বিসিবির পরিচালনা পর্ষদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে আহমেদ সাজ্জাদুল আলমকে। কিন্তু জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি) তাঁকে যে প্রক্রিয়ায় বিসিবির পরিচালক পদ থেকে সরাল, সেটি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এনএসসির সিদ্ধান্তে বিস্মিত সাজ্জাদুল আলম এ সিদ্ধান্তকে ক্রিকেট বোর্ডের কাজে সরকারি হস্তক্ষেপ বলে মন্তব্য করেছেন।
বিসিবিতে এনএসসি মনোনীত দুই পরিচালক ছিলেন জালাল ইউনুস ও সাজ্জাদুল আলম। ১৯ আগস্ট সকালে দুজনকেই ফোন করে বিসিবি থেকে পদত্যাগের ‘অনুরোধ’ করেন এনএসসির সচিব আমিনুল ইসলাম। জালাল ইউনুস সেদিনই তাঁর পদত্যাগপত্র ই–মেইল করে দিলেও সাজ্জাদুল আলম করেননি। তাঁর বক্তব্য ছিল, যেহেতু এনএসসি তাঁকে মনোনীত করেছে, তাঁর ব্যাপারে তারাই সিদ্ধান্ত নিয়ে তাঁকে জানাক।
এনএসসি এরপর সাজ্জাদুল আলমের সঙ্গে আর যোগাযোগ করেনি। গতকাল যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের কনফারেন্স রুমে অনুষ্ঠিত বিসিবির পরিচালনা পর্ষদের সভায়ও আমন্ত্রণ পাননি অভিজ্ঞ সংগঠক সাজ্জাদুল। এ ব্যাপারে বিসিবির প্রধান নির্বাহী নিজাম উদ্দিন চৌধুরীর ব্যাখ্যা চেয়ে ইমেইল করেছেন তিনি।
এনএসসি অবশ্য পরে এক নোটিশে সংশ্লিষ্টদের জানায়, আগের মনোনয়ন বাতিল করে বিসিবির পরিচালক হিসেবে নতুন করে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক ও সাবেক প্রধান নির্বাচক ফারুক আহমেদ এবং কোচ ও ক্রিকেট বিশ্লেষক নাজমূল আবেদীনকে। গতকালের বোর্ড সভাতেই ফারুক পরিচালকদের ভোটে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিসিবির নতুন সভাপতি নির্বাচিত হন।
এনএসসির পরিচালক বদলের নোটিশের অনুলিপি প্রাপকদের তালিকায় আহমেদ সাজ্জাদুল আলমের নাম থাকলেও এনএসসির কাছ থেকে সেটি পাননি তিনি। পেয়েছেন গতকাল সন্ধ্যার পর বিসিবির প্রধান নির্বাহীর পাঠানো এক হোয়াটসঅ্যাপ বার্তায়।
বিসিবির গঠনতন্ত্রের ১৩.৩ ধারা অনুযায়ী মৃত্যু, পদত্যাগ, মানসিক ভারসাম্যহীনতা অথবা শৃঙ্খলাজনিত শাস্তি প্রদানের পরিপ্রেক্ষিতেই কেবল একজন পরিচালকের পদ শূন্য হতে পারে। মানসিক ভারসাম্যহীনতার ক্ষেত্রে উপযুক্ত মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্ত থাকতে হবে। শৃঙ্খলাজনিত শাস্তির বিষয় থাকলে সেটিও হতে হবে সংশ্লিষ্ট বিধি অনুসারে।
সাধারণ পরিষদের সদস্য হিসেবে অযোগ্যতার ক্ষেত্রেও উল্লেখ আছে এসব শর্তেরই। এ ছাড়া দুইয়ের অধিক ক্রীড়া ফেডারেশনের কাউন্সিলর হলে বা একাধিক সংস্থা, ক্লাব, প্রতিষ্ঠান, বিভাগ অথবা শ্রেণিতে প্রতিনিধিত্ব করলেও সাধারণ পরিষদের সদস্যপদ বাতিল হতে পারে।
কিন্তু এসবের কোনোটিই আহমেদ সাজ্জাদুল আলমের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। এনএসসিও নতুন পরিচালক মনোনয়ন দেওয়ার চিঠিতে সাজ্জাদুল আলমকে বাদ দেওয়ার কোনো কারণ উল্লেখ করেনি। অথচ এসব শর্ত প্রযোজ্য না হলে কোনো পরিচালক বা কাউন্সিলরকেই বোর্ডের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগপর্যন্ত সরানো যায় না।
এ নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে সাজ্জাদুল আলম আজ মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের কাজে সরকারি হস্তক্ষেপ। তাদের এমন সিদ্ধান্তে আমি স্তম্ভিত। এটা পুরোপুরি অগ্রহণযোগ্য।’ এ ব্যাপারে জানতে এনএসসির সচিব আমিনুল ইসলামের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কারপ্রাপ্ত সংগঠক আহমেদ সাজ্জাদুল আলম তরুণ বয়স থেকেই সাংগঠনিক কাজে দক্ষ হয়ে ওঠেন। ১৯৮৩ থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত টানা ক্রিকেট বোর্ডে ছিলেন তিনি। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের কারণে মাঝের সময়ে সরে যেতে হলেও ২০০৭ সাল থেকে এই বোর্ডেও তিনি পরিচালক ছিলেন। পালন করছিলেন বিসিবির টুর্নামেন্ট কমিটির প্রধানের দায়িত্ব।