মুম্বাইয়ে সংবাদ সম্মেলনে ভারতের কোচ গৌতম গম্ভীর
মুম্বাইয়ে সংবাদ সম্মেলনে ভারতের কোচ গৌতম গম্ভীর

তাহলে কি গম্ভীরই ভারতের ‘অ্যাকিলিস হিল’

অস্ট্রেলিয়ানরা তাহলে ভারত দলের ‘আসল’ দুর্বল জায়গাটা পেয়ে গেছে! বিরাট কোহলি আর রোহিত শর্মার ছন্দহীনতা নয়, অস্ট্রেলিয়ার সাবেকদের কাছে ভারতের দুর্বল জায়গা হিসেবে ধরা দিয়েছে তাদের কোচ গৌতম গম্ভীর। তাই তো বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফি নামে পাঁচ টেস্টের সিরিজ শুরুর আগে অস্ট্রেলিয়ানদের কথার তির এখন ছুটছে ভারতের সেই ‘অ্যাকিলিস হিল’ গম্ভীরের দিকে। রিকি পন্টিং-টিম পেইনদের ‘দোসর’ হিসেবে আছেন ইংল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক মাইকেল ভনও। এমন সময়ে অবশ্য গম্ভীরের পাশে দাঁড়িয়েছেন ভারতের সাবেক অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলী।

দুর্বল জায়গা খোঁজো, সেখানে আঘাত করো—অস্ট্রেলিয়ানদের পুরোনো কৌশল এটা। যেকোনো সিরিজের আগে প্রতিপক্ষের দুর্বল জায়গা খুঁজে বারবার কথার তিরে বিদ্ধ করে অস্ট্রেলিয়ানরা। উদ্দেশ্য, সিরিজ শুরুর আগেই যেন প্রতিপক্ষকে অনেকটা ঘায়েল করে ফেলা যায়। অস্ট্রেলিয়ার সাবেক অধিনায়ক পন্টিংয়ের কাছে মনে হয়েছিল, ভারত দলের এবারের ‘দুর্বল জায়গা’ কোহলির ছন্দহীনতা। আইসিসির ক্রিকেট রিভিউ ভিডিওতে তিনি সেটা নিয়েও কথা বলেছিলেন। নাহ্‌, পন্টিং কঠিন কিছু বলেননি। শুধু গুরুত্বপূর্ণ একটা সিরিজের আগে কোহলির ফর্ম নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

গম্ভীর অবশ্য সেটাকেই খোঁচা বা স্লেজিং হিসেবে নিয়েছেন। এ কারণেই হয়তো অস্ট্রেলিয়ার উদ্দেশে রওনা হওয়ার আগে ভারতে সংবাদ সম্মেলনে ভারতীয় সাংবাদিকেরা যখন বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করেন, গম্ভীর তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠেন! পাল্টা প্রশ্ন করেন—ভারতের ক্রিকেট নিয়ে পন্টিংয়ের এত মাথাব্যথা কেন! অস্ট্রেলিয়ার সাবেক অধিনায়ককে অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট নিয়েই ভাবতে পরামর্শ দেন ভারতের এই কোচ।

অস্ট্রেলিয়ান কিংবদন্তি রিকি পন্টিং

গম্ভীরের এই উত্তর আবার ভালো লাগেনি অস্ট্রেলিয়ার আরেক সাবেক অধিনায়ক পেইনের। পন্টিংকে নিয়ে গম্ভীরের এ মন্তব্যের বিষয়ে পেইন বলেছেন, ‘ওটা আমার ভালো লাগেনি। এটা ভালো কোনো উদাহরণ নয়। কারণ, পন্টিং শুধু সাধারণ একটা প্রশ্ন করেছিল। আমার মনে হয় সে (গম্ভীর) পন্টিংকে এখনো খেলোয়াড়ের মতো প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দেখছে। কিন্তু রিকি এখন ধারাভাষ্যকার। মতামত দেওয়ার জন্য তাঁকে টাকা দেওয়া হয়। আর মতামত যেটা দিয়েছে, সেটা সঠিকও।’

খিটখিটে মেজাজের গম্ভীর ভারতের কোচ হিসেবে মানানসই নয় বলেও মন্তব্য করেন পেইন।

ওদিকে ক্লাব প্রেইরি ফায়ার পডকাস্টে গম্ভীরকে নিয়ে সাবেক ইংল্যান্ড অধিনায়ক ভন বলেছেন, ‘পন্টিংকে নিয়ে গম্ভীর যা বলেছে, সেটা আমার পছন্দ হয়নি। এমন কোনো নিয়ম নেই যে সাবেক একজন খেলোয়াড় একটি দল নিয়ে আলোচনা বা সমালোচনা করতে পারবে না। ভারতে অনেকটা সময় কাটানো ম্যাথু হেইডেনের যেমন ভারতের খেলোয়াড় বা পারফরম্যান্স নিয়ে কথা বলার অধিকার আছে।’

ভন এরপর মজা করে বলেন, ‘গম্ভীরের যুক্তি অনুযায়ী, আমার অস্ট্রেলিয়ায় ধারাভাষ্য দেওয়া বন্ধ করে দিয়ে ইংল্যান্ডে ফিরে যাওয়া উচিত। কিন্তু ক্রিকেটে এটা হয় না। খেলাটির সৌন্দর্য বৈশ্বিকতায় এবং সাবেক খেলোয়াড়দের বিশ্লেষণেই নিহিত।’ ভন কথা বলেছেন অস্ট্রেলিয়ায় বোর্ডার-গাভাস্কার সিরিজে ভারতের সম্ভাবনা নিয়েও। এখানে যেন ভন সতর্কই করে দিলেন গম্ভীরকে, ‘অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ গম্ভীরের জন্য সহজ হবে না। অস্ট্রেলিয়ানরা ভালো ছন্দে আছে এবং ভারত একটি ম্যাচ হারলে গম্ভীর চাপের মুখে কী করে, সেটা দেখতে পারাটা দারুণ ব্যাপার হবে।’

সৌরভ গাঙ্গুলী

চারদিক থেকে গম্ভীরের দিকে ছুটে আসা এই সমালোচনা ভালো লাগেনি সৌরভের। গম্ভীরের পাশে দাঁড়াতে গিয়ে বিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি যা বলেছেন, সেটার মর্মার্থ এ রকম—গম্ভীরকে এভাবে খেপিয়ে তোলার বিষয়টি অস্ট্রেলিয়ানদের একটি কৌশল! রেভস্পোর্টসে সৌরভ তাঁর কথা শুরু করেছেন এভাবে, ‘আমি বলতে চাই, তাকে (গম্ভীর) তার মতো থাকতে দিন। সে সংবাদ সম্মেলনে যা বলেছে, তা নিয়ে আমি কিছু সমালোচনা দেখেছি। সে এ রকমই, তাকে এ রকমই থাকতে দিন...সোজাসাপটা কথাকে ভালোভাবে দেখা হয় না। কিন্তু সে তো এ রকমই।’ সৌরভ এরপর যোগ করেন, ‘আমি যখন থেকে ক্রিকেট দেখি, অস্ট্রেলিয়ানরা এ রকমই। তারা সব সময়ই আপনার জন্য কঠিন হবে। ওয়াহ, পন্টিং বা হেইডেন হোক, তারা ক্রিকেটটা এভাবেই খেলে। তাই আমার কাছে মনে হয়, গম্ভীর যা বলেছে, সেটাতে কোনো ভুল নেই। সে এ রকমই, সে লড়াই করে, সে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। তাই তাকে একটি সুযোগ দিন।’