কার্টিস ক্যাম্ফারময় এক ম্যাচ! ব্যাট হাতে ৯ বলে অপরাজিত ২৯, বল হাতে ২০ রানে ৪ উইকেট আর ফিল্ডার হিসেবে ৪টি ক্যাচ নিয়ে চট্টগ্রামকে জয় এনে দিয়েছেন আয়ারল্যান্ডের এই অলরাউন্ডার। ফরচুন বরিশালের বিপক্ষে শুভাগত হোমের দলের জয় ১০ রানে। আগে ব্যাট করে আভিস্কা ফার্নান্ডোর ৫০ বলে ৯১ রানের ইনিংস ও ক্যাম্ফারের ক্যামিওতে চট্টগ্রাম তুলেছে ১৯৩ রান। রান তাড়া করতে নেমে তামিম ইকবালের দল বরিশাল ২০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে তুলেছে ১৮৩ রান। ৪ ম্যাচে চট্টগ্রামের জয় এখন ৩টি, সমান ম্যাচে বরিশালের ১টি।
১৯৪ রানের লক্ষ্যে যেভাবে শুরু করার দরকার ছিল, সেভাবেই শুরুটা হয় বরিশালের। আভিস্কার ক্যাচ ছাড়া আহমেদ শেহজাদই ছিলেন এর নেতৃত্বে। প্রথম ৫ ওভারে বরিশাল তোলে কোনো উইকেট না হারিয়ে ৫০ রান। রানটা আরও বেশি হতে পারত। তবে শেহজাদের মতো অধিনায়ক তামিম ইকবাল হাত খুলে খেলতে পারেননি। প্রথম ৫ ওভারে শেহজাদ ১৫ বল খেলে রান করেন ৩৫, আর তামিম ১৫ বলে ১৩।
ইনিংসের ষষ্ঠ ওভারে ১৭ বলে ৩৯ রান করে বিলাল খানের বলে আউট হন শেহজাদ। ইনিংসের ১১তম ওভারে ৩০ বলে ৩৩ রান করে তামিম আউট হওয়ার পর সেই ওভারেই ১৬ বলে ১৭ রান করে আউট হন সৌম্য সরকার। ব্যাট হাতে ঝড় তোলা ক্যাম্ফার বল হাতে এক ওভারেই ফেরান তামিম-সৌম্যকে। এরপর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও ইয়ানিক ক্যারিয়াকেও ইনিংসের ১৩তম ওভারে আউট করেন এই অলরাউন্ডার।
শেষ ৫ ওভারে বরিশালের রান প্রয়োজন ছিল ৭০। কাজটা কঠিন, তবে মেহেদী হাসান মিরাজ বরিশালকে আশা দেখিয়েছিলেন। ইনিংসের ১৬তম ওভারে মুশফিকের সঙ্গে ১৫ রান নেওয়ার পর ইনিংসের ১৭তম ওভারে নেন ৯ রান। ১৬ বলে ৩৫ রান করে ইনিংসের ১৮তম ওভারে মিরাজ আউট হলে বরিশাল ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়ে, সেটা ক্রিজে মুশফিকুর রহিম থাকার পরও। বাংলাদেশের অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যান ব্যাট হাতে দলের চাহিদা মেটাতে পারেননি। ১৯তম ওভারে আউট হয়েছেন ২২ বলে ২৩ রান করে। শেষ ওভারে বরিশালের দরকার ছিল ২২ রান। আব্বাস আফ্রিদি ও দুনিত ভেল্লালাগে তুলতে পেরেছিলেন ১১ রান।
