বিশ্বকাপের আগে গত জুলাইয়ে আফগানিস্তান সিরিজের মধ্যে হঠাৎ তামিম ইকবালের অবসরের সিদ্ধান্তকে আবেগপ্রবণ বলেছিলেন অনেকে। আবার ভারত বিশ্বকাপের দল থেকে তামিমের বাদ পড়ায় দেখা হচ্ছিল অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের ভূমিকা। তবে আজ সিলেটে বাংলাদেশ দলের এই দুই সিনিয়র ক্রিকেটারের সঙ্গে কথা বলে বিশ্বকাপ পারফরম্যান্স মূল্যায়নে বিসিবির বিশেষ কমিটির উপলব্ধি, দুই ধারণার কোনোটিই পুরোপুরি সঠিক নয়।
গত অক্টোবর-নভেম্বরে অনুষ্ঠিত ভারত বিশ্বকাপ থেকে বাংলাদেশ দল ফিরেছে মাত্র দুটি জয় নিয়ে, হারতে হয়েছে এমনকি নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষেও। বিশ্বকাপে এমন হতাশাজনক পারফরম্যান্সের কারণ খুঁজতে গত ২৯ নভেম্বর বিসিবি পরিচালক এনায়েত হোসেনকে প্রধান করে ৩ সদস্যের বিশেষ কমিটি গঠন করে বিসিবি, যার অন্য দুই সদস্য বিসিবির আরও দুই পরিচালক মাহবুবুল আনাম ও আকরাম খান।
বিশ্বকাপ ব্যর্থতার কারণ খুঁজতে গিয়ে বিশেষ কমিটি কথা বলেছে জাতীয় দলের কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে, ক্রিকেট পরিচালনা প্রধান জালাল ইউনুস, বিশ্বকাপ দলে থাকা ক্রিকেটার ও কোচিং স্টাফ সদস্য, নির্বাচক কমিটি এবং দলের ম্যানেজার রাবীদ ইমামের সঙ্গেও। বিশ্বকাপ দলে থাকাদের মধ্যে বাকি ছিলেন শুধু অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। নির্বাচন এবং চোটের কারণে তিনি এত দিন কমিটিকে সময় দিতে পারেননি। ওদিকে বিশ্বকাপের আগের বিতর্কিত ঘটনাপ্রবাহের কারণে সাবেক ওয়ানডে অধিনায়ক তামিমের সঙ্গেও কথা বলা প্রয়োজন মনে করেছেন কমিটির সদস্যরা। তা ছাড়া দলসংশ্লিষ্ট অন্যদের কথায়ও নাকি তাঁরা এমন কিছু পেয়েছেন, যার জন্য তামিমের বক্তব্য জানা প্রয়োজন ছিল। অবশেষে সিলেটের গ্র্যান্ড সিলেট হোটেলে আজ দুপুরে বিসিবির বিশেষ কমিটি এই দুই ক্রিকেটারের সঙ্গে আলাদা করে কথা বলেছে।
সূত্র জানিয়েছে, সাকিবের সঙ্গে প্রায় ১ ঘণ্টা ১৫ মিনিট এবং তামিমের সঙ্গে ১ ঘণ্টা ৩০ মিনিটের মতো কথা বলেছেন কমিটির সদস্যরা। গত দুই মাসে দলসংশ্লিষ্ট অন্যদের সঙ্গে কথা বলে যেসব বিষয়ে সাকিব ও তামিমের বক্তব্য জানা প্রয়োজন বলে মনে করেছে কমিটি, তার প্রায় সবই তারা জানতে চেষ্টা করেছে। তবে এমন নয় যে সব বিষয়েই এই দুই ক্রিকেটারের বক্তব্যে সন্তুষ্ট হতে পেরেছে কমিটি। বরং সাকিব-তামিম কারোরই সব বক্তব্য তারা গ্রহণযোগ্য মনে করছেন না।
অবশ্য দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তাঁদের কথায় কমিটি আস্থা রাখছে। তার একটি বিশ্বকাপের আগে তামিমের হঠাৎ অবসরের ঘোষণা। অধিনায়ক হয়েও সিরিজ চলাকালীন ওরকম সিদ্ধান্তের যে ব্যাখ্যা তামিম কাল দিয়েছেন, কমিটি তাতে সন্তুষ্ট বলেই মনে হচ্ছে। তাঁদের উপলব্ধি, নানান কারণে ওই সময়ে তামিম দলের মধ্যে নিজেকে কোণঠাসা ভাবছিলেন এবং সেটারই পরিণতি ছিল অবসর ঘোষণার সিদ্ধান্ত। তামিম অবশ্য পরদিনই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন, তবে সেটা ছিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপের পর। ওই সময়ের পরিস্থিতি বিবেচনায় তামিমের অবসরের সিদ্ধান্তকে অন্তত তাঁর দিক থেকে ‘আবেগপ্রবণ সিদ্ধান্ত’ ছিল না বলে মনে করছে বিশেষ কমিটি।
তামিমের বিশ্বকাপ দল থেকে বাদ পড়ায় অধিনায়ক সাকিব ও কোচ হাথুরুসিংহের ভূমিকা ছিল বলে গুঞ্জন দল ঘোষণার আগে থেকেই। তবে বিশেষ কমিটির কাছে সাকিব সে অভিযোগ যুক্তি দিয়েই খণ্ডন করেছেন বলে জানা গেছে। সাকিবের যুক্তি কমিটির কাছেও মোটামুটি গ্রহণযোগ্য বলেই মনে হয়েছে।
সাকিব-তামিমের বক্তব্য শোনার পর আজ সিলেটে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন কমিটির প্রধান এনায়েত হোসেন। তিনি বলেছেন, ‘আমাদের যে দায়িত্ব দিয়েছে ক্রিকেট বোর্ড, আমরা এখন তার শেষ পর্যায়ে আছি। শিগগিরই এটা (প্রতিবেদন) ক্রিকেট বোর্ডকে জমা দিয়ে দেব।’ সাকিব-তামিমের সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে তিনি বিস্তারিত বলবেন না স্বাভাবিক। তবে তাঁদের কাছে থাকা কমিটির সব প্রশ্নের উত্তর মিলেছে কি না, সে সংশয় রয়ে গেছে এনায়েত হোসেনের কথাতেই, ‘আলোচনা গতিশীল ছিল, তবে ফলপ্রসূ হয়েছে কি না, সেটা এই মুহূর্তে বলতে পারব না।’ অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তাঁর কথা, ‘শুধু সাকিব-তামিমের বিষয়ে নয়, বাংলাদেশের ক্রিকেটের সব বিষয় নিয়েই কথা হয়েছে। তাদের কাছেও আমরা পরামর্শ চেয়েছি।’ এ ছাড়া সাকিব-তামিমের ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব নিয়ে তাঁর মন্তব্য, ‘আমরা সেটা আমলে আনছি না।’
সাকিব ও তামিমের বক্তব্য জানা শেষ। বিশ্বকাপে বাজে খেলার কারণ খুঁজতে আর কারও সঙ্গে কথা বলার বাকি নেই, সেই প্রয়োজনও দেখছে না কমিটি। এখন প্রতিবেদন ও সুপারিশ তৈরি করে আগামী মাসে অনুষ্ঠেয় বিসিবির সভায় জমা দেবে তারা।