বারবার সূচি বদলিয়ে শুরুর আগেই বিশ্বকাপকে ‘তামাশা’য় পরিণত করেছে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই)। সূচি নিয়ে তালগোলের বিষয়টি ভুলে দলগুলো যখন বিশ্বকাপে অংশ নিতে ভারতে যেতে শুরু করেছে, তখনই আরেকটি বিতর্কের জন্ম দিয়েছে ভারত সরকার।
বাকি ৯ দলকে যথাসময়ে ভিসা দিলেও পাকিস্তানকে নিয়ে গড়িমসি করেছে ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি) আইসিসির হস্তক্ষেপ চাইলে শেষ পর্যন্ত গতকাল রাতে ভিসা পান বাবর আজম–শাহিন আফ্রিদিরা।
এশিয়া কাপে ব্যর্থতার পর নিজেদের মধ্যে দলীয় ঐক্যকে আরও সুদৃঢ় করতে সংযুক্ত আরব আমিরাতে জড়ো হতে চেয়েছিল পাকিস্তান দল। গতকাল সোমবার আরব আমিরাতে পৌঁছে সেখান থেকে আগামীকাল বুধবার ভারতে যাওয়ার কথা ছিল।
কিন্তু পিসিবির সেই উদ্যোগ ভেস্তে যায় ভারতের ভিসা জটিলতায়। শেষ পর্যন্ত আরব আমিরাতে সময় কাটানোর পরিকল্পনা বাতিল করে পাকিস্তান দলকে লাহোরেই থেকে যেতে হয়।
বিশ্বকাপের মূল পর্বে পাকিস্তানের প্রথম ম্যাচ আগামী ৬ অক্টোবর, নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে। এর আগে বাকি দলগুলোর মতো পাকিস্তানও দুটি প্রস্ততি ম্যাচ খেলবে, যার প্রথমটি শুক্রবার হায়দরাবাদে। অথচ ভারতযাত্রার ৪৮ ঘণ্টার আগেও হাইকমিশনে বাবরদের ভিসা আটকে থাকা নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। এ নিয়ে পিসিবি ভারত সরকার ও বিসিসিআইয়ের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করেছে।
বিশ্বকাপে বাকি দলগুলো ঠিক সময়ে ভিসা পেলেও পাকিস্তানের কেন দেরি হলো? ইএসপিএন ক্রিকইনফো ও হিন্দুস্তান টাইমস এ প্রশ্নের কিছু উত্তর খুঁজে বের করেছে।
ক্রিকইনফো জানিয়েছে, পাকিস্তান দলকে যথাসময়ে ভিসা দেওয়ার ব্যাপারে বিসিসিআইয়ের নাকি কিছুই করার ছিল না; ভিসা ইস্যুতে তাদেরও হাত বাঁধা।
আফগানিস্তান, ইরাক, পাকিস্তান ও পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত অন্য দেশের নাগরিক এবং রাষ্ট্রহীন ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে ভারতের ভিসা নীতিতে বেশ কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। এ ছাড়া ভারত–পাকিস্তানের মধ্যকার তিক্ত ইতিহাস ও রাজনৈতিক বৈরিতাও বাবরদের দেরিতে ভিসা পাওয়ার অন্যতম কারণ।
হিন্দুস্তান টাইমস তাদের প্রতিবেদনে লিখেছে, ভারত–পাকিস্তান দুই দেশের নাগরিকই একে অন্যের ভূখণ্ডে যেতে নানা সময়ে অনীহা প্রকাশ করার ব্যাপারটি ভিসাপ্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে সময়সাপেক্ষ হতে পারে না। আগস্টের প্রথম সপ্তাহে ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিসিসিআইকে পাঠানো চিঠিতেও বিষয়টি উল্লেখ করেছিল। সেই চিঠিতে এটাও লেখা ছিল, বিশ্বকাপে অংশ নিতে কিংবা বিশ্বকাপের খেলা দেখতে চাইলে পাকিস্তান, পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত অন্য দেশের নাগরিক এবং রাষ্ট্রহীন ব্যক্তিদের ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিরাপত্তা ছাড়পত্র লাগবে।
প্রতিবেদনে আরও লেখা হয়েছে, আগস্টের শেষ সপ্তাহ থেকেই বিশ্বকাপে অংশ নিতে চলা দলগুলোকে ভিসা দিতে শুরু করেছে ভারত। কিন্তু পাকিস্তান আবেদন করতে দেরি করেছে। পিসিবির দেরিতে আবেদনের কারণ ছিল হাইব্রিড মডেলের এশিয়া কাপ। শ্রীলঙ্কাকে নিয়ে যৌথভাবে এশিয়া কাপ আয়োজন করতে হওয়ায় পাকিস্তান দলকে ভ্রমণের ওপর থাকতে হয়েছে। এশিয়া কাপের আগে দলটি আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজও খেলেছে শ্রীলঙ্কায়। এ কারণে বাবর–আফ্রিদিদের পাসপোর্ট ভারতীয় হাইকমিশনে জমা না দিয়ে নিজেদের কাছেই রাখতে হয়েছে।
যদিও পাসপোর্ট ছাড়াই ভিসাপ্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে অনুরোধ করেছিল পিসিবি। কিন্তু তাদের অনুরোধ রাখেনি ভারতীয় হাইকমিশন। তারা পিসিবিকে সাফ জানিয়ে দেয়, পাকিস্তান দল শ্রীলঙ্কা থেকে দেশে ফেরার পর সশরীর পাসপোর্ট নিয়ে হাইকমিশনে যেতে হবে খেলোয়াড়দের।
এশিয়া কাপের সুপার ফোর থেকে বিদায় নেওয়া পাকিস্তান দল অবশেষে গত মঙ্গলবার পাসপোর্ট জমা দেয়। এর পর থেকে গতকাল রাতে ভিসা দেওয়ার আগপর্যন্ত পিসিবির সঙ্গে কোনো যোগাযোগই করেনি ভারতের হাইকমিশন। পাসপোর্ট জমা দেওয়ার সময় হিসাব করলে অপেক্ষাকৃত কম সময়েই (৬ দিন) ভিসা পেয়ে গেছেন বাবররা।
কেউ কেউ পিসিবির দেরিতে বিশ্বকাপ দল ঘোষণাও বাবরদের বিলম্বিত ভিসাপ্রাপ্তির অন্যতম কারণ হিসেবে মনে করছিলেন। তবে হিন্দুস্তান টাইমস জানিয়েছে, এটা কেন সমস্যা নয়। কারণ, শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট (এসএলসি) ও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) পাকিস্তানের অনেক পরে দল ঘোষণা করেছে। কিন্তু এসএলসি ও বিসিবি অনেক আগেই খেলোয়াড়দের পাসপোর্ট ভারতীয় হাইকমিশনে জমা দেওয়ায় যথাসময়ে ভিসা পেয়েছে।
সব ঠিক থাকলে আগামীকাল ভারতে পা রাখবে পাকিস্তান দল। দলটি সর্বশেষ ২০১৬ সালে টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে ভারতে গিয়েছিল।