বিশ্বকাপে ৪৪ উইকেট নিতে জহির খানের লেগেছিল ২৩ ইনিংস, জাভাগাল শ্রীনাথের ৩৩ ইনিংস। আর ১৪তম ইনিংসেই কিনা ওই দুজনকে ছাড়িয়ে বিশ্বকাপে ভারতের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি হয়ে গেলেন মোহাম্মদ শামি! মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়েতে শ্রীলঙ্কাকে ৫৫ রানে অলআউট করে দেওয়ার ম্যাচে রেকর্ডটা নিজের করে নিয়েছেন শামি। অথচ তিনি বিশ্বকাপে ভারতের প্রথম পছন্দের পেসারই ছিলেন না!
অলরাউন্ডার হার্দিক পান্ডিয়া থাকায় যশপ্রীত বুমরার সঙ্গে আরেকজন পেসার হিসেবে ভারত খেলিয়ে আসছিল মোহাম্মদ সিরাজকেই। বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচে চোট পেয়ে পান্ডিয়া বাইরে যাওয়ার পর দলে সুযোগ পান শামি। এরপর থেকে ৩ ম্যাচে তাঁর বোলিং ফিগার এমন: ৫/৫৪ (প্রতিপক্ষ নিউজিল্যান্ড), ৪/২২ (প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড), ৫/১৮ (প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কা)। এর দুটিতেই আবার ম্যাচসেরা। পান্ডিয়া ফিরলেও তাঁকে এখন আর বাদ দেওয়া সহজ হবে না মোটেও, সেটিই নিশ্চিত করে রাখলেন শামি।
এমন পারফরম্যান্সের রহস্য কী, শ্রীলঙ্কাকে গুঁড়িয়ে দেওয়ার পর শামি জানালেন, ‘নিজের সেরাটা দিয়ে চেষ্টা করছি। বরাবরের মতোই ঠিক জায়গায় বল ফেলার চেষ্টা করছি, ঠিক ছন্দটা পাওয়ার চেষ্টা করছি। বড় টুর্নামেন্ট বলে ছন্দ চলে গেলে ফিরে পাওয়া কঠিন। ফলে শুরু থেকেই লক্ষ্য থাকে ঠিক জায়গা ও লেংথে দৃষ্টি দেওয়ার। এটি কাজে দিচ্ছে, তাহলে আবার করার চেষ্টা করব না কেন? হ্যাঁ, এটি কঠিন, কিন্তু আবারও বলব, আপনার ছন্দটা ঠিক হতে হবে, যে জায়গায় বল ফেলছেন, সেটি ঠিক হতে হবে।’
ঠিক জায়গায় বল ফেললে কী হয়, সেটিও পাবেন ৩৩ বছর বয়সী পেসারের কথায়, ‘বিশেষ করে সাদা বলে ঠিক জায়গায় ফেললে আপনি পিচ থেকে মুভমেন্ট পাবেন। যেটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এমন কোনো রকেট বিজ্ঞান নয়—ছন্দ, ভালো খাবার, মুক্ত মনে থাকা। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো মানুষের ভালোবাসা। ভারতে যে সমর্থন পাই, সেটি অনেক বড় ভূমিকা রাখে।’
এমনিতে ভারতের বোলিং এ বিশ্বকাপে আছে দুর্দান্ত ফর্মে। স্বাগতিকদের বিপক্ষে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ স্কোর ২৭৩, ২০০-এর নিচে প্রতিপক্ষকে তারা অলআউট করেছে তিনবার। নিজের এমন বোলিং পারফরম্যান্সের পর বোলিং বিভাগেরই প্রশংসা শামির কণ্ঠে, ‘প্রথমে আল্লাহকে ধন্যবাদ দিতে চাই। যে কঠোর পরিশ্রম আমরা করছি, যে ছন্দ খুঁজে পেয়েছি, সেটির কারণেই আপনারা মাঠে এমন ঝড় দেখছেন। আমাদের বোলিং বিভাগ দুর্দান্ত কাজ করছে। যে ছন্দে বোলিং করছি, আমার মনে হয় না এমন কেউ আছেন, যিনি এটা উপভোগ করছেন না। আমরাও অনেক উপভোগ করছি, একসঙ্গে কাজ করছি। এর ফলই দেখতে পাচ্ছেন।’
ভারতের বোলিং যেমন ছন্দে, বিশ্বকাপে দলগতভাবেও তারা উড়ছে। টানা ৭ ম্যাচ জিতে সবার আগে সেমিফাইনালে চলে যাওয়ার পর স্বাভাবিকভাবেই খুশি অধিনায়ক রোহিত শর্মা, ‘এটিই প্রথম লক্ষ্য ছিল। কিন্তু যেভাবে সাতটি ম্যাচে আমরা খেলেছি, তা দুর্দান্ত। অনেকেরই দারুণ প্রচেষ্টা ছিল, অনেকেই এগিয়ে এসেছে।’
ভারতের সেমিফাইনালে যাওয়ার দিনে বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে যাওয়া অনেকটাই নিশ্চিত শ্রীলঙ্কার। মুম্বাইয়ে টসে জিতেও আগে ফিল্ডিং করার সাহস দেখিয়েছিলেন কুশল মেন্ডিস। কিন্তু ম্যাচ শেষে সেটিকে ভুল মনে করতে রাজি হননি শ্রীলঙ্কা অধিনায়ক, ‘এভাবে বলতে পারব না। উইকেট দেখে ধীরগতির মনে হয়েছিল, তাই বোলিং করতে চেয়েছিলাম। আমরা ভালো শুরু করলেও ক্যাচ মিস করেছি। এরপর তারা প্রথম ৬ ওভারে সত্যিই ভালো বোলিং করেছে, তাদের ফাস্ট বোলিং বিভাগকে কৃতিত্ব দিতেই হবে।’
নিউজিল্যান্ড ও বাংলাদেশের বিপক্ষে পরের দুই ম্যাচে ঘুরে দাঁড়ানোর আশার কথাও বলেছেন তিনি।