আসন্ন আফগানিস্তান সিরিজে সাকিব আল হাসানের না খেলার সম্ভাবনাই বেশি। এ ব্যাপারে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না জানালেও আজ জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের প্রেসবক্সে বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ বলেছেন, সামনের সিরিজটা হয়তো সাকিব খেলবেন না।
শারজায় আফগানিস্তানের বিপক্ষে আগামী ৬, ৯ ও ১১ নভেম্বর তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ খেলবে বাংলাদেশ দল। দল দুই ভাগে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাবে ৩ নভেম্বর। তার আগে আজ–কালের মধ্যেই সিরিজের দল ঘোষণা হওয়ার কথা।
আজ ফারুক আহমেদের কথায় অনেকটাই পরিষ্কার হয়ে গেছে যে সেই দলে সাকিব সম্ভবত থাকছেন না। সঙ্গে এ–ও জানিয়েছেন, এই সিরিজে না খেলার চিন্তাটা সাকিবের নিজেরই। বিসিবি সভাপতি বলেছেন, ‘সাকিব যখন চেষ্টা করেও দেশে শেষ টেস্ট খেলতে পারল না, এর পর থেকে মনে হয় সে অনুশীলনেও খুব একটা নেই। নিজেকে প্রস্তুত করতে কিছু সময় দরকার তার। এ ব্যাপারে এখনো সিদ্ধান্ত হয়ে যায়নি, তবে পরের সিরিজে তার খেলার সম্ভাবনা কম। বলছি না যে খেলবে না নিশ্চিত হয়ে গেছে, তবে মিস করার সম্ভাবনাই বেশি। এটা তার মানসিক অবস্থার ওপর নির্ভর করে।’
নিজে যেহেতু একজন ক্রিকেটার ছিলেন, সাকিবের মানসিক অবস্থাটা বুঝতে পারছেন ফারুকও, ‘সে যত শক্ত মানসিকতারই হোক না কেন, মানসিকভাবে সমস্যা হবেই। শেষ টেস্টটা সে দেশে খেলতে পারেনি, এর জন্য মন খারাপ হবেই। এরপর যখন অনুশীলন করতে পারেনি, সে পেশাদার; সে ভেবেছে এ অবস্থায় সিরিজটা খেললে দেশের জন্য ভালো হবে না, তার জন্যও ভালো হবে না।’
বিসিবি সভাপতি জানিয়েছেন, মাঝে আবুধাবিতে একটা টি–টেন টুর্নামেন্টে খেলবেন সাকিব। সেটা হলে তাঁর একটা প্রস্তুতিও হয়ে যাবে। এরপর জাতীয় দলের হয়ে ওয়ানডে সিরিজ খেলতে চাইলে বোর্ডকে জানাবেন সাকিব। তখন প্রয়োজন মনে করলে ওয়েস্ট ইন্ডিজে ওয়ানডে সিরিজে তাঁকে দলে রাখা হতে পারে।
ফারুক আহমেদের বিশ্বাস, অন্তত ওয়ানডে ক্রিকেটে সাকিব এখনো বাংলাদেশের হয়ে খেলতে পারেন। আফগানিস্তান সিরিজের পরপর ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরেও তিনটি ওয়ানডে খেলবে বাংলাদেশ। এরপর ফেব্রুয়ারিতে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি। কিন্তু দেশে এসে দলের সঙ্গে অনুশীলন করতে না পারলে তখনো কি খেলাটা সহজ হবে সাকিবের জন্য?
ফারুকের বিশ্বাস, কাজটা অন্তত কঠিন হবে না সাকিবের জন্য, ‘সাকিব ১৭ বছর ধরে খেলেছে। সে ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ খেলে, ওভাবেই ওরা তৈরি হয়। একসঙ্গে অনুশীলন করতে পারলে ভালো, তবে খেলোয়াড় হিসেবে এটা তার জন্য কঠিন হবে না। যদি বোর্ড মনে করে, নির্বাচকেরা মনে করে তাকে দলে দরকার, আমার মনে হয় সে খেলতে পারবে।’
এর আগে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে মিরপুর টেস্টে ক্যারিয়ারের শেষ টেস্ট খেলতে চেয়েও নিরাপত্তার কারণে তাঁর সে আশা পূরণ হয়নি। ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া সাকিবকে জানিয়েছিলেন, নিরাপত্তাঝুঁকির কারণে তাঁর তখন দেশে না এলেই ভালো হবে। তাই সাকিবও আসেননি। এতে যে বিসিবির কোনো ভূমিকা ছিল না, ফারুক আহমেদ আজ তা পরিষ্কার করেই বলেছেন, ‘এটা বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের এটা সিদ্ধান্ত ছিল না। ক্রীড়া উপদেষ্টা মিডিয়াতে বলেছেন যে সে এলে সমস্যা হবে। আমার এখানে কথা বলার সুযোগ ছিল না, কারণ এটা বলা হয়ে গিয়েছিল।’
ফারুক বলেন, ‘ঢাকায় তার শেষ ম্যাচ খেলা প্রায় নিশ্চিতই ছিল। সিদ্ধান্তটা ছিল সাকিবের, সে আসবে কি না। আর এখান থেকে তারা (সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী) বলবে তার (সাকিবের) নিরাপত্তা তারা দিতে পারবে কি না। ক্রিকেট বোর্ড এটার অংশ ছিল না। ক্রিকেট বোর্ডের ওপরেও কেউ আছে।’ ফারুকের বিশ্বাস, সাকিবও এটা জানেন যে বিসিবি মিরপুরে তাঁকে শেষ টেস্ট খেলার সুযোগ দিতে চেষ্টা করেছিল।
মিরপুর টেস্টের সময় সাকিবের দেশে খেলার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হয়েছে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের সামনে। আবার সাকিবকে খেলতে দেওয়ার পক্ষেও দাবি জানিয়েছেন অনেকে। বিসিবি সভাপতিও সেটি উল্লেখ করে বলেছেন, ‘পক্ষে–বিপক্ষে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়েছে। এমন নয় যে পুরোপুরি এই দিকে বা ওই দিকে ছিল।’