জাতীয় দলের সঙ্গে খুব বেশি দিন ধরে নেই, তবে হাইপারফরম্যান্স বিভাগের কোচ থাকায় বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের দেখে আসছেন আগে থেকেই। গত নিউজিল্যান্ড সফরেই ডেভিড হেম্প প্রথম বাংলাদেশ দলের ভারপ্রাপ্ত ব্যাটিং কোচের দায়িত্ব পান। এখন দায়িত্বটা স্থায়ীভাবেই তাঁর কাঁধে।
পরশু সেই দৃষ্টি দিয়েই ড্রেসিংরুমে বসে দেখলেন বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা প্রথম ওয়ানডে। নাজমুল হোসেনের সেঞ্চুরি ইনিংস খেলে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়া, তাঁকে দেওয়া মুশফিকুর রহিমের যোগ্য সংগত এবং বিপর্যয়ের মুখে মাহমুদউল্লাহর প্রতিরোধ গড়ে তোলা-নতুন ব্যাটিং কোচের মার্কশিটে সবাই এক শতে এক শই পাচ্ছেন। তবে তাঁর কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মানিসকতা। আরেকটু সহজ করে বললে ঠান্ডা মাথায় ক্রিকেট খেলা।
আজ চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে দলের পাঁছ-ছয়জন ক্রিকেটারকে নিয়ে ঐচ্ছিক অনুশীলনে এসেছিলেন চন্ডিকা হাথুরুসিংহেসহ কোচিং স্টাফের সদস্যরা। হেম্প সেখান থেকেই দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় বলেছেন, ‘২৩ রানে ৩ উইকেট পড়ে গিয়েছিল, পাওয়ার প্লেতে এল মাত্র ৫৫ রান। সেই মানসিক অবস্থা থেকে রানে ফেরাটা ছিল খুবই ইতিবাচক। ৬৯ এবং ১৬৫ রানের জুটি দুটি রান তাড়ার জন্য অসাধারণ ছিল। ব্যক্তিগত নৈপুণ্য অবশ্যই খুব ভালো ছিল, তবে আমাদের জন্য মানসিকতাটাই বড়। মাথা ঠান্ডা রেখে খেলায় নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখা, যেটা আমরা করতে পেরেছি।’
বাংলাদেশের বিপর্যয়ে প্রথম প্রতিরোধটা গড়ে তোলেন মাহমুদউল্লাহ। শুধু প্রতিরোধ তো নয়, পাল্টা আক্রমণেও গেছেন এই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান। ওই পরিস্থিতিতেও তাঁর অমন খেলার ধরন ভালো লেগেছে ব্যাটিং কোচের, ‘বল সুইং করছিল, শ্রীলঙ্কানরা স্টাম্প লক্ষ্য করে বল করছিল। ওরকম বিপজ্জনক বলেও সচেতনভাবে চেষ্টা করে গেছে সে।’ হেম্প মনে করেন, মাহমুদউল্লাহর এই ব্যাটিং চাপ কমিয়ে দিয়েছিল অপর প্রান্তের ব্যাটসম্যান নাজমুলের, ‘আমি মনে করি তাদের ৬৯ রানের জুটিটাই ম্যাচের গতি ঠিক করে দেয় বা বলতে পারেন যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে ম্যাচ জেতার সুযোগ করে দেয়।’
মাহমুদউল্লাহর বিদায়ের পর নাজমুলের সঙ্গী হন আরেক অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিম। অধিনায়কের সঙ্গে তিনি উইকেটে ছিলেন বাংলাদেশের ম্যাচ জেতা পর্যন্ত। ম্যাচে মুশফিকের ভূমিকাটাও বিশেষভাবে দৃষ্টি কেড়েছে ডেভিড হেম্পের, ‘ও এসেই ওর খেলাটা ধরে ফেলে, আতঙ্কিত হয়নি। উইকেটে একবার থিতু হয়ে গেলে বাউন্ডারি মারার সুযোগ আসবেই। ও সেগুলো কাজেও লাগিয়েছে। কিন্তু রান করা মানে শুধু বাউন্ডারির জন্য বসে থাকা নয়। সেও একই সঙ্গে সিঙ্গেলস নিয়ে রানের চাকাটা সচল রেখেছে।’
নাজমুলের ১২২ রানের অনবদ্য ইনিংসের সঙ্গে মুশফিকের যোগ্য সংগত মিলে বাংলাদেশ আর কোনো উইকেট না হারিয়েই পৌঁছে যায় জয়ের লক্ষ্যে। তার আগে মাহমুদউল্লাহর ওই ইনিংস, বা তারও আগে তানজিম হাসান, তাসকিন আহমেদ, শরীফুল ইসলামের দুর্দান্ত বোলিং। সব মিলিয়ে দলীয় প্রচেষ্টার যে ছবি ফুটে ওঠে, হেম্পের কাছে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ সেটাই, ‘অনেকগুলো বিষয়ই এখানে কাজ করেছে। অধিনায়কের সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়াটা ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা যেটা করার কথা বলি, সেটা করে দেখানো বা সেটাকে কাজে পরিণত করা। কাল রাতে ও সেটাই করেছে। আর শুধু এক শ করা তো নয়, ওয়ানডেতে এটা তার সর্বোচ্চ রানের ইনিংসও। কাজেই একজন খেলোয়াড় এবং দলের অধিনায়ক হিসেবেও দিনটা খুব ভালো ছিল তার জন্য।’
ডেভিড হেম্পের দৃষ্টিতে ভালো ব্যাটিংয়ের মৌলিক সূত্র-নিজেদের ওপর আস্থা রাখা। নিজের সামর্থ্যের সঠিক মূল্যায়ন করে শক্তির জায়গাটা কাজে লাগিয়ে খেলা। রান করতে হবে, এটা সবাই জানে। হেম্পের কাছে গুরুত্বপূর্ণ, রান বের করে নেওয়ার উপযুক্ত সময়টা ধরতে পারা। ‘যতক্ষণ আমরা এ কাজগুলো করতে পারব, আশা করি, আমরা এগিয়ে যেতে থাকব’—বলেছেন ব্যাটিং কোচ।