এর আগে নিজেদের ইনিংসের শেষ ৫ ওভারেই মূলত লক্ষ্যটা বরিশালের ধরাছোঁয়ার বাইরে নিয়ে যায় চট্টগ্রাম। ২০, ১৫, ১৪, ১৮ ও ১৭—ইনিংসের শেষ ৫ ওভারে চট্টগ্রাম এভাবেই রান তুলেছে, যা এখন পর্যন্ত এবারের টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ। ১৫ ওভারে ১০৯ রান করা চট্টগ্রাম ইনিংস শেষ করে ৪ উইকেটে ১৯৩ রান নিয়ে। বরিশালের বোলারদের ওপর এই ঝড়টা চালিয়েছেন আভিস্কা ও ক্যাম্ফার।
চট্টগ্রামের ওপেনার আভিস্কা আজ শুরু থেকেই মূলত চট্টগ্রামের ইনিংস টেনেছেন। ইনিংসের প্রথম তিন ওভারের মধ্যে তানজিদ হাসান ও ৩ নম্বরে ব্যাটিংয়ে নামা ইমরানুজ্জমানকে হারানোর পর তিনি জুটি গড়েন শাহাদত হোসেনের সঙ্গে। ৫৫ বলে ৭০ রানের এই জুটি ভাঙে ২৯ বলে ৩১ রান করে শাহাদত ইয়ানিক ক্যারিয়ার বলে আউট হলে। শাহাদতের বিদায়ের পর আভিস্কা–নজিবউল্লাহ জাদরানের জুটি ভাঙেন কামরুল ইসলাম।
৩৮ বলে ৬৮ রানের এই জুটিতে নজিবউল্লাহ আজ আভিস্কাকাকে শুধু সঙ্গ দিয়ে গেছেন। এই জুটিতে ১৯ বলে ৪৭ রানই এসেছে লঙ্কান ওপেনারের ব্যাট থেকে। নজিবউল্লাহ করেছেন ১৯ বলে ১৮। ক্যাম্ফারের সঙ্গে জুটিতে আবার আভিস্কা ছিলেন ‘দর্শক’–এর ভূমিকায়। ইনিংসের ১৯তম ওভারে নেমে ক্যাম্ফার ৯ বলে খেলেন অপরাজিত ২৯ রানের ইনিংস।
এবারের বিপিএলে প্রথম শতকের সুযোগ ছিল আভিস্কার সামনে। শেষ দুই ওভারে তিন অঙ্কের ঘরে পৌঁছাতে তাঁর প্রয়োজন ছিল ১৪ রান। তবে শেষ দুই ওভারে এই লঙ্কান স্ট্রাইক পেয়েছেন মাত্র ২ বল। তাতে ৪০ বলে ৫০ করা আভিস্কা অপরাজিত থাকেন ৫০ বলে ৯১ রানে। আভিস্কার এমন দুর্দান্ত ইনিংসে অবশ্য বরিশালের ফিল্ডারদেরও অবদান আছে। তাইজুল ইসলামের বলে ব্যক্তিগত ৩০ রানে আভিস্কার ক্যাচ মিস করেন আহমেদ শেহজাদ। ৪ ওভারে ২৬ রান দিয়ে ২ উইকেট নিয়েছেন তাইজুল।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স: ২০ ওভারে ১৯৩/৪ (তানজিদ ১২, আভিস্কা ৯১*, ইমরানউজ্জামান ৪, শাহাদাত ৩১, নজিবউল্লাহ ১৮, ক্যাম্ফার ২৯*; তাইজুল ৪-০-২৬-২, ভেল্লালাগে ৪-০-৪৭-০, আব্বাস ৪-০-৪৩-০, কামরুল ৪-০-৪৩-১, ক্যারিয়া ৪-০-৩৩-১)
ফরচুন বরিশাল: ২০ ওভারে ১৮৩/৭ (তামিম ৩৩, শেহজাদ ৩৯, সৌম্য ১৭, মুশফিক ২৩, মাহমুদউল্লাহ ৩, ক্যারিয়া ৪, মিরাজ ৩৫, আফ্রিদি ১১*, ভেল্লালাগে ১০*; শুভাগত ৩-০-৩৬-০, আল আমিন ৪-০-৪৫-১, শহিদুল ৩-০-২৩-০, বিলাল ৪-০-৩৬-২, নিহাদউজ্জামান ৩-০-২৩-০, ক্যাম্ফার ৩-০-২০-৪)
ফল: চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স ১০ রানে জয়ী
ম্যাচসেরা: কার্টিস ক্যাম্ফার