–ও হতে পারে। তবে আমাদের ইচ্ছা থাকবে তোমরা তো বটেই, যেন ক্রিকেটও লাভবান হয়।’