সাকিব আল হাসান সেদিনই বলেছিলেন, বুদ্ধিটা তাঁর নয়। ওই বুদ্ধি তাঁকে দিয়েছিলেন মাঠে তাঁর এক সতীর্থ। কে সেই সতীর্থ, সেটা সাকিব তখন বলেননি। তবে পরে শোনা গেছে, গত বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচে অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুসকে টাইমড আউট করার আপিলের বুদ্ধিটা বাংলাদেশ অধিনায়ককে দিয়েছিলেন সতীর্থ নাজমুল হোসেন। নাজমুলের পরামর্শেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম টাইমড আউট নেওয়া অধিনায়ক হয়ে যান বাংলাদেশের সাকিব।
আমি তখন সাকিব ভাইয়ের কাছে গিয়ে বললাম, “ভাই, এখন কিন্তু আপিল করলে ম্যাথুস আউট।” সাকিব ভাই চমকে উঠে বলেন, “তাই নাকি!” তখন উনি আপিল করেন। আমরা দলের প্রত্যেকটা খেলোয়াড় অধিনায়কের এই সিদ্ধান্তে সমর্থন জানিয়েছি।নাজমুল হোসেন
আজ মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে প্রথম আলোকে দেওয়া দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে নাজমুলও স্বীকার করেছেন, সাকিবকে তিনিই বুদ্ধিটা দিয়েছিলেন। বিশ্বকাপের আলোচিত টাইমড আউটের ঘটনার বিস্তারিতই বলেছেন তিনি সাক্ষাৎকারে। সঙ্গে দাবি করেছেন, হেলমেটের ফিতা ছিঁড়ে যাওয়ার আগেই ম্যাথুস টাইমড আউটের সময়সীমা পার করে ফেলেছিলেন।
সাক্ষাৎকারে নাজমুল বলেন, ‘আমি কাভারে দাঁড়ানো ছিলাম। হঠাৎ খেয়াল করলাম, ও (অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস) তো আসতে দেরি করছে! আম্পায়ার মারেকে (মারাই এরাসমাস) গিয়ে বললাম, এখন তো আমরা আপিল করলে ও আউট! ম্যাথুস ততক্ষণে দেরি করে ফেলেছে। হেলমেটের ফিতা ছিঁড়েছে, সেটা কিন্তু পরে। আমি বুঝতে পারছিলাম, ও তার আগেই দেরি করে ফেলেছে। আম্পায়ারও তা–ই বলেছেন। বলেছেন, “নিয়ম অনুযায়ী তোমরা আপিল করলে ও আউট। কিন্তু তোমরা তো আপিল করবে না।” আমি তখন সাকিব ভাইয়ের কাছে গিয়ে বললাম, “ভাই, এখন কিন্তু আপিল করলে ম্যাথুস আউট।” সাকিব ভাই চমকে উঠে বলেন, “তাই নাকি!” তখন উনি আপিল করেন। আমরা দলের প্রত্যেকটা খেলোয়াড় অধিনায়কের এই সিদ্ধান্তে সমর্থন জানিয়েছি।’
কিন্তু এরপর ক্রিকেট–বিশ্বেরই সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয় বাংলাদেশ দল আর প্রথম টাইমড আউট নেওয়া অধিনায়ক সাকিব। বাংলাদেশের সিদ্ধান্তের পক্ষে হয়তো দু-একজন বলেছেন, কিন্তু বিশ্বের বেশির ভাগ ক্রিকেট ব্যক্তিত্বই বলেছেন, ম্যাথুসকে টাইমড আউট করে বাংলাদেশ ক্রিকেটের চেতনাবিরোধী কাজ করেছে। তবে নাজমুল তা একদমই মনে করেন না, ‘ওই ম্যাচটা আমাদের জিততে হতো। নয়তো আমরা চ্যাম্পিয়নস ট্রফি খেলতে পারতাম না। এটা তো ছোটখাটো জিনিস নয়! আর ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, এটা যদি খেলার চেতনার বিরুদ্ধে যায়, তাহলে এই আইনটাই খেলায় থাকবে না। কেন রেখেছে এটা?’
প্রসঙ্গক্রমে নাজমুল উদাহরণ টেনেছেন মানকাডিং আউটের, ‘ওই ক্ষেত্রেও একসময় বলা হয়েছে ওটা চেতনার বাইরে। এখন তো ওটা নিয়ে কোনো কথা নেই। সেদিন এমন যদি হতো একজন খেলোয়াড় অসুস্থ, চোট পেয়েছে, পায়ে ব্যথা, সেটা ভিন্ন কিছু ছিল। কিন্তু ম্যাথুস আসতেই দেরি করেছে। ও যখন ক্রিজেও আসেনি, ক্রিজ থেকে ৮-১০ স্টেপ দূরে, তখনই আমি আম্পায়ারকে বলি এবং আম্পায়ারও বলেছেন আপিল করলে সে তখনই আউট।’
ওই সময় তাৎক্ষণিকভাবে নাজমুলের মাথায় টাইমড আউটের বিষয়টি আসায় অনেকে ভাবতে পারেন, ক্রিকেটের আইনকানুন ভালোই জানা আছে তাঁর। কিন্তু নাজমুল বলেছেন, যতটা বলা হচ্ছে বিষয়টা ততটা নয়, ‘আমি যে ক্রিকেটের অনেক আইন জানি, তা নয়। যতটুকু যেভাবে সুযোগ পাই, চেষ্টা করি জানার। আর এই আইন সম্পর্কে তো সবারই ধারণা আছে। তবে আপিল করার সাহস হয়ত কারও হয় না বা করতে লজ্জা পায়। কিন্তু আমরা ওটা করার কয়েক দিন পরই মনে হয়, কোনো একটা দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে এটা হয়েছে। এখন দেখবেন এ নিয়ে আলোচনা কমে যাবে। বাংলাদেশ দল করেছে বলেই এত কথা হয়েছে, বড় কোনো দল করলে হতো না।’
সাক্ষাৎকারে নাজমুল কথা বলেছেন তাঁর সাম্প্রতিক ফর্ম, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের শুরুতে করা সংগ্রাম এবং অধিনায়কত্ব নিয়ে তাঁর চিন্তাভাবনা প্রসঙ্গেও। আলোচনায় এসেছে বাংলাদেশ দলের ড্রেসিংরুমের আবহ, বিশ্বকাপ–ব্যর্থতাসহ সাম্প্রতিক সময়ের আরও অনেক বিষয়ই।
* পুরো সাক্ষাৎকার পড়ুন আগামীকাল প্রথম আলোর অনলাইন ও ছাপা পত্রিকায়।