মিচেল মার্শ, ক্যামেরন গ্রিন, মার্কাস হ্যারিস, ক্যামেরন ব্যানক্রফট, ম্যাথু রেনশ—যে কেউ নিতে পারেন ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নারের জায়গা। এই পাঁচজনের মধ্যে হ্যারিস, ব্যানক্রফট, রেনশ ওপেনার। গ্রিন ও মার্শ মূলত মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান। তাঁদের ওপরে আনার কথা ভাবা হচ্ছে দলের সমন্বয়ের কথা ভেবে। কারণ, তাঁদের কেউ ওপেনিংয়ে এলে দলের বোলিং বিকল্প বেড়ে যাবে।
অস্ট্রেলিয়ান কিংবদন্তি মাইক হাসি অবশ্য ওয়ার্নারের জায়গায় চেয়েছিলেন প্রথাগত ওপেনারকেই। হাসির সঙ্গে একমত আরও অনেক সাবেক ক্রিকেটার। তবে অস্ট্রেলিয়ার অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার শেন ওয়াটসন মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান গ্রিনের ওপর ভরসা রাখছেন। তাঁর দাবি, ওপেনিংয়ে সফল হওয়ার সব উপকরণই আছে গ্রিনের।
ওয়াটসন নিজেও গ্রিনের মতো পেস বোলিং অলরাউন্ডার ছিলেন। মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান হয়েও দলের প্রয়োজনে ভূমিকা বদলে ওপেনিংয়ে ব্যাট করেছেন। সফলও বলতে হবে। ওপেন করা ২৫ টেস্টে তাঁর ব্যাটিং গড় ৪১.০৫। গ্রিন ওপেনার হিসেবে সফল হতে পারবেন কি না, সেই প্রসঙ্গে ওয়াটসনের চেয়ে ভালো কেই–বা বলতে পারবেন।
অস্ট্রেলিয়ার নতুন টেস্ট ওপেনার হিসেবে সবচেয়ে যোগ্য কে হতে পারেন, ইএসপিএন ক্রিকইনফোকে সেই প্রসঙ্গে ওয়াটসন বলেছেন, ‘গ্রিন পারবে, এ নিয়ে আমার মনে কোনো সন্দেহ নেই। অস্ট্রেলিয়ার ক্যামেরন গ্রিনকে দলে নেওয়া দরকার, আর যেখানে এ মুহূর্তে তাঁর সুযোগ আছে, সেটা হলো ওপেনিং। ওর বোলিংটাকে ঠিকমতো কাজে লাগাতে হবে, যেভাবে আমি ওপেনিং করার সময়ে দল আমাকে কাজে লাগিয়েছে। তবে ওর অবশ্যই সামর্থ্য আছে, রান করার যোগ্যতা, ওপেনিং ব্যাটসম্যান হিসেবে সুযোগের সর্বোচ্চটুকু নেওয়ার সামর্থ্য নিশ্চিতভাবেই আছে। নিজের খেলার পরিকল্পনা বুঝতে হয়তো একটি বা দুটি ম্যাচ লাগতে পারে। কিন্তু ওর অবশ্যই সামর্থ্য আছে, সুযোগের সর্বোচ্চ ব্যবহারের মানসিকতা আছে।’
কয়েক দিন আগে হাসি বলেছিলেন, তিনি এমন কাউকেই দেখতে চান, যাঁর ওপেনিংয়ে খেলার অভিজ্ঞতা আছে। তিনি বলেছিলেন, ‘ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, আমি যদি নির্বাচন করতাম, প্রথাগত ও উপযুক্ত ওপেনার নিতাম। এমন একজন যে এই কাজ লম্বা সময়ের জন্য করেছে। কারণ, আপনি যদি প্রথম শ্রেণির ক্যারিয়ারে কাজটা তেমন না করেন, তাহলে টপ অর্ডারে ব্যাটিং করা কঠিন হয়ে যাবে।’
৩৬ টেস্ট ইনিংসের ক্যারিয়ারে কখনই ওপেনিং করেননি গ্রিন। এমনকি ৬–এর ওপরেই ব্যাটিং করেননি। ওপেনার হিসেবে খেলা হয়নি প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটেও। যদিও টি-টোয়েন্টিতে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ওপেন করেছেন এই অলরাউন্ডার।
ওয়াটসনও ২০০৯ সালে অনেকটা একই পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে গেছেন, যখন দলে ফিরতে ওপেনিং ছাড়া তাঁর সামনে কোনো বিকল্প ছিল না। তিনি সেটা সফলতার সঙ্গেই করেছেন। ওপেনার হিসেবে সুযোগের পরের দুই বছর ৪৫ ইনিংসে করেছেন ১৭টি অর্ধশতক ও ২টি শতক।
ওয়াটসন বিশ্বাস করেন না, জাতীয় দলে ওপেনিং করতে হলে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটেও ওপেন করার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। তিনি আরও বলেছেন, ‘লোয়ার অর্ডারেও যদি আপনি রান করেন, আপনি নতুন বল মাঝেমধ্যে খেলবেন, হতে পারে সেটা উইকেটে দ্রুত এসে কিংবা দ্বিতীয় নতুন বলে। সুতরাং আপনি নতুন বলে ওপেনিং করার জন্য প্রস্তুতই থাকেন। আমরা এটা একাধিকবার দেখেছি। উজি (উসমান খাজা) ও সাইমন ক্যাটিচ এর বড় উদাহরণ।’
ওপেনার ওয়াটসনকে সঠিক সময়ে বোলিংয়ে আনার দায়িত্ব পালন করেছেন তখনকার অধিনায়ক রিকি পন্টিং। আর গ্রিনের বেলায় ওয়াটসন দায়িত্বটা দিচ্ছেন বর্তমান অধিনায়ক প্যাট কামিন্সকে, ‘(ওপেনিং) এর ফলে টেস্ট ম্যাচে অনেক সময় আমি অনেক ওভার কম করেছি। কিন্তু আমি দিনে ১০ ওভার বোলিং করতে পছন্দ করতাম। কিন্তু সে (পন্টিং) আমার জন্য যতটা প্রয়োজন সবটাই করত, প্রতিপক্ষের শেষের দিকের ব্যাটসম্যানদের আউট করার সময়ে আমাকে বোলিং দিত না। ওপেনিংয়ে ব্যাটিংয়ে নামার সময় বেশি ক্লান্ত যাতে না হই, সেই সুযোগটা দিত।’
অস্ট্রেলিয়া শেষ পর্যন্ত কাকে সুযোগ দেয়, সেটা এ মাসেই দেখা যাবে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়ার প্রথম টেস্ট ১৭ জানুয়ারি।