টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের পয়েন্ট কাটার পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সদ্য সাবেক ইংলিশ পেসার স্টুয়ার্ট ব্রড (বাঁয়ে)
টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের পয়েন্ট কাটার পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সদ্য সাবেক ইংলিশ পেসার স্টুয়ার্ট ব্রড (বাঁয়ে)

মন্থর ওভাররেটে পয়েন্ট কাটার পদ্ধতিকে ‘ভুল’ মনে করেন ব্রড

মন্থর ওভাররেটের কারণে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের পয়েন্ট কেটে নেওয়ার পদ্ধতিকে ভুল মনে হচ্ছে স্টুয়ার্ট ব্রডের। এর মাধ্যমে ওয়ার্ল্ড টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ এর প্রাসঙ্গিকতা হারাবে বলেও মন্তব্য করেছেন সদ্য সাবেক হওয়া এ ইংলিশ পেসার।

সাম্প্রতিক সময়ের অন্যতম সেরা সিরিজ ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ার এবারের অ্যাশেজে মাঠের লড়াই দুর্দান্ত হলেও ওভারের মন্থরগতির কারণে দুই দলকেই বড় শাস্তি পেতে হয়। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের পয়েন্ট কাটার পাশাপাশি জরিমানাও করা হয় ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়াকে। বড় খড়্গটা নেমে এসেছে ইংল্যান্ডের ওপরই—৫ টেস্টের সিরিজে সব মিলিয়ে ১৯ পয়েন্ট কাটা গেছে তাদের। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের এখনকার চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়ার কাটা যায় ১০ পয়েন্ট। হেডিংলি টেস্ট ছাড়া বাকি চার টেস্টেই পয়েন্ট কাটা হয়েছে স্বাগতিক ইংল্যান্ডের। অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়ার পয়েন্ট কাটা গেছে শুধু একটি টেস্টে, তবে ওল্ড ট্রাফোর্ডে হওয়া চতুর্থ ম্যাচেই ১০ পয়েন্ট হারিয়েছে তারা।

টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে প্রতিটি জয়ের জন্য ১২ পয়েন্ট পায় দল, ড্রয়ের জন্য পায় ৪ পয়েন্ট। ৫ ম্যাচ সিরিজে ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া দুই দলই পেয়েছিল ২৮ পয়েন্ট করে। তবে পয়েন্ট কাটা যাওয়ার পর ইংল্যান্ডের আছে মাত্র ৯ পয়েন্ট, অস্ট্রেলিয়া পেয়েছে ১৮। আগের চক্রে সব দল মিলিয়ে হারিয়েছিল ১৯ পয়েন্ট, ইংল্যান্ড সমপরিমাণ পয়েন্ট হারিয়েছে এক সিরিজেই। অন্যদিকে এর আগে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের প্রথম চক্রে এমন পয়েন্ট পেনাল্টির কারণেই ফাইনালে জায়গা হারিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। পাঁচ ম্যাচের সিরিজে যেখানে সর্বোচ্চ ৬০ পয়েন্ট আছে, সেখানে এতগুলো পয়েন্ট কাটা যাওয়া দুই দলের জন্যই বড় একটা ধাক্কা হয়ে উঠতে পারে।

এক সিরিজেই ইংল্যান্ডের কাটা গেছে ১৯ পয়েন্ট

ডেইলি মেইলকে এ ব্যাপারে কথা বলতে গিয়ে নিজের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়াই জানিয়েছেন টেস্ট ইতিহাসের দ্বিতীয় সফলতম পেসার ব্রড, ‘সত্যি বলতে কি, এর মাধ্যমে ওয়ার্ল্ড টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ এর প্রাসঙ্গিকতা হারাবে। এটা সর্বকালের অন্যতম সেরা বিনোদনদায়ী এক সিরিজ ছিল। সেখানে সম্ভাব্য ৬০ পয়েন্টের মধ্যে ইংল্যান্ড পেল মাত্র ৯ পয়েন্ট। পদ্ধতিটা ভুল, এদিকে নজর দেওয়া উচিত।’

সম্প্রতি ওভারের মন্থরগতির শাস্তির নিয়ম বদলেছে আইসিসি, যদিও সেটি জরিমানার ক্ষেত্রে। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, নির্ধারিত সময়ে প্রতি ওভার কম করার কারণে ম্যাচ ফির ৫ শতাংশ করে জরিমানা করা হবে, অবশ্য এক ম্যাচে কোনো দলকে সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশই জরিমানা করা হবে। তবে প্রতি ওভারের জন্য ১ পয়েন্ট করে কাটার পদ্ধতি আগের মতোই আছে। আবার কোনো দল যদি প্রতিপক্ষকে ৮০ ওভারের মধ্যে একবার বা ১৬০ ওভারের মধ্যে দুবার অলআউট করতে পারে, তাহলে ওভাররেট বিবেচনায় আনা হবে না।  

এর আগে মন্থর ওভাররেটের কারণে অস্ট্রেলিয়া শাস্তি পাওয়ার পর আইসিসির প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন ব্যাটসম্যান উসমান খাজা। টুইটারে খোঁচা দিয়ে তিনি লিখেছিলেন, ‘দুই দিনের বৃষ্টির কারণে দ্বিতীয় ইনিংসে বোলিংয়ের সুযোগই পাওয়া গেল না, আর আইসিসি এরপরও স্লো ওভাররেটের কারণে জরিমানার সঙ্গে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ১০ পয়েন্ট কেটে নিল! বেশ বোধগম্য হলো ব্যাপারটা।’

অবশ্য ব্রড বা খাজা এ প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুললেও সাবেকেরা মন্থর ওভাররেটকে বেশি নেতিবাচকভাবেই দেখেছেন। সাবেক অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক রিকি পন্টিং যেমন বলেছিলেন, এ ব্যাপারে আরও সচেতন হতে পারেন খেলোয়াড় ও আম্পায়ারদের। অবশ্য পয়েন্ট কাটা যাওয়ার কারণে এর আগে অস্ট্রেলিয়ার ফাইনাল খেলার সুযোগ হাতছাড়া হওয়ার উদাহরণ টেনে পন্টিং বলেছিলেন, ‘আমি সত্যিই জানি না এর সমাধান কী, তবে যদি অস্ট্রেলিয়ার মতো কোনো দল টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল মিস করে কয়েকটি ওভারের জন্য, তাহলে এটি বেশ কঠোর শাস্তি হয়ে যায়।’

পয়েন্ট কাটার পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন উসমান খাজাও

তবে সাবেক ইংল্যান্ড অধিনায়ক নাসের হুসেইনের মতে, আইসিসির এ ব্যাপারে আরও কঠোর হওয়া উচিত। তিনি বলেছেন, ‘আমার মনে হয় পেনাল্টি কঠোরই হওয়া উচিত। এটা সমর্থকদের বেশ হতাশ করে। বিশেষ করে ইংল্যান্ডে যেমন টিকিটের অনেক দাম। ফলে আপনি পুরো দিনের খেলা দেখতে চাইবেন। হয়তো অনেকে বলতে পারেন, আপনি যে করেই হোক বিনোদন পাচ্ছেন। তবে আপনি যদি ৯০ ওভারের টাকা দেন, তাহলে আপনি ৯০ ওভারই প্রত্যাশা করবেন বলে মনে করি।’