সেমিফাইনালে ভারতের ম্যাচটা দেখার জন্য উদ্গ্রীব হয়ে ছিলাম। ভারত যেভাবে এবারের বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে জায়গা করে নিল, সেই দাপুটে প্রতিচ্ছবি কি ফাইনালের মঞ্চেও দেখতে পাব?
মনের মধ্যে এই প্রশ্নটা ঘুরপাক খাচ্ছিল। অনেক দলই লিগ পর্বে আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেললেও নকআউটে এসে চরিত্র বদলে ফেলে। আবার অনেক দলকে দেখেছি নকআউটে এসে একটু সাবধানী হয়, রয়েসয়ে খেলে। ভারত সব ধারণা ভুল প্রমাণ করেছে। এত দিন যে ক্রিকেট খেলেছে, তার চেয়েও আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলে গতকাল মুম্বাইয়ে তারা ৩৯৭ রান করেছে। ভারতের আত্মবিশ্বাস কোন পর্যায়ে আছে, তা তো এতেই স্পষ্ট।
রোহিতদের হয়তো এমন পরিকল্পনাই ছিল। রান করে দলটাকে এমন জায়গায় নিয়ে যাবে, যেখানে নিউজিল্যান্ডের আর কোনো সুযোগই থাকবে না। শেষ পর্যন্ত তাই হয়েছে। নিউজিল্যান্ড অনেক ভালো খেলেও করেছে ৩২৭ রান। ৭০ রানের বড় জয়ের মঞ্চটা যিনি গড়েছেন, সেই অধিনায়ক রোহিত শর্মার ইনিংসের কথা আলাদা করে বলতেই হয়। তিনি মাত্র ৪৭ রান করেছেন, কিন্তু যে গতিতে করেছেন, তা দলের ইনিংসেরই গতিপথ নির্ধারণ করে দিয়েছে, মিডল অর্ডারের বাকিদের কাজটা সহজ করে দিয়েছে। নিউজিল্যান্ডের বোলিং পরিকল্পনাও ভেস্তে গেছে তাতে।
শুবমান গিল শুরুতে সময় নিলেও পরে রোহিতের দেখানো পথেই হেঁটেছেন। শ্রেয়াস আইয়ারও রানের গতি ধরে রাখলেন, থিতু হওয়ার পর তা বাড়িয়েও নিলেন। চমৎকার এক শতক করে এমন গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে নিজের ছাপ রাখলেন। ভারতীয় ব্যাটিং রাজত্বে যিনি মধ্যমণি, সেই বিরাট কোহলির কথা না বললেই নয়। শচীনের শতকের অর্ধশতর রেকর্ড স্পর্শ করার সুযোগ হাতছানি দিচ্ছিল কোহলিকে। কাল শচীনের উপস্থিতিতে তাঁরই ঘরের মাঠে সেই রেকর্ড স্পর্শ করলেন কোহলি। এটি নিশ্চিতভাবেই ক্রিকেটের ‘ভেরি ভেরি স্পেশাল’ মুহূর্তগুলোর একটি। দলের অন্যদের তুলনায় তিনি একটু ধীরগতিতে (১০৩ স্ট্রাইক রেট) খেললেও তা ভারতের ইনিংসটাকে আগলে রাখেন। শ্রেয়াস এবং শেষের দিকে লোকেশ রাহুল তা কাজে লাগিয়েছেন বিস্ফোরক ব্যাটিংয়ে।
এমন বড় লক্ষ্যে যখন কোনো দল খেলতে নামে, তখন অনেক সময় দলগুলোকে পরিকল্পনা থেকে সরে যেতে দেখি। নিউজিল্যান্ড চূড়ান্ত পেশাদার দল বলেই হয়তো তা হয়নি। দ্রুত দুই ওপেনারকে হারালেও যেভাবে কেইন উইলিয়ামসন ও ড্যারিল মিচেল জুটিটা গড়লেন, তাতে বোঝা যায় তাঁরা মানসিকভাবে কতটা গোছানো। একটা বিশাল লক্ষ্যে চোখ রেখে চাপের মধ্যেও যে পরিকল্পনা করা যায় এবং তা বাস্তবায়ন করা যায়, ওই জুটিই সে বার্তা দেয়। দর্শক হিসেবে হয়তো মাঝের ওভারে তাদের মেপে খেলাটাকে অযৌক্তিক মনে হচ্ছিল। কিন্তু তাদের ব্যাটিংয়ের কারণে রোহিত শর্মার চোখেমুখে দুশ্চিন্তার ছাপ দেখা যাচ্ছিল।
কিন্তু বিশ্বকাপজুড়ে যা দেখেছি, কালও তাই দেখলাম। ভারত যখন বিপদে, তখনই মোহাম্মদ শামির একটি স্পেল বদলে দেয় ম্যাচের চিত্রপট। ওপরের সারির ৫ ব্যাটসম্যানকে আউট করার পর শেষের দিকে আরও ২ উইকেট নিয়ে ম্যাচের নায়ক বনে গেলেন। সেটা না হলে ভারত কত সহজে জিততে পারত, সে প্রশ্ন থেকেই যায়। তাঁর ৭ উইকেট এটাই প্রমাণ করে, ভারতের সেরা বোলার তিনিই, হয়তো বিশ্বকাপেরও।
নাজমূল আবেদীন, ক্রিকেট বিশ্লেষক ও কোচ