দলে ফেরা মুমিনুল হকের ৮৪ রানের লড়াকু ইনিংসের পরও মিরপুর টেস্টের প্রথম ইনিংসে ২২৭ রানেই গুটিয়ে গেছে টসে জিতে ব্যাটিংয়ে নামা বাংলাদেশ। মুমিনুল ছাড়া ৩০ রানও পেরোতে পারেননি কোনো বাংলাদেশি ব্যাটসম্যান, ১৪ রানের মধ্যে বাংলাদেশ হারায় শেষ ৫ উইকেট। কুলদীপ যাদবকে বাদ দিয়ে তিন পেসার নিয়ে নামা ভারতের বোলিং আক্রমণে সবচেয়ে সফল উমেশ যাদব ও রবিচন্দ্রন অশ্বিন, দুজনই নেন ৪টি করে উইকেট। ১২ বছর পর আরেকটি টেস্ট খেলতে নামা বাঁহাতি পেসার জয়দেব উনাদকাট নেন ২ উইকেট।
এরপর প্রথম ইনিংসে ব্যাটিং করতে নেমে ৮ ওভারে বিনা উইকেটে ১৯ রান তুলেছে ভারত। তাসকিন আহমেদের সঙ্গে আরেক প্রান্তে নিজেই আসেন সাকিব আল হাসান, দুজনই হুমকিও জাগিয়েছেন। তাসকিনের বলে লোকেশ রাহুলের বিপক্ষে নেওয়া একটি রিভিউ ব্যর্থ হয়, এরপর সাকিবের বলে ভারত অধিনায়ক বেঁচে যান রিভিউ নিয়েই। অবিচ্ছিন্ন থেকেই দিনের খেলা শেষ করেন শুবমান গিল ও রাহুল।
এর আগে সকালে টসে জিতে অনুমিতভাবেই ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন সাকিব। মিরপুরে টার্ন ও বাউন্সের চ্যালেঞ্জিং উইকেটে শুরুটা খুব একটা ভালো হয়নি, তবে নাজমুল হোসেন-জাকির হাসানের ওপেনিং জুটি টিকেছিল প্রায় সোয়া এক ঘণ্টা। দুজন ফেরেন ৪ বলের মধ্যেই। উনাদকাটের বাড়তি বাউন্সের বলে ব্যাটের বাইরের কানায় লেগে গালিতে ধরা পড়েন আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান জাকির।
পরের ওভারে অশ্বিনকে প্যাড-আপ করতে গিয়ে এলবিডব্লিউ নাজমুল। জাকির অবশ্য ফিরতে পারতেন আগেই, উমেশের বলে ডিপ ফাইন লেগে বেঁচে যান সিরাজ ক্যাচ ফেলায়।
ফর্ম খুঁজে ফেরা মুমিনুল আসেন তিন নম্বরেই, তাঁর প্রথম বাউন্ডারি শটটি ছিল দারুণ—অশ্বিনকে কাভার ড্রাইভ। পরের ওভারে উনাদকাটকে ক্লিপ করে মারেন আরেকটি। পরের চার দিয়ে দুই অঙ্কে পৌঁছান মুমিনুল, আগের ১০ ইনিংস যিনি ফিরেছিলেন এক অঙ্কেই। দ্বিতীয় সেশনে পেয়ে যান ফিফটিও।
সে সেশনে বাংলাদেশ হারায় ৩ উইকেট—অধিনায়ক সাকিবের পর ফেরেন মুশফিকুর রহিম ও লিটন দাস। মধ্যাহ্নবিরতির পর প্রথম বলেই উমেশ যাদবকে তুলে মারতে গিয়ে মিড অফে ক্যাচ তোলেন সাকিব। বিরতির আগে আক্রমণাত্মক মেজাজ দেখিয়েছিলেন, বেঁচে গিয়েছিলেন স্টাম্পিংয়ের হাত থেকেও। তবে ২০১৮ সালের পর প্রথমবার চারে আসা বাংলাদেশ অধিনায়ক ফেরেন ১৬ রান করেই।
