স্ত্রী ও মেয়ের সঙ্গে পাকিস্তানের পেসার হাসান আলী
স্ত্রী ও মেয়ের সঙ্গে পাকিস্তানের পেসার হাসান আলী

বিশ্বকাপে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ যেভাবে মিলিয়ে দেবে নানা-নাতনিকে

লিয়াকত খান ভারতের হরিয়ানার নুহ জেলার অবসরপ্রাপ্ত ব্লক ডেভেলপমেন্ট কর্মকর্তা। বিশ্বকাপে ১৪ অক্টোবর আহমেদাবাদে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচটি দেখতে তাঁর আর সইছে না। কারণটা আর দশজন সমর্থকের মতো শুধু ক্রিকেটীয় নয়। ৬৩ বছর বয়সী এই ভদ্রলোক একজন নানাও। আর নানাদের কাজ কী—সারাক্ষণ নাতি-নাতনিকে নিয়ে মশগুল থাকা।

লিয়াকতের দুর্ভাগ্য, নাতনির বয়স দুই বছর হয়ে গেলেও এখনো তাঁর মুখটা দেখা হয়নি, কোলে নিতে পারেননি। ভারত-পাকিস্তান ম্যাচে ঘুচবে সেই অপেক্ষা। লিয়াকত খান এই ম্যাচ উপলক্ষে প্রথমবারের মতো কোলে নেবেন তাঁর নাতনিকে।

নাতনির পরিচয়টা একটু আলাদা করে দিতেই হয়। জাতিতে ভারতীয় লিয়াকতের মেয়ের নাম সামিয়া। ২০১৯ সালে দুবাইয়ে পাকিস্তানের পেসার হাসান আলীকে বিয়ে করেন সামিয়া। সে বিয়ের পর সামিয়ার সীমান্ত পাড়ি দিয়ে আর ভারতে আসা হয়নি। সে কারণে নাতনির মুখটাও দেখতে পারেননি লিয়াকত খান। বিশ্বকাপ সে সুযোগ করে দিচ্ছে। নুহ জেলার অধিবাসী লিয়াকত ভারতের সংবাদমাধ্যম ‘ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’কে বলেছেন, ‘২০২১ সালে মেয়ের প্রথম সন্তান জন্মদানের সময় আমার স্ত্রী পাকিস্তানে গিয়েছিল। আশা করি, আহমেদাবাদে আমাদের আবার দেখা হবে। নাতনিকে কোলে নিতে আর তর সইছে না।’

২০১৯ সালে সামিয়াকে বিয়ে করেন হাসান আলী

তবে কিছুদিন আগেও নানা-নাতনির দেখা হওয়ার সম্ভাবনা ছিল না। রাজনৈতিক কারণে ভারতে গিয়ে বিশ্বকাপ খেলতে আপত্তি জানিয়েছিল পাকিস্তান। সে জটিলতার অবসান ঘটলেও আরেকটি বড় সমস্যা ছিল। পাকিস্তানের বিশ্বকাপ দলে হাসান আলীর জায়গা নিশ্চিত ছিল না মোটেও। এশিয়া কাপে নাসিম শাহ চোট পাওয়ার পর তাঁর জায়গায় বিশ্বকাপ দলে আসেন হাসান।

হাসানের সঙ্গে মেয়ের পরিচয় থেকে বিয়ে কীভাবে হলো, সেসব বলতে গিয়ে ইসলামি কবি, দার্শনিক ও আইনজ্ঞ রুমির সাহচর্য নিয়েছেন লিয়াকত, ‘কলেজে রুমি পড়তাম। তার একটি কথার ওপর ভর করে জীবনটা কাটিয়েছি—“মানুষের কথা নয়, হৃদয়ের দাবি শোনো”। এমিরেটস এয়ারলাইনসে ফ্লাইট ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করত আমার মেয়ে। এই কাজে থাকতে দুবাইয়ে হাসানের সঙ্গে পরিচয় থেকে বন্ধুত্ব হয়। সে আমাকে তার (হাসান) কথা বলেছে। মেয়ের সিদ্ধান্ত নিয়ে কখনোই আমার মনে সন্দেহের উদ্রেক হয়নি।’

লিয়াকত এরপর যুক্তি দেন, ‘যদি আমার সিদ্ধান্ত মেয়ের ওপর চাপিয়ে দিতেই হয়, তাহলে তাকে লেখাপড়া শেখালাম কেন? সে শিক্ষিত ও স্বাধীন। লোকজন পেছনে কী বলছে তা পাত্তা দেয় কে! তাকে বলেছি, সুখে থাকতে পারলে কাকে বিয়ে করছ, সেটা কোনো সমস্যা নয়। পাকিস্তানে আমাদেরও আত্মীয়স্বজন আছে। দেশভাগের সময় চলে গেছে। হাসান দয়ালু ও ভালো মনের মানুষ।’

১৪ অক্টোবর আহমেদাবাদে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচে লিয়াকতকে কিন্তু সমস্যায় পড়তে হবে। নিজে ভারতীয় আর জামাই পাকিস্তানি, যে কিনা আবার পাকিস্তান দলেরও সদস্য—লিয়াকত তাহলে সমর্থন দেবেন কোন দলকে? লিয়াকত খানের কাছে উত্তর যেন প্রস্তুতই ছিল। কোনো দেশের নাম না নিলেও কথায় বোঝা যায় ১৪ অক্টোবর কোন দলকে সমর্থন দেবেন লিয়াকত খান, ‘আমি সুনীল গাভাস্কার, কপিল দেব, শচীন টেন্ডুলকার, মোহাম্মদ আজহারউদ্দিনকে দেখেছি। তবে আমি বিরাট কোহলির ভক্ত। আমি বিরাট কোহলিকে ভালোবাসি।’

বিশ্বকাপে দলে বদলি হয়ে এসে ভালো করতে চান হাসান আলী

তাঁর পরের কথায় বোঝা যায়, তিনি আসলে ভারতের কত বড় সমর্থক, ‘এই যুগে কোহলির চেয়ে ভালো কেউ নেই। হ্যাঁ, ফর্মে উত্থান-পতন আছে, এখন হয়তো সেরা ফর্মেও নেই। কিন্তু আমার মনে হয়, কোহলি এই বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি রান করবে। হাসানের সঙ্গে দেখা হলে বলব, আমাদের দলের (ভারত) খেলোয়াড়দের সঙ্গে ছবি তুলে দিতে। কোহলির সঙ্গে ছবি তুলতে চাই। রাহুল দ্রাবিড়কেও (ভারতের কোচ) শুভকামনা জানাতে চাই।’

ভারত-পাকিস্তানের রাজনৈতিক সমস্যা নিয়েও ভাবেন লিয়াকত খান। জানিয়েছেন, এমন কোনো দিন নেই যেদিন তিনি দুই প্রতিবেশী দেশের রাজনৈতিক সমস্যার সমাধানের জন্য প্রার্থনা করেন না! তাঁর ভাষায়, ‘আমরা যেন ভাই-ভাই হিসেবে থাকতে পারি, সে জন্য ভারত-পাকিস্তানের সমস্যা সমাধানে প্রতিদিনই সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করি।’

লিয়াকতের সে প্রার্থনার পেছনে তো আছে মেয়ে আর নাতনিকে আরও নিয়মিত কাছে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষাও!