‘মাস্ট উইন’ ম্যাচ কখনোই সহজ নয়। কাল বাংলাদেশকেও তেমনই একটা ম্যাচ খেলতে হয়েছে। আফগানিস্তানের বিপক্ষে হারলে কালই বাংলাদেশের এশিয়া কাপ শেষ হয়ে যেত। এমন একটা ম্যাচে বাংলাদেশ শুধু জেতেনি, আধিপত্যও দেখিয়েছে। এটা দেখে খুবই ভালো লেগেছে। বাংলাদেশ দলকে অভিনন্দন। বাংলাদেশ দলের আত্মবিশ্বাসের জন্য এই জয়টা খুব দরকার ছিল। আর নানা কারণে ঠিক এই জায়গায় আমরা পিছিয়ে ছিলাম।
এই ম্যাচের একাদশ নির্বাচন করতে হলে টিম ম্যানেজমেন্টকে নিশ্চয়ই অনেক সময় ও মেধা ব্যয় করতে হয়েছে। যে কারণেই হোক, বাংলাদেশ দল দুজন বাঁহাতিকে ওপেনিংয়ে খেলাতে চায়নি। সে ক্ষেত্রে স্বাভাবিকভাবেই এনামুল হকের সুযোগ পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দল তাঁর ওপর আস্থা রাখেনি। ডানহাতি ওপেনারের অভাবটা তাঁরা মেহেদী হাসান মিরাজকে দিয়ে পূরণ করেছে। যে কারণে দলে আফিফ ও শামীমের মতো দুজন ফিনিশার রাখা সম্ভব হয়েছে।
মিরাজকে বিরাট বাহবা দিতেই হয়। তিনি মূলত লোয়ার অর্ডার ব্যাটসম্যান। কিন্তু কাল তিনি টপ অর্ডারে খেলেছেন, যার জন্য দরকার সম্পূর্ণ ভিন্ন দক্ষতা। কিন্তু মিরাজ বরাবরের মতোই লড়াকু মানসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। সেঞ্চুরি তো আর ছোটখাটো অর্জন নয়। আর সেটা যদি হয় ওপেনিংয়ে নেমে, তাহলে সেটা স্মরণীয় অর্জন বটে। এটা বলতেই হয়, মিরাজ চাহিদার চেয়েও বেশি দিয়েছেন। তিনি আমাদের খুশিতে ভাসিয়েছেন, আনন্দিত করেছেন।
একই দিন নাজমুলের সেঞ্চুরিও দেখলাম। তিনিও তাঁর সহজাত জায়গা থেকে এক ধাপ নিচে নেমে খেলেছেন। এই পরিবর্তনটা না করলেও হতো। ৩ নম্বর পজিশনটা বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যানের, নাজমুলেরই সেখানে উচিত ছিল। কিন্তু নাজমুলকে এক ধাপ নিচে খেলালেও তাতে নাজমুলের আত্মবিশ্বাসে আঁচড় লাগেনি। ইনিংসের শুরুতেই কিছু শট মিড অন, মিড অফ দিয়ে খেলেছেন, যা দেখেই মনে হয়েছে দিনটা নাজমুলের হতে পারে। তাঁর ইনিংসটা বাংলাদেশকে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যের ভিত গড়ে দিতে সাহায্য করেছে। মিরাজকেও ইনিংসের শুরুতে চাপমুক্ত রেখেছে।
দুজনের সেঞ্চুরির পর যে দিকটা ভালো ছিল, সেটা হলো বাংলাদেশ ইনিংসের ফিনিশিং। সাকিব ও মুশফিকের ছোট ছোট ক্যামিও দুটি আফগানদের হতাশাটা আরও বাড়িয়েছে। ৩০০ আর ৩৩৪ রানের মধ্যে কিন্তু বিরাট ফারাক আছে। সব মিলিয়ে বাংলাদেশ ইনিংসকে ব্যাটিংয়ের আদর্শ প্রদর্শনীই বলব।
তবে আমি এটাও বলব, তাওহিদ হৃদয়কে এখনই ভিন্ন ভিন্ন পজিশনে খেলালেই বরং ভালো হবে। তিনি একজন ভালো খেলোয়াড়, ক্যারিয়ারের শুরুতে আছেন। এখনই তাঁকে নিয়ে পরীক্ষা–নিরীক্ষা না করাই শ্রেয়। যাঁর যেখানে খেলা উচিত, দল সেই খেলোয়াড়দের সুযোগ করে দিতে পারেনি। এটা নির্বাচক থেকে শুরু করে টিম ম্যানেজমেন্ট, সবাইকে নিশ্চয়ই বিব্রত করবে।
বড় রান হলেও লাহোরের কন্ডিশনে এ রানটা তাড়া করা কিন্তু একেবারেই অসম্ভব ছিল না। সে জন্য যাঁর রান করা খুব দরকার ছিল, সেই গুরবাজকে বাংলাদেশ শুরুতেই আউট করেছে। শরীফুলের ওই দুর্দান্ত স্পেলটার কথা আলাদা করে বলতেই হয়। বাংলাদেশ বোলিংয়ে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত ছিল ইব্রাহিমের আউটটি।
হাসানের দারুণ লাইন ও লেংথের সঙ্গে মুশফিকের ওই ডাইভটা মাঝের ওভারের ছবিটাই পাল্টে দিয়েছে। কারণ, ইব্রাহিম ভালো স্ট্রাইক রেটে খেলছিলেন কোনো ঝুঁকি না নিয়েই। আর ইনিংসের শেষে তাসকিনের বৈচিত্র্যপূর্ণ বোলিং ভালো লেগেছে। সবকিছু মিলিয়ে এই জয়টা বাংলাদেশকে টুর্নামেন্টে অন্য বড় দলগুলোর বিপক্ষে খেলার আগে দারুণ আত্মবিশ্বাসী করে তুলবে।
গাজী আশরাফ হোসেন, বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক