ডাবল সেঞ্চুরি না করতে পারলেও নিজের ইনিংস নিয়ে খুশি নাজমুল
ডাবল সেঞ্চুরি না করতে পারলেও  নিজের ইনিংস নিয়ে খুশি নাজমুল

যা করেছেন তাতেই খুশি নাজমুল

টেস্টে এর আগেও তাঁর দুটি সেঞ্চুরি ছিল। ২০২১ সালের এপ্রিলে পাল্লেকেলেতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১৬৩। এরপর ওই বছরই জুলাইয়ে হারারেতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে অপরাজিত ১১৭। আজ মিরপুরে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ১৪৬ রানের ইনিংসের পর নাজমুল হাসানের কাছে অবধারিত প্রশ্ন হতে পারত—এই তিন সেঞ্চুরির কোনটিকে তিনি এগিয়ে রাখছেন?

এসব ক্ষেত্রে দিন শেষের সংবাদ সম্মেলনে সাধারণত সে রকমই হয়। কিন্তু মিরপুরে আজ সেঞ্চুরি নিয়ে একটু ভিন্ন ধরনের প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হলো বাংলাদেশ দলের এই ব্যাটসম্যানকে—আগের দুটি সেঞ্চুরির তুলনায় আজই কি প্রতিপক্ষের বোলিং আক্রমণটা অধিকতর দুর্বল ছিল?

মিরপুরের ঘাসের উইকেটে টসে জিতে আগে বোলিং নিয়েও আফগান বোলিং আক্রমণ বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে কাঁপন ধরাতে পারেনি। যে ৫টি উইকেট পড়েছে, বেশির ভাগ ব্যাটসম্যানদেরই ভুলে। নাজমুলের কিছুটা আক্রমণাত্মক ব্যাটিং নিয়ে বলতে গিয়ে দিন শেষে আফগান কোচ জনাথন ট্রট পরোক্ষে নিজের বোলারদেরই সমালোচনা করলেন এই বলে যে ‘আমরাই সেই সুযোগ করে দিয়েছি।’

মাহমুদুলকে সঙ্গে নিয়ে ২১২ রানের জুটি গড়েছিলেন নাজমুল

কিন্তু নাজমুল সেটা মানবেন কেন! নাজমুল যে বোলিংয়ের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেছেন, সেই একই বোলারদের খেলেছেন অন্য ব্যাটসম্যানরাও। সেখানে অন্যদের সঙ্গে নাজমুলের পার্থক্য—ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে উইকেটে এসে আউট হয়েছেন ৫৮তম ওভারে, করেছেন ১৭৫ বলে ১৪৬ রান। প্রচণ্ড গরমের মধ্যে এতটা সময় উইকেটে থাকা একটা চ্যালেঞ্জ। সেই চ্যালেঞ্জ জিতে ক্যারিয়ারের তৃতীয় টেস্ট সেঞ্চুরি করেছেন, সেটাকে শুধু প্রতিপক্ষের বোলারদের ‘অবদান’ বললে নাজমুলের কৃতিত্বটা খাটো করা হয়।

নাজমুলের কাছেও আফগানিস্তানের বোলিং খুব একটা দুর্বল মনে হয়নি। ২৩ টেস্ট, ২৪ ওয়ানডে আর ২৩ টি-টোয়েন্টির অভিজ্ঞতা থেকে যা তিনি শিখেছেন, তা হলো আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কোনো প্রতিপক্ষের বিপক্ষেই রান করা সহজ নয়, ‘আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আমি যতটুকু খেলেছি, কাউকেই দুর্বল মনে হয়নি। প্রত্যেক দলের সঙ্গেই কষ্ট করে রান করতে হয়েছে। আর ওরাও তো পরিকল্পনা করেই বোলিং করেছে। আমি যে আউটটা হয়েছি, অবশ্যই আমার ভুল ছিল। কিন্তু সে তো পরিকল্পনা করেই বোলিং করেছে। কোনো দলের বিপক্ষেই সহজভাবে রান করা যায় বলে আমার মনে হয় না।’

নাজমুলের এমন উদ্‌যাপন ভক্তদের নতুন লাগার কথা নয়

কাজেই ৮৩.৪২ স্ট্রাইক রেটের ইনিংস দেখে যাদের মনে হয়েছে, ব্যাটিংটা এদিন খুব সহজ বানিয়ে ফেলেছিলেন তিনি, তাঁদের জন্য নাজমুলের সংশোধনী, ‘আমার কাছে সহজ মনে হয়নি। আমি যে পরিকল্পনায় ব্যাটিং করার চেষ্টা করছিলাম, ওটা শুধু কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছি, আমি একদম পরিষ্কার ছিলাম, আমি কী করতে চাই। সে জন্য হয়তো আপনাদের কাছে সহজ মনে হয়েছে। কিন্তু প্রথম থেকে আমাকে কষ্ট করেই ব্যাটিং করতে হয়েছে।’

নাজমুল উল্টো কৃতিত্ব দিয়েছেন আফগান বোলারদের। প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যান হয়েও এই গরমের মধ্যে বোলিং করা আফগান বোলারদের প্রতি মানবিক তিনি, ‘ওরা চেষ্টা করেছে ভালো জায়গায় বল করতে। এই গরমে যেভাবে বোলিং করেছে, আমি মনে করি ভালো বোলিংই করেছে। স্পিনাররাও বেশ কিছু ওভার ভালো বোলিং করেছে। ওদের সামলানোর পুরো কৃতিত্বই আমাদের ব্যাটসম্যানদের।’

নাজমুলের এ পর্যন্ত করা তিনটি টেস্ট সেঞ্চুরির ইনিংসের তিনটিই আরও বড় হতে পারত। আজ তো আউট হওয়ার একটু আগে একবার ‘নো’ বলের কারণে আউট হয়েও বেঁচে গিয়েছেন। কিন্তু সেই সুযোগ কাজে লাগিয়েও নাজমুল পারেননি সেঞ্চুরির ইনিংসটা ডাবল সেঞ্চুরির হাতছানি দেখাতে।

নিজের ইনিংস নিয়ে যদিও শুরুতে বলেছেন, ‘যতটুকু হয়েছে, আলহামদুলিল্লাহ খুশি।’ কিন্তু পরে আবার আফসোসই ঝরেছে তাঁর কণ্ঠে, ‘হ্যাঁ, এই ইনিংস আরও বড় হতে পারত, পরের দিন এমন সুযোগ এলে চেষ্টা করব বড় করতে।’