দুজনের গল্পটা ভিন্ন। ক্যারিয়ারে দুজন আছেন দুই মেরুতে। একজন প্রথমবারের মতো ভারতের টেস্ট দলের জার্সি গায়ে তোলার স্বপ্ন দেখছেন, আরেকজন সেটা ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করছেন। কারণ, ভারতের ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের টেস্ট দল থেকে বাদ পড়েছেন তিনি। বলা হচ্ছে সরফরাজ খান ও ভারতের অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান চেতেশ্বর পূজারার কথা। ভারতের এই দুই ব্যাটসম্যান ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের টেস্ট দলে না থাকায় খেপেছেন ভারতীয় কিংবদন্তি সুনীল গাভাস্কার।
একসময় ভারতের টেস্ট দলের অপরিহার্য অংশ ছিলেন পূজারা। পূজারার কাছে টেস্ট ক্রিকেটই এক অর্থে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সবকিছু ছিল! ভারতের হয়ে তিন নম্বরে ব্যাট করা পূজারা কি আসলেই ছন্দহীন ছিলেন? নাকি তিনি সত্যিই হয়েছেন ‘বলির পাঁঠা’! সেই উত্তরটা আপাতত তাঁর সাম্প্রতিক পরিসংখ্যানে খোঁজা যাক। সর্বশেষ ১০ টেস্টে ১৮ ইনিংস ব্যাট করে পূজারার ফিফটি ৫টি আর সেঞ্চুরি ১টি, যেটা বাংলাদেশের বিপক্ষে গত বছরের ডিসেম্বরে। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালেও দুই ইনিংসেই ছিলেন ব্যর্থ।
মূলত তিনে ব্যাট করা পূজারার কাছ থেকে আরও বড় ইনিংস দেখতে চায় ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্ট। এ ছাড়া তাঁর বাদ পড়ার পেছনে থাকতে পারে দক্ষিণ আফ্রিকায় তাঁর পারফরম্যান্স। মূলত ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের পরই ভারত দক্ষিণ আফ্রিকা সফর করবে। তবে সেখানে পূজারার পারফরম্যান্স একেবারেই গড়পড়তা। প্রোটিয়াদের মাটিতে খেলা ১০ টেস্টে পূজারার গড় মাত্র ২৮.১৫। তাই হয়তো ৩৫ বছর বয়সী পূজারাকে নয়, অন্য কাউকেই টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের নতুন চক্রে সুযোগ দিতে চায় ভারত।
তবে টেস্ট দল থেকে পূজারার বাদ পড়া মানতে পারছেন না গাভাস্কার। এই কিংবদন্তির মতে, পূজারাকে বলির পাঁঠা বানানো হয়েছে, ‘পূজারাকে কেন বাদ দেওয়া হলো? ব্যাটিং–ব্যর্থতার জন্য তাকে কেন বলির পাঁঠা বানানো হয়েছে? বিষয়টা আমার বোধগম্য হয়নি। অন্য যারা ব্যর্থ হয়েছে, তাদের দলে রেখে পূজারাকে কেন বাদ দেওয়া হয়েছে? সে কাউন্টি ক্রিকেট খেলছে, লাল বলের ক্রিকেটটা সে অনেক খেলেছে।’
গাভাস্কার এখানেই থামেননি। পূজারাকে নিয়ে এরপর তিনি যোগ করেন, ‘রান করতে থাকলে বর্তমানে ক্রিকেটাররা ৩৯-৪০ বছর পর্যন্ত খেলতে পারে। আমার মনে হয় না বয়স তার বাদ পড়ার কারণ হওয়া উচিত। অজিঙ্কা রাহানে ছাড়া টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে সবাই ব্যর্থ হয়েছে। কেন পূজারাকেই বাদ দেওয়া হলো, বিষয়টা নির্বাচকদের ব্যাখ্যা করতে হবে।’
অন্যদিকে এবারও টেস্ট দলে সুযোগ পেলেন না সরফরাজ। অবশ্য তাতে হয়তো তাঁর কিছু করারও নেই। তিন চাইলেও আর কীইবা করতে পারেন! ব্যাট হাতে যা করার, তার সবটাই তো করেছেন। ২০১৯-২০ ও ২০২১-২২—টানা দুই মৌসুমে রঞ্জি ট্রফিতে করেছেন ৯০০-এর বেশি করে রান। ঘরোয়া ক্রিকেটে স্যার ডন ব্র্যাডম্যানের পর সরফরাজের গড়ই সর্বোচ্চ (৭৯.৬৫)।
গাভাস্কার প্রশ্ন করেছেন, স্কোয়াডে জায়গা পেতে সরফরাজের আর কী করতে হবে, ‘সরফরাজ গত তিন মৌসুমে প্রায় ১০০ গড়ে রান করেছে। স্কোয়াডে জায়গা পেতে তার আর কী করতে হবে? সে হয়তো একাদশে জায়গা পাবে না, তাকে দলে তো রাখা যেত। তাকে বলুন, তার পারফরম্যান্সগুলোর স্বীকৃতি আছে। অন্যথায় রঞ্জি ট্রফি খেলা বন্ধ করে দিক। তাকে বলে দিন, এর কোনো দরকার নেই। শুধু আইপিএল খেলো আর নিজেকে লাল বলের ক্রিকেটের জন্য যথেষ্ট ভালো মনে করো।’