একটা সময়ে বিপিএলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান মানেই ছিলেন বাপ্পি লাহিড়ী। না, এমন নয় যে প্রতি বিপিএলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানেই আসতেন ভারতের প্রয়াত এই জনপ্রিয় শিল্পী। তবে মিরপুরে ২০১২ সালের প্রথম বিপিএলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটা স্বদেশি শান আর বাংলাদেশের কুমার বিশ্বজিৎকে নিয়ে তিনি এমনভাবে মাতিয়েছিলেন যে প্রতিবারই টুর্নামেন্ট শুরুর আগে আলোচনায় চলে আসে বাপ্পি লাহিড়ীর নাম।
অথচ বিপিএলে বাপ্পি লাহিড়ীর সশরীর উপস্থিতি সেই একবারই। সেবার তিনি গেয়েছিলেন প্রথম বিপিএলের থিম সং ‘যুদ্ধ শুরু ব্যাটে-বলে, ২২ গজে আগুন জ্বলে…।’ সেই গানের বিখ্যাত হয়ে যাওয়া ‘বিপিএল কাপ’ কথাটা অবশ্য এরপর থেকে বিপিএল নিয়ে যেকোনো বিতর্কে বাড়তি ‘স্যাটায়ার–সস’ই যোগ করে আসছে।
২০১৫ বিপিএলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসেছিলেন বলিউড তারকা হৃতিক রোশন, জ্যাকুলিন ফার্নান্দেজ ও আরেক প্রয়াত সংগীতশিল্পী কেকে। একাদশ বিপিএলকে সামনে রেখেও কাল মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে সুরের মূর্ছনা ছড়িয়েছে। এবার তো আরও বড় ও জনপ্রিয় শিল্পী, পাকিস্তানের রাহাত ফতেহ আলী খান!
মঞ্চ মাতানো-মাঠ কাঁপানো শিল্পী রাহাত। কালও দর্শক-শ্রোতাদের উম্মাদনায় ভাসিয়েছেন দরাজ গলায় গাওয়া একের পর এক জনপ্রিয় সব গানে, যার শুরু দর্শকদের উদ্দেশে বাংলায় ‘আমি তোমাকে ভালোবাসি’ বলে। শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে বিপিএল তখন উপলক্ষ মাত্র, বাকিটা মিরপুরে রাহাতের রাত। তার আগে আতশবাজির যে উৎসব রাহাতের রাতটাকে আরও বর্ণাঢ্য করল, সেটা এককথায় সেরা। মিরপুরে এত ভালো আতশবাজির উৎসব আর হয়নি। অতৃপ্তি যেটুকু তা হলো, রাহাত গাননি তাঁর জনপ্রিয় ‘ওরে পিয়া’ গানটি। দর্শকদের হতাশ করে রাত ১১টার দিকে অনুষ্ঠান শেষ হয়েছে হঠাৎ করেই।
তবে ২০১২ বা ২০১৫ সালের সঙ্গে এবারের অনুষ্ঠানের বড় পার্থক্য, মিরপুরে কাল যেটা হলো, সেটা বিপিএলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান নয়। বিপিএলে খেলা শুরু হবে ৩০ ডিসেম্বর থেকে। তার এক সপ্তাহ আগে প্রায় ৩ কোটি ৪০ টাকা পারিশ্রমিকে রাহাত ফতেহ আলী আসলে কেবল একটা কনসার্টই করে গেলেন।
অবশ্য রাতে রাহাত ফতেহ আলী খান ও তাঁর দল মঞ্চ মাতাবার আগের পর্বে ‘কিছু বিপিএল’ ছিল। সাত ফ্র্যাঞ্চাইজির মালিকদের যার যার পতাকা প্রদর্শন তার অন্যতম। দেখানো হয়েছে বিপিএলের আগের আসরগুলো নিয়ে বানানো অডিও ভিজু৵য়ালও।
দেশের জনপ্রিয় ব্যান্ড দল মাইলস ছাড়াও গান গেয়েছেন সংগীতশিল্পী জেফার। পরিবেশিত হয়েছে বিপিএলের নতুন থিম সং ‘আবার এলো বিপিএল’। এবারের বিপিএলের ভাবনাতেই যেহেতু আছে জুলাই–আগস্টের আন্দোলন, তা নিয়ে অডিও ভিজু৵য়াল দেখানো হয়েছে বড় পর্দায়। মঞ্চে তোলা হয়েছে আন্দোলনে আহত ‘জুলাই যোদ্ধা’দের কয়েকজনকেও।
কিন্তু এত আয়োজনের কেন্দ্রে যে ক্রিকেট, তা বুঝতে অপেক্ষা করতে হয়েছে সন্ধ্যায় বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদের মঞ্চে ওঠা পর্যন্ত। সভাপতির দায়িত্ববোধ থেকেই কি না, ফারুক মনে করিয়ে দিলেন, এমন ঝলমলে–সুরেলা সন্ধ্যার মূলে আসলে খেলা, ‘আমরা ২০২৫–এর বিপিএলের খুব কাছাকাছি। খেলা শুরু হবে ৩০ তারিখে। তার আগে এবারের বিপিএল নিয়ে আমরা নতুন অনেক কিছু করেছি। এখন অপেক্ষা মূল ইভেন্ট খেলার জন্য।’
সংক্ষিপ্ত বক্তৃতা পর্বে শুভেচ্ছা বক্তব্য দিয়েছেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া। নতুন অনেক উদ্যোগের জন্য বিসিবিকে ধন্যবাদ জানিয়ে তাঁর আশা, মাঠের খেলাটাও ভালো হবে, ‘মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা নিজেও এর (বিপিএল) সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। আশা করি, এবারের বিপিএল নতুন বাংলাদেশের নতুন বিপিএল হিসেবে সবার কাছে উপভোগ্য হবে।’
সেটা হলেই সার্থক হবে বিপিএল। নইলে গান–বাজনা তো অলঙ্কার মাত্র। তা ছাড়া দুর্বল সাউন্ড সিস্টেমের কারণে গ্যালারি থেকে গানের সুরটাই বেশি বোঝা যাচ্ছিল, কথা তেমন নয়। মাইলসের গানের সময় দর্শকদের গলা মেলাতে হয়েছে বিখ্যাত সব গানের পরিচিত সুর শুনে। অস্পষ্ট গানের ফাঁকে রসিক এক দর্শকের মন্তব্য ছিল, ‘এর চাইতে তো শীতের রাতে দূর থেকে ভেসে আসা ওয়াজ–মাহফিলের শব্দও পরিষ্কার শুনি!’