এটাই কি আসল পরীক্ষা?
‘আসল’ শব্দটা নিয়ে যদি আপনার আপত্তি থাকে, তাহলে আসলের পরিবর্তে ‘বড়’ বললে হয়তো আপত্তি থাকবে না। যাঁদের আসল বা বড় পরীক্ষা দিতে হবে, তাঁদের নামগুলো বলা যাক। এ পরীক্ষায় অংশ নেবেন লিটন দাস ও রনি তালুকদার—বাংলাদেশের দুই ওপেনার।
হ্যাঁ, আফগান বোলারদের সামলানোর পরীক্ষা তো পুরো দলকেই দিতে হবে। তবে সবচেয়ে বড় পরীক্ষাটা বাংলাদেশের এই দুই ওপেনারের। কারণ, এ জায়গাতেই তো বাংলাদেশের বড় দুশ্চিন্তা।
বলতে পারেন, দুশ্চিন্তা কিসের! গত দুটি টি-টোয়েন্টি সিরিজে তো লিটন-রনি ব্যাট দিয়ে সব দুশ্চিন্তাকে উড়িয়েই দিয়েছেন। প্রমাণ করেছেন, আপাতত ওপেনিং নিয়ে আর চিন্তা নেই। কিন্তু আসলেই কি তা–ই?
বাংলাদেশ যে ঘরের মাঠে গত দুটি টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতেছে, তার মধ্যে একটি বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। অনেকেই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৩-০ ব্যবধানের সিরিজ জয়কে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে দেশের সেরা অর্জনও বলে থাকেন। এই সেরা অর্জনের সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন দুই ওপেনার। পরের সিরিজে আয়ারল্যান্ডের বোলারদের নিয়ে তো রীতিমতো ছেলেখেলা করেছেন লিটন, রনি।
এরপরও আফগানিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজটাই বাংলাদেশের জন্য বড় পরীক্ষা। কারণ, অন্তত বাংলাদেশের কন্ডিশনে ইংল্যান্ডের চেয়ে বোলিং শক্তিতে এগিয়ে আফগানিস্তান।
মূলত ইংলিশ বোলারদের জন্য বাংলাদেশের কন্ডিশন ছিল বড় বাধা। তবে এই কন্ডিশনই আবার রশিদ খান, মুজিব উর রেহমানদের জন্য সবচেয়ে বড় সুবিধার নাম। রশিদ, মুজিব ও মোহাম্মদ নবীকে নিয়ে গড়া আফগান স্পিন আক্রমণ যেকোনো কন্ডিশনেই বাংলাদেশের জন্য মাথাব্যথার কারণ। দুই দলের আগের টি-টোয়েন্টি রেকর্ড ও সম্প্রতি শেষ হওয়া ওয়ানডে সিরিজ যার বড় প্রমাণ। এর সঙ্গে এবার টি-টোয়েন্টি সিরিজে বাংলাদেশের মাথায় রাখতে হবে তরুণ বাঁহাতি কবজির স্পিনার নূর আহমেদকেও।
শোনা গেছে, সিলেটের উইকেটে গতি থাকবে। স্পিনারদের জন্য বিশেষ কিছু থাকবে না। তবে এটা মোটেই রশিদ-মুজিবদের জন্য বাধা নয়। কারণ, কেউ-ই বলের বাঁকের ওপর পুরো নির্ভরশীল নন। ছোট ছোট বাঁকের সঙ্গে গতিবৈচিত্র্য এনে ব্যাটসম্যানের মনে বিভ্রান্তির জন্ম দেন তাঁরা। বলও করেন জোরের ওপর, যা বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের জন্য বরাবরই সমস্যার কারণ হয়েছে।
গত দুই টি-টোয়েন্টি সিরিজে বাংলাদেশ যে আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলছে, তার শুরুটা এসেছে লিটন ও রনির কাছ থেকে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে প্রথমবার একসঙ্গে ইনিংস ওপেন করতে নেমে ২১ বলে ৩৩ রানের জুটি গড়েছিলেন। জুটি বড় নয়, তবে ১৫৭ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিং করতে নামা বাংলাদেশের জন্য বেশি কার্যকর ছিল। পরের টি-টোয়েন্টিতে ব্যর্থ হলেও সিরিজের শেষ টি-টোয়েন্টিতে গড়েছিলেন ৫৫ রানের জুটি।
রনি লিটনের সেরাটা দেখা গেছে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে। প্রথম টি-টোয়েন্টিতে মাত্র ৪৩ বলে ৯১ রানের জুটি গড়েছিলেন এই দুজন। দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে এই জুটি তোলে ৫৬ বলে ১২৪ রান। এখন পর্যন্ত মোট ৬ ম্যাচে একসঙ্গে ওপেন করা লিটন-রনির জুটি এসেছে ৩২৮ রান, যা রানের হিসাবে সেরা লিটন-মোহাম্মদ নাইমের টি-টোয়েন্টি জুটির চেয়ে মাত্র ৬৮ রান কম। তবে এরা রান তুলেছে ওভারপ্রতি ৯.০৩ গড়ে, যেখানে লিটন নাঈম তুলেছে ওভারপ্রতি ৬.৩৮। আর লিটন-নাঈম বর্তমান জুটির চেয়ে বেশি খেলেছেন ১১ ইনিংস।
আফগানিস্তানের বিপক্ষেও কি এই ধারা ধরে রাখতে পারবেন লিটন-রনি?
প্রশ্নটা উঠছে। কারণ, এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ আফগানিস্তানের বিপক্ষে পাওয়ার প্লেতে রান তুলেছে ওভারপ্রতি গড়ে মাত্র ৬.০৩। দু-একটা ম্যাচ নয়, বাংলাদেশ আফগানদের বিপক্ষে খেলেছে এখন পর্যন্ত ৯টি ম্যাচ। অর্থাৎ ধারাবাহিকভাবে পাওয়ার প্লেতে ব্যর্থ হয়েছেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। শুধু বাংলাদেশ নয়, অন্য অনেক দলই পাওয়ার প্লেতে আফগানদের বিপক্ষে খোলস ছেড়ে বের হতে পারে না।
আফগানিস্তান তাদের সর্বশেষ টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলেছে পাকিস্তানের বিপক্ষে। সেই সিরিজের ৩ ম্যাচে প্রথম ৬ ওভারে আফগানিস্তানের বোলাররা তুলে নিয়েছেন ৮ উইকেট। প্রথম ম্যাচে পাকিস্তান পাওয়ার প্লেতে করেছিল ৩৯ রান, আর পরের ম্যাচে মাত্র ৩৫। দুবারই তারা খুইয়েছে ৩ উইকেট। এই দুই ম্যাচেই জয়টা আফগানদেরই হয়েছিল। বাংলাদেশের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজেও ওপেনারদের বিপদে ফেলেছিলেন আফগান বোলাররা।
এতক্ষণে বুঝে যাওয়ার কথা, কেন দুই ওপেনারের জন্য এটা আসল পরীক্ষা! আপনার ভাষায় নামটা বড় পরীক্ষাও হতে পারে।