সে সময় বৃষ্টিটা না নামলেই হতো, শ্রীলঙ্কা এমন ভাবতেই পারে। মোহাম্মদ নেওয়াজ মাত্রই আউট হয়েছেন, ৩০ রানের মধ্যে ৩ উইকেট হারিয়ে পাকিস্তান বেশ নড়বড়ে। আগের দিন ভারতকে যেমন চেপে ধরেছিল শ্রীলঙ্কা, এবার পাকিস্তানের অবস্থাও তেমনই করেছিল তারা। কিন্তু ওই বিরতি যেন আশীর্বাদ হয়ে এল পাকিস্তানের জন্য।
সে দফা বিরতির আগে ২৭.৪ ওভারে ৫ উইকেটে ১৩০ রান তোলা পাকিস্তান ধুঁকছিল। তারাই কিনা ৪২ ওভার শেষে ৭ উইকেটে ২৫২! ডিএলএস পদ্ধতিতে জয়ের জন্য অবশ্য শ্রীলঙ্কাকে ২৫২ রানই করতে হবে। পাকিস্তানকে এত দূর নিয়ে যাওয়ার পেছনে রিজওয়ানের ৭৩ বলে ৮৬ রানের অপরাজিত ইনিংসের সঙ্গে ইফতিখার আহমেদের ৪০ বলে ৪৭। শেষ ১০ ওভারে পাকিস্তান তুলেছে ১০২ রান।
বৃষ্টি এশিয়া কাপের পিছু ছাড়বে না, সেটি এখন জানা কথাই। কার্যত সেমিফাইনালে রূপ নেওয়া এই ম্যাচেও ব্যতিক্রম হয়নি। টস পিছিয়ে গেছে, খেলা শুরুও পিছিয়ে গেছে সোয়া দুই ঘণ্টা। প্রথম দফা ৪৫ ওভারে নেমে আসে ম্যাচ, দ্বিতীয় দফা প্রায় আধা ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর কমানো হয় আরও ৩ ওভার।
এই ম্যাচের একাদশ গতকালই ঘোষণা করেছিল পাকিস্তান, তাতে ছিলেন না ফখর জামান বা আবদুল্লাহ শফিক। সে দুজনই এলেন ওপেনিংয়ে; কারণ, চোট ও অসুস্থতার কারণে ছিটকে যান ইমাম-উল-হক ও সৌদ শাকিল। ফখর অবশ্য এবারও ভুগেছেন, ১১ বলে ৪ রানেই থামতে হয় তাঁকে প্রমোদ মাদুশানের ফুল লেংথের বলে বোল্ড হয়ে। আগের বলগুলো লেংথে করে ফখরকে দারুণ এক ফাঁদে ফেলেন এ ম্যাচ দিয়ে ফেরা মাদুশান। ২১, ৩৫ ও ১৭ রানের পর এবার পাকিস্তানের ওপেনিং জুটি ৯ রানের।
ফখর ব্যর্থ হলেও তাঁর সঙ্গী শফিক পান ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটি। বাবর আজমের সঙ্গে তাঁর দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে বেশ ইতিবাচক ছিল পাকিস্তান। সে সময় পাকিস্তান রানও তুলেছে প্রায় ৬ রান রেটে। কিন্তু বাবর ভালো শুরু পেলেও ইনিংস বড় করতে পারেননি। দুনিত ভেল্লালাগের দারুণ এক ডেলিভারিতে স্টাম্পিং হয়ে থামেন পাকিস্তান অধিনায়ক। এ নিয়ে এ বছর চতুর্থবার স্টাম্পিং হলেন বাবর, এক পঞ্জিকাবর্ষে যেটি যৌথভাবে সর্বোচ্চ।
বাবরের আউটের পর পাকিস্তান পথ হারাতে শুরু করে। পরের তিনটি জুটি মাত্র ২৭, ৮ ও ২২ রানের বেশি হয়নি। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারানোয় রানের গতিও কমে আসে বেশ খানিকটা। ফিফটির পর মাতিশা পাতিরানাকে পুল করতে গিয়ে ক্যাচ তোলেন শফিক, মোহাম্মদ হারিস একই বোলারকে দেন ফিরতি ক্যাচ। পাতিরানা ক্যাচটা নিয়েছেনও দারুণ। আর ইফতিখার আহমেদের আগে আসা মোহাম্মদ নেওয়াজ বোল্ড হন মহীশ তিকসানার বলে। এর আগেই আউট হতে পারতেন রিজওয়ান, ১১ রানে তাঁকে স্টাম্পিং করার সুযোগ মিস করেন কুশল মেন্ডিস। সেটির কতটা মূল্য দিতে হবে, সেটি তখন জানত না শ্রীলঙ্কা।
বৃষ্টি-বিরতির পর প্রথম ১৪ বলে কোনো বাউন্ডারি আসেনি। ৩১তম ওভারের প্রথম বলে ধনাঞ্জয়া ডি সিলভার ওপর চড়াও হন রিজওয়ান। এরপর বাউন্ডারি থামাতে হিমশিম খেতে হয়েছে শ্রীলঙ্কাকে। শ্রীলঙ্কার এই বোলিং আক্রমণ বেশ অনভিজ্ঞ, আগের ম্যাচে ভারতের শেষ উইকেট জুটিই বেশ ভুগিয়েছিল তাদের। রিজওয়ান-ইফতিখার যে আরও কঠিন হবে, সেটি তো জানা কথাই। দুজন ৭৮ বলে যোগ করেন ১০৮ রান।
প্রথম ৩৬ বলে ২৫ রান করেছিলেন রিজওয়ান, বাউন্ডারি ছিল মাত্র একটি। সেই রিজওয়ানই ফিফটি পূর্ণ করেন মাত্র ৪৮ বলে। ইফতিখার ৪০ বলে ৪৭ রানে থামলেও রিজওয়ান ছিলেন শেষ পর্যন্ত। ৮৬ রানের অপরাজিত ইনিংসে তিনি মারেন ৬টি চার ও ২টি ছক্কা। ইফতিখারের ইনিংসে ছিল ৪টি চার ও ২টি ছক্কা। দুজনই রানিং বিটুইন দ্য উইকেটে ছিলেন দারুণ।
রিজওয়ানের মতো জীবন পান ইফতিখারও। ২১ রানে তিকশানার বলে এলবিডব্লিউ হতে পারতেন, কিন্তু আম্পায়ার আউট দেননি, শ্রীলঙ্কাও রিভিউ নেয়নি। উল্টো চোট নিয়ে বোলিং করে গেছেন তিকশানা, স্পেল শেষ করে খোঁড়াতে খোঁড়াতে মাঠ ছাড়তে দেখা যায় তাঁকে।