মুমিনুল ও মুশফিকের জুটি এরপর এগিয়েছে কখনো ধীরলয়ে, কখনো র্যাপিড-ফায়ার গতিতে। মুশফিক মুখোমুখি অষ্টম বলে চার মেরেছিলেন, তবে এরপর নিজেকে রাখেন খোলসবন্দী করে। ৩৮তম ওভারে অবশ্য অশ্বিনকে মারেন টানা তিন চার, উনাদকাটের পরের ওভারে মুমিনুল মারেন আরও দুটি—সে সময়ে ১০ বলে আসে ৬টি বাউন্ডারি।
মুশফিককে ফিরতে হয় উনাদকাটের দ্বিতীয় শিকার হয়ে। অফ স্টাম্পের বাইরে লাইন ধরে রাখা বলে শরীর থেকে দূরে দাঁড়িয়ে ডিফেন্ড করতে গিয়ে আউটসাইড-এজড হন মুশফিক। মুমিনুলের সঙ্গে তাঁর জুটিতে ওঠে ৪৮ রান।
মুশফিক ফেরার পর মুমিনুল পান ফিফটির দেখা। উনাদকাটকে আপার কাটে চার মেরে গিয়েছিলেন ৪৬ রানে, পরের বলে কাট করে মারা আরেকটি চারে পূর্ণ করেন ক্যারিয়ারের ১৬তম ফিফটি, যে মাইলফলকের দেখা সাবেক বাংলাদেশ অধিনায়ক পেলেন বছরের শুরুতে মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টের পর প্রথমবার। মাঝে খেলেছেন ১১টি ইনিংস।
অন্য প্রান্তে মুমিনুলের সঙ্গে যোগ দেওয়া লিটন যে এমন উইকেটে শটই খেলবেন, তা অনুমিতই ছিল। সিরাজকে পাঞ্চ করে প্রথম চারটি মেরেছিলেন পয়েন্ট দিয়ে, ঠিক পরের বলে পুল করে মারেন ছক্কা। তবে বেশিক্ষণ টেকেননি তিনি। অশ্বিনকে ফ্লিক করতে গিয়ে শর্ট মিড উইকেটে ক্যাচ দেন ২৬ বলে ২৫ রান করেই।
শেষ সেশনের শুরুটা বেশ ধীর গতিরই হয়। মিরাজকে সঙ্গে নিয়ে সতর্কই ছিলেন মুমিনুল। তবে বাংলাদেশ টেকেনি বেশিক্ষণ। পরের ৩ উইকেট নেন উমেশ। মিরাজ শরীরের বেশ কাছ থেকে কাট করতে গিয়ে কট-বিহাইন্ড, নুরুল হন এলবিডব্লিউ। নুরুলের উইকেট ভারত পায় রিভিউ নিয়ে। তাসকিন পয়েন্টে সিরাজের হাতে ধরা পড়েন ড্রাইভ করতে গিয়ে। ৩ বলের মধ্যে মুমিনুল ও খালেদ আহমেদকে ফিরিয়ে ইনিংস শেষ করেন অশ্বিন।
একটা সময় মনে হচ্ছিল, সঙ্গীর অভাবেই না সেঞ্চুরিটা হাতছাড়া হয় মুমিনুলের! শেষ পর্যন্ত নবম ব্যাটসম্যান হিসেবে তিনি আউট হন অদ্ভুতভাবেই। অশ্বিনের অফ স্টাম্পের বাইরের ক্যারম বলটা ছেড়েই দিয়েছিলেন, তবে ভেতরের দিকে ঢুকে সেটি ছুঁয়ে যায় মুমিনুলের গ্লাভস। ফেরার পথে দর্শকেরা দাঁড়িয়ে অভিবাদনই জানান মুমিনুলকে।