আইপিএল–দুঃস্বপ্ন পেরিয়ে যশ দয়াল এখন টেস্ট ক্রিকেটের দ্বারপ্রান্তে
আইপিএল–দুঃস্বপ্ন পেরিয়ে যশ দয়াল এখন টেস্ট ক্রিকেটের দ্বারপ্রান্তে

৫ ছক্কা খাওয়া সেই দয়ালই এখন বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্ট দলে

ভারতের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রতিনিধিত্ব করা বহু দূর, সেদিন অনেকে তাঁকে আইপিএল খেলার যোগ্যতাসম্পন্নও মনে করেননি।

তাৎক্ষণিকভাবে পাল্টা জবাব দেওয়ার সুযোগও ছিল না। যে বোলার ম্যাচের শেষ পাঁচ বলে ছক্কা হজম করে ম্যাচ হারান, তাঁর পক্ষে বলার থাকেও–বা কী! ৯ এপ্রিল, ২০২৩। নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে সেদিন দুঃস্বপ্নের সঙ্গে দেখা হয়েছিল যশ দয়ালের। ঠিক ১৭ মাস পর সেই দয়ালই এখন ভারত টেস্ট দলের খেলোয়াড়। ২৬ বছর বয়সী এই বাঁহাতি পেসারকে ডাকা হয়েছে বাংলাদেশের বিপক্ষে চেন্নাই টেস্টের দলে।

উত্তর প্রদেশের এলাহাবাদ থেকে উঠে আসা দয়াল আইপিএল খেলছেন ২০২২ আসর থেকে। তবে ২০২৩ সালের গুজরাট টাইটানস–কলকাতা নাইট রাইডার্স ম্যাচ তাঁকে প্রথমবার ব্যাপক আলোচনায় নিয়ে আসে। আহমেদাবাদের ম্যাচটিতে শেষ ওভারে কলকাতার দরকার ছিল ২৯ রান। দ্বিতীয় বলে স্ট্রাইক পাওয়া রিংকু টানা পাঁচ বলে ছয় মেরে দলকে ম্যাচ জিতিয়ে নায়ক বনে যান। আর সে ওভারে ৩১ রানসহ ৪ ওভারে ৬৯ রান দিয়ে খলনায়ক হয়ে যান দয়াল।

২০২৩ সালে আহমেদাবাদে কলকাতার রিংকু সিংয়ের কাছে টানা ৫ ছক্কা হজমের পর মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন যশ দয়াল

বল হাতে অমন বিধ্বস্ত হওয়ার পর মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন দয়াল। খেলেননি পরের কয়েকটি ম্যাচ। গুজরাটের তখনকার অধিনায়ক হার্দিক পান্ডিয়া এ বিষয়ে এক ম্যাচ–পরবর্তী পুরস্কার বিতরণীতে বলেন, ‘সে অসুস্থ হয়ে পড়েছে, ওজনও ৭–৮ কেজি কমে গেছে। এটা হয়েছে ভাইরাল সংক্রমণ আর যে চাপে পড়েছে তার কারণে। ওর অবস্থা এখন মাঠে ফেরার মতো ভালো নেই। ফিরতে কিছুদিন সময় লাগবে।’

আইপিএলে রিংকুর কাছে বিধ্বস্ত হওয়া দয়াল ঘুরে দাঁড়ানো শুরু করেন ভারতের অন্যান্য ঘরোয়া প্রতিযোগিতার মাধ্যমে। উত্তর প্রদেশের রঞ্জি ট্রফিতে ৪ ম্যাচে নেন ৭ উইকেট, সমানসংখ্যক উইকেট নেন সৈয়দ মুশতাক আলী ট্রফির ৭ ম্যাচে। এ ছাড়া বিজয় হাজারে ট্রফিতে নেন ৬ ম্যাচে ৯ উইকেট। তবে যে মঞ্চে ব্যর্থতায় মুষড়ে পড়েছিলেন, সেই আইপিএলে ভালো করা ছিল বড় চ্যালেঞ্জ। ২০২৪ আসরে নিলামের তাঁর ওপর বড় বাজিই ধরে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু। গুজরাট ২০২২ সালে তাঁকে ৩ কোটি ২০ লাখ রুপিতে কিনলেও দুঃস্বপ্নের ২০২৩ আসরের পর বেঙ্গালুরু তাঁকে ৫ কোটি রুপি অর্থ দেয়।

বেঙ্গালুরু সতীর্থ বিরাট কোহলির সঙ্গে যশ দয়াল

বেশি মূল্যায়িত হওয়ার কারণেই কি না কে জানে, চলতি বছরের আইপিএলে দয়াল দেখা দেন নতুন রূপে। প্লে–অফ খেলা বেঙ্গালুরুর হয়ে ১৩ ম্যাচে নেন ১৫ উইকেট, যা আসরে দলের পক্ষে যৌথভাবে সর্বোচ্চ। এর মধ্যে বেঙ্গালুরুকে সবচেয়ে বড় প্রতিদান দেন লিগ পর্বের শেষ ম্যাচে। সেদিন বেঙ্গালুরু–চেন্নাই ম্যাচে শেষ ওভারে প্লে–অফে উঠতে ১৭ রান দরকার ছিল চেন্নাইয়ের। বোলিংয়ে দয়াল, ব্যাটিংয়ে মহেন্দ্র সিং ধোনি। প্রথম বলেই ধোনি ১১০ মিটার দূরত্বের বিশাল ছয় মারেন। তবে পরের বলেই ধোনিকে আউট করে বাকি চার বলে দেন মাত্র ১ রান। চেন্নাইকে হারিয়ে বেঙ্গালুরু উঠে যায় আইপিএলের প্লে–অফে।

সেদিনের ম্যাচ নিয়ে পরে পিটিআইকে বলা দয়ালের সাক্ষাৎকারে ছিল দুঃস্মৃতি ফিরে আসার গল্প, ‘ধোনি যখন বিশাল ছক্কাগুলো মারল, তখন আমার আগের বছরের ভয়ংকর সেই মুহূর্তটার কথা মনে পড়ছিল। তবে আমার মন বলছিল, এবার ভালো কিছুই হবে। পুরোটাই পরিশ্রমের ফল আর স্রষ্টার মহানুভবতা।’

এরপর দয়ালের শুধু সামনে এগিয়ে যাওয়ারই পালা। যেমন ভারতের প্রথম সারির খেলোয়াড়দের নিয়ে আয়োজিত দুলীপ ট্রফিতে ডাক পেয়ে গেছেন সহজেই। যেদিন বাংলাদেশের বিপক্ষে ভারতের প্রথম টেস্টের দল ঘোষণা করেছে, সেদিনই শেষ ভারত ‘বি’–ভারত ‘এ’ দলের ম্যাচে নিয়েছেন ৪ উইকেট। ১৬ সদস্যের দলে দয়ালকে রাখতে তাই বিশেষ ভাবতে হয়নি নির্বাচকদের।