তামিম ইকবালকে অধিনায়ক হিসেবে ব্যক্তিগতভাবে সাকিব আল হাসান একটা কল বা মেসেজ দিলেই এখনকার আলোচনাগুলোর জন্ম হতো না বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। সাকিবের গ্রহণযোগ্যতা এমন, তিনি কিছু বললে সেটি তামিমও ফেলতেন না বলে মনে করেন মাশরাফি।
গতকাল এক ভিডিও বার্তায় তামিম বলেন, বিশ্বকাপের দলে তাঁর না থাকার পেছনে পিঠের চোট বা এসবের কারণ নেই। বরং এর বাইরের কিছু ঘটনার প্রভাব আছে। তার মধ্যে আছে বোর্ডের শীর্ষ পর্যায়ে এক কর্মকর্তার কাছ থেকে পাওয়া মিডল অর্ডারে খেলার প্রস্তাবের কথাও। গতকাল রাতেই টেলিভিশন চ্যানেল টি স্পোর্টসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সাকিব বলেন, দলের প্রয়োজনে যে কারও যেকোনো জায়গায় খেলতে প্রস্তুত থাকা উচিত। সেটি না হলে ওই ব্যক্তি দলের আগে নিজের কথা ভাবছেন।
এসব ব্যাপারে আজ নিজের ফেসবুক পেজ থেকে একটি ভিডিও বার্তা দেন মাশরাফি। তাতে সাকিবের কথার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বলেন, ‘আমার কাছে মনে হয়, সাকিব অনেক কথা বলেছে, যেগুলোর অনেক যুক্তি আছে। আরও কিছু কথা আছে, যেগুলো বলতে চাই। সাকিব একটা জিনিস পরিষ্কারভাবে বলেছে, সেটা হচ্ছে, অধিনায়কত্ব করতে চায় না। সাকিবের সঙ্গে পুরোপুরি একমত। অধিনায়কত্ব করে অর্জনের কিছু নেই ওর এখন আর, এটি আসলে পরিষ্কার বার্তা। তারপরও তামিম ছেড়ে দেওয়ার পর সাকিবকে পুশ করা হয়েছে। বাধ্য হয়েই সাকিবকে নিতে হয়েছে। এতে তাকে সাধুবাদ জানানো উচিত।’
তবে অধিনায়ক হিসেবেই তামিমের সঙ্গে উদ্ভূত পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার দায়িত্বটা সাকিব নিতে পারতেন বলে মনে করেন মাশরাফি। ২০১৯ বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেওয়া এ পেসার বলেন, ‘সাকিব যেহেতু দলের অধিনায়ক, সে বলেছে, মাঠের বাইরে সব ঠিক করে মাঠে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। সাকিব যেহেতু অধিনায়ক হয়ে গিয়েছে, যে ঘটনাগুলো ঘটছে, (তামিমের) প্রথম ম্যাচ খেলা বা ব্যাটিং অর্ডার বা যেকোনো আলোচনা—সে ক্ষেত্রে সাকিব নিজেই ব্যক্তিগতভাবে একটা কল করে মেসেজ দিয়ে (তামিমকে) বললে, এ আলোচনার জন্ম হতো না। সেটা নেতিবাচক হলেও দুজনের মধ্যে থেকে শেষ হয়ে যেত।’
সাকিব কিছু বললে তামিম সেটি মেনে নিতেন বলেও বিশ্বাস করেন মাশরাফি, ‘সাকিবে এমনই ব্যক্তি, আমরা যখন খেলেছি বা আগে যারা খেলেছে, সবার কাছেই সাকিবের গ্রহণযোগ্যতা এতটাই বেশি, সাকিব যদি চায়, বাংলাদেশের কোনো ক্রিকেটারই সেটা ফেলবে না। সাকিব অধিনায়ক হিসেবে পারত তামিমকে একটা মেসেজ দিতে বা এক মিনিট কথা বলতে, “একটা প্ল্যান আছে, পরে বলব তোকে।” তাহলেই হতো।’
মিডল অর্ডারে তামিমকে খেলানো হবে বা আফগানিস্তানের বিপক্ষে খেলানো হবে না—এমন আলোচনা ম্যাচের আগে হতে পারে বলে মনে করেন মাশরাফি। সাকিব গতকাল রোহিত শর্মার প্রসঙ্গ টেনে বলেছিলেন, তিনিও একসময় নিচের দিকে খেললেও পরে ওপেনিংয়ে উঠে এসেছেন। মাশরাফি এর প্রেক্ষিতে বলেছেন, ‘ওপেনার সাধারণত স্পেশালিস্ট জায়গা। প্রশ্ন হচ্ছে, রোহিত শর্মার কথা। মিডল অর্ডার থেকে শুরু করে, এমএস ধোনি ২০১১–এরপর ওপেনিংয়ে আনে তাকে। ফলে রোহিত অভ্যস্ত, তামিম না। ট্যাকটিক্যালি সিদ্ধান্ত হতে পারে, (ফজলহক) ফারুকি এবং মুজিবের (মুজব উর রেহমান) বিপক্ষে সাফল্যের হার তামিমের কম। তবে আমার কাছে মনে হয়, মেকশিফট ওপেনার যারা আছে, দীর্ঘমেয়াদে চালানো যাবে কি না নিশ্চিত না।’
সাকিব ও তামিমের এভাবে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে যাওয়া ভবিষ্যতের ক্রিকেটারদের জন্য শিক্ষা বলেও মনে করেন মাশরাফি, ‘সাকিব–তামিম নিয়ে যে কথা হচ্ছে, সেটা তৃতীয় পক্ষের জন্য। তৃতীয় পক্ষ যে আসলেই ক্ষতিকারক, সেটি আবার প্রমাণিত। আশা করি, সামনে এমন কিছু হলে সেটির জন্য একটা শিক্ষা হয়ে থাকল।’