অস্ট্রেলিয়ায় বোর্ডার–গাভাস্কার ট্রফিতে রোহিত শর্মার দল শুধু প্যাট কামিন্সদের বিপক্ষেই লড়াই করছে না, সমান্তরালে লড়াই চলছে ভারত দল ও অস্ট্রেলিয়ার সংবাদমাধ্যমের মধ্যেও। যে লড়াই সৌহার্দ্য ছাড়িয়ে এখন প্রায় তিক্ততায় রূপ নিয়েছে। সর্বশেষ, আজ অস্ট্রেলিয়ার সাংবাদিকদের সঙ্গে পূর্বনির্ধারিত একটি ‘প্রেস ম্যাচ’ বয়কট করেছে ভারত।
মেলবোর্নের জাংশন ওভালে দুই দেশের সংবাদকর্মীদের নিয়ে একটি টি–টোয়েন্টি ম্যাচের আয়োজন করেছিল ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া (সিএ)। পাঁচ টেস্টের সিরিজ খেলতে ভারত ক্রিকেট দল অস্ট্রেলিয়ায় পা রেখেছে নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে। সিডনি টেস্টের মধ্য দিয়ে যা আগামী ৭ জানুয়ারি শেষ হওয়ার কথা। প্রায় দুই মাসের এ সিরিজে সাংবাদিকদের ব্যস্ততায় কিছুটা ভিন্নতা আনতে এবং সৌহাদ্যস্বরূপ এমন উদ্যোগ নিয়েছিল সিএ।
তবে অস্ট্রেলিয়ায় কোনো দল সফরে গেলে, সফররত দেশটির সাংবাদিক কিংবা সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ান সংবাদমাধ্যমের লেগে যাওয়ার ইতিহাস নতুন নয়। অতীতেও এমন ঘটনা ঘটেছে।
ওয়েস্ট অস্ট্রেলিয়ানের খবরে বলা হয়, দুই দেশের সংবাদকর্মীদের মধ্যে ম্যাচটি হওয়ার কথা স্থানীয় সময় রোববার বিকেলে। কিন্তু ভারত ক্রিকেট দলের মিডিয়া ম্যানেজার ম্যাচটি খেলতে অস্বীকৃতি জানান। পরে সফরকারী ভারতীয় সাংবাদিকদের কয়েকজনও ম্যাচ থেকে নিজেদের সরিয়ে নেন। যে কারণে ম্যাচটি আয়োজন করা অসম্ভব হয়ে ওঠে।
ভারত ক্রিকেট দলের অস্ট্রেলিয়া সফরের মধ্যে সংবাদমাধ্যম ও সাংবাদিকরা এর আগেও একাধিকবার খবর হয়েছেন। পার্থে সিরিজের প্রথম টেস্টের আগে অনুশীলনে জনসাধারণ ও সংবাদমাধ্যমের উপস্থিতি ‘নিষিদ্ধ’ করেছিল ভারত। ব্যাপারটা সেখানেই থামেনি, পাশে ওয়াকা মাঠে নির্মাণকাজে থাকা কর্মীরা যেন ভারতীয় দলের কোনো ছবি বা ফুটেজ না নেন, তা নিশ্চিত করতে মেইলও করা হয় দলটির পক্ষ থেকে।
সিরিজে দ্বিতীয় টেস্টের আগে অ্যাডিলেডে অবশ্য জনসাধারণের জন্য অনুশীলন–দর্শনের অনুমতি দেওয়া হয়। তবে কোহলি–রোহিতদের অনুশীলন দেখতে প্রবাসী ভারতীয় ও অস্ট্রেলিয়ানদের উপস্থিতি এত বেশি ছিল যে, এরপর ব্রিসবেন ও সিডনি টেস্টের জন্য আসে সীমিত পরিসরের নিষেধাজ্ঞা। ভারত জানিয়ে দেয়, এ দুটি জায়গার অনুশীলনে ৫ হাজারের বেশি দর্শক থাকা যাবে না।
এ বিষয়ে অ্যাডিলেডে ভারত অধিনায়ক রোহিতকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেছিলেন, ‘নেট সেশন গোপনীয় ব্যাপার। আমার ক্যারিয়ারে এই প্রথম নেটের সময় এত বেশি মানুষ দেখলাম। অনুশীলনের সময় অনেক ধরনের কথা–ই তো হয়। ও সব কথা আমাদের নিজস্ব। আমরা চাই না কেউ ও সব কথা শুনুক। টেস্ট ক্রিকেট পাঁচ দিন ধরে হয়। দর্শক আমাদের সেখানে এসে দেখতে পারেন।’
ভারত ক্রিকেট দলের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার স্থানীয় সাংবাদিকদের সম্পর্কে দূরত্ব বাড়ে সিরিজ মেলবোর্নে আসার পর। ব্রিসবেন থেকে মেলবোর্নে পৌঁছানোর পর বিমানবন্দরে নাইন নিউজের এক ক্যামেরাপারসনের সঙ্গে তর্কে জড়ান বিরাট কোহলি। তাঁর অভিযোগ, সেই সংবাদকর্মী অনুমতি না নিয়ে কোহলির সন্তানদের ছবি তুলেছেন। তবে নাইন নিউজের ক্যামেরাপারসন তা অস্বীকার করেন।
পর দিন মাঠে রবীন্দ্র জাদেজার সংবাদ সম্মেলন সূত্রে পাল্টাপাল্টি সংবাদে জড়িয়ে পড়ে অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের সংবাদমাধ্যম। অস্ট্রেলিয়ান সংবাদমাধ্যমগুলোর অভিযোগ, জাদেজা শুধু হিন্দি প্রশ্নের উত্তর দিয়ে মাঠ ছেড়েছেন। তাঁদের ডেকে এনেও প্রশ্ন করার সুযোগ দেওয়া হয়নি। কিন্তু ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে অস্ট্রেলিয়ানদের ‘প্রোপাগান্ডা’র জবাব দিয়ে লেখা হয়, টিম বাস চলে যাচ্ছিল বলেই জাদেজা চলে গিয়েছিলেন। অস্ট্রেলিয়ান মিডিয়া ভারতীয় দলের পেছনে লেগেছে।
এরপর আজ ভারতীয় দলের সংবাদ সম্মেলনে এসেছিলেন আকাশ দীপ। তরুণ এই পেসারও শুধু হিন্দি প্রশ্নের জবাব দেওয়ায় অসন্তোষ বাড়ে অস্ট্রেলিয়ানদের মধ্যে। তবে পরিস্থিতি গুরুতর দিকে মোড় নিয়েছে ভারতীয়দের প্রেস ম্যাচ বয়কটে। সাধারণত, যে কোনো লম্বা সফরে বিপুলসংখ্যক সাংবাদিক সিরিজ কভার করতে গেলে প্রেস ম্যাচ আয়োজন করা এক ধরনের ঐতিহ্য। চলতি বছর শুরুর দিকে অস্ট্রেলিয়া দলের নিউজিল্যান্ড সফরের সময় দুই দেশের সাংবাদিকরা ক্রাইস্টচার্চে একটি ম্যাচ খেলেছিলেন।