অপেক্ষার রোমাঞ্চে রোমাঞ্চিত মনে হলো লিসা স্টালেকারকে। অপেক্ষা বাংলাদেশের নারী ক্রিকেটারদের জন্য। এর আগে আইসিসির বিভিন্ন আসরে ধারাভাষ্যকার হিসেবে বাংলাদেশের নারী ক্রিকেটারদের দেখেছেন। তবে সামনাসামনি কখনো কথা হয়নি। ঢাকায় সৌজন্য সফরে এসে সেই সুযোগটা যখন পেয়ে গেলেন, স্টালেকার বাংলাদেশ নারী দলের অধিনায়ক নিগার সুলতানার সঙ্গে যোগাযোগ করলেন, জাহানারা আলমকে মুঠোফোনে খুদে বার্তা পাঠালেন।
আজ বিকেলে গুলশানের এক হোটেলে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে ফিকা সভাপতি বললেন, ‘তাদের দেশে এসে তাদের সঙ্গে সামনাসামনি বসে কথা বলাটা দারুণ অভিজ্ঞতা হবে। তাদের উত্থান, আইসিসি উইমেন্স চ্যাম্পিয়নশিপে অন্তর্ভুক্তি—এসব নিয়ে কথা হবে। তাদের জন্য এটা অনেক বড় একটা ধাপ এগিয়ে যাওয়া।’
অস্ট্রেলিয়া নারী দলের সাবেক অলরাউন্ডার স্টালেকার এখন আছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটারদের সংগঠন ফেডারেশন অব ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেটার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ফিকা) সভাপতির দায়িত্বে। খেলোয়াড়ী–জীবনে অস্ট্রেলিয়া দলের সহ-অধিনায়ক ছিলেন, একটা ওয়ানডে সিরিজে পালন করেছেন অধিনায়কের দায়িত্বও। ২০১৩ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ছাড়া স্টালেকার ভারতে এসেছেন আইপিএলের ধারাভাষ্যকার হিসেবে। এই সুযোগে দুই দিনের সৌজন্য সাক্ষাতে ঘুরে যাচ্ছেন ঢাকায়। সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হওয়ার আগে তিনি আজ আলোচনায় বসেছিলেন বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের ফিকা অনুমোদিত সংগঠন ক্রিকেটার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (কোয়াব) নেতৃবৃন্দের সঙ্গেও।
ক্রিকেটারদের সংগঠন হলেও কোয়াবের কার্যনির্বাহী কমিটিতে বিসিবি পরিচালক ও বিসিবির সঙ্গে সম্পৃক্ত সাবেক ক্রিকেটারদের সংশ্লিষ্টতা নিয়ে বরাবরই প্রশ্ন আছে। স্বার্থের সংঘাত তৈরি করে সেটা। এ ব্যাপারে ফিকার অবস্থান বরাবর কড়াই ছিল। ২০১৯ সালে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের আন্দোলনের সময় ফিকা যে বিবৃতি দিয়েছিল, তাতেও ফুটে উঠেছিল সেই শক্ত অবস্থান।
ক্রিকেটারদের আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে ফিকার তৎকালীন নির্বাহী প্রধান টনি আইরিশ এক বিবৃতিতে বলেছিলেন, ‘পেশাদার ক্রিকেটার হিসেবে ন্যায্য দাবি জানাতে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা যেভাবে সংঘবদ্ধ হয়েছে, তার প্রশংসা করে ফিকা। বাধা থাকা সত্ত্বেও খেলোয়াড়দের এভাবে একত্রিত হওয়া প্রমাণ করে, ক্রিকেটে এত গুরুত্বপূর্ণ একটি দেশেও খেলোয়াড়দের সঙ্গে আচরণ পরিবর্তন হওয়া জরুরি।’
অতীতে আমরা দেখেছি স্বাধীন পরিষদই কাজ করেছে। তবে সব ক্ষেত্রে একই ব্যাপার প্রযোজ্য হবে না। প্রথমত সঠিক লোকদের সম্পৃক্ত করতে হবে। স্বচ্ছতা ও মনখোলা মানসিকতা এবং একসঙ্গে কাজ করার ইচ্ছাটাই গুরুত্বপূর্ণ।লিসা স্টালেকার, ফিকা সভাপতি
আন্দোলনে কোয়াবের ভূমিকার সমালোচনা করে টনি আইরিশ আরও বলেছিলেন, ‘খেলোয়াড়দের সংগঠনেরই এসব দাবি জানানোর কথা, তাদের (ক্রিকেটারদের) কণ্ঠস্বর হওয়ার কথা। আমাদের মনে হচ্ছে এমন গুরুত্বপূর্ণ সময়ে সে কাজটা করতে পারছে না ক্রিকেটার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (কোয়াব)। এটি আরও উদ্বেগের বিষয় যে কোয়াবের গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা কর্মকর্তারা বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পদেও আছেন। সব মিলিয়ে ফিকার মনে হয়েছে এমন সময়ে খেলোয়াড়দের সমর্থন জানানোটাই গুরুত্বপূর্ণ।’
আজ স্টালেকারকেও জিজ্ঞেস করা হয়েছে, কোয়াবের বেশ কয়েকজন সদস্য যেহেতু বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) গুরুত্বপূর্ণ পদেও আছেন, এতে স্বার্থের সংঘাত সৃষ্টির শঙ্কা থাকে কি না? কোয়াবের সাধারণ সম্পাদক দেবব্রত পাল, যিনি বিসিবিরও বেতনভুক্ত ম্যাচ রেফারি, তাঁকে পাশে রেখে ফিকা সভাপতি অবশ্য অনেকটা কূটনৈতিক উত্তরই দিলেন, ‘অতীতে আমরা দেখেছি স্বাধীন পরিষদই কাজ করেছে। তবে সব ক্ষেত্রে একই ব্যাপার প্রযোজ্য হবে না। প্রথমত সঠিক লোকদের সম্পৃক্ত করতে হবে। স্বচ্ছতা ও মনখোলা মানসিকতা এবং একসঙ্গে কাজ করার ইচ্ছাটাই গুরুত্বপূর্ণ।’ এ সময় স্টালেকার ও দেবব্রতের সঙ্গে কোয়াবের প্রতিনিধি হিসেবে ছিলেন বাংলাদেশ দলের সাবেক ক্রিকেটার সানোয়ার হোসেনও।
ক্রিকেটারদের সংগঠন এবং ক্রিকেট বোর্ড—দুই পক্ষই যেহেতু ক্রিকেটের জন্য কাজ করে, প্রয়োজনে তাদের মধ্যে সমন্বয়ে কোনো সমস্যা দেখেন না স্টালেকার। তবে শেষে আবার মনে করিয়ে দিয়েছেন, খেলোয়াড়দের সংগঠন স্বাধীন হওয়াটাই আদর্শ, ‘দিন শেষে খেলোয়াড়দের সংগঠন এবং একটা দেশের ক্রিকেট বোর্ড একই উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করে, সেটা খেলার উন্নতির জন্য। সঠিক জায়গায় সঠিক ব্যক্তি থাকলে এটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়। আদর্শগতভাবে আপনি স্বাধীন বোর্ডই (ক্রিকেটারদের সংগঠনে) চাইবেন, সেটাই স্বাভাবিক। তবে সব সময় সেটা সম্ভব নাও হতে পারে।’