হাবিবুল বাশারের মুখে প্রায়ই শোনা যায় কথাটা। হাসান মাহমুদ নাকি গ্লেন ম্যাকগ্রার মতো! অস্ট্রেলিয়ার সাবেক পেসার ম্যাকগ্রাকে খেলার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকেই বলেন, ‘দেখে মনে হয় না খুব জোরে বল করছে, কিন্তু ব্যাটে লাগলে মনে হয় ঘণ্টায় ১৪০ কিলোমিটার।’ ক্রিকেটের ভাষায় যাকে বলে ‘কুইক অব দ্য পিচ’।
২০২০ সালে জাতীয় দলে প্রথম ডাক পাওয়া হাসানকে হাবিবুল সব সময় টেস্ট ক্রিকেটেই দেখতে চেয়েছেন। নিখুঁত বোলিং অ্যাকশন, যেটা নিয়মিত থাকে একই রকম। সঙ্গে টপ অব অফ স্টাম্প হিট করার দারুণ দক্ষতা তো আছেই। এমন টেস্ট বোলারই তো চাই!
না, হাসানের সঙ্গে ম্যাকগ্রার তুলনা করা হচ্ছে না। ৫৬৩ উইকেট নেওয়া অস্ট্রেলিয় কিংবদন্তির সঙ্গে একই বাক্য নিজের নামটা হাসানের কাছেও বেমানান মনে হতে পারে। তবে তাঁর বোলিং–ভাবনার সঙ্গে ম্যাকগ্রার অনেক মিলই খুঁজে পাবেন। ম্যাকগ্রা ছিলেন চ্যানেল বলের রাজা। অফ স্টাম্পের বাইরে ‘এ৪’ কাগজের আকৃতির বক্সে বল ফেলে অফ স্টাম্পের মাথায় একের পর এক বল করে যাওয়ার অবিশ্বাস্য দক্ষতা ছিল ম্যাকগ্রার। উইকেট যেমনই হোক, তাঁর কৌশল ছিল একটাই—‘হিট দ্য টপ অব অফ স্টাম্প উইথ অকেশনাল বাউন্সার।’
গতকাল চেন্নাই টেস্টের প্রথম দিনে হাসানের বোলিং দেখে ভারতের এক সাংবাদিক ম্যাকগ্রাকেই টানলেন, যেটা মিলে যায় হাবিবুলের কথার সঙ্গে। ম্যাকগ্রা বহুবার বহু ব্যাটিং আক্রমণেই ধস নামিয়েছেন। হাসানও তাঁর ছোট্ট ক্যারিয়ারে ঠিক তা–ই করে চলেছেন। চট্টগ্রামে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অভিষেক টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে চোখের পলকে নিয়েছিলেন ৪ উইকেট। পাকিস্তানের বিপক্ষে রাওয়ালপিন্ডির দ্বিতীয় টেস্টের স্মৃতি তো তরতাজাই থাকার কথা। চেন্নাই টেস্টের প্রথম দিনের গল্পও সে রকমই।
কন্ডিশন যেমনই হোক, হাসান পথটা ঠিকই খুঁজে নেন। বাকি কাজটা করে তাঁর রিস্ট পজিশন। বল ভেতরে আনার এবং বাইরে নেওয়ার অবিশ্বাস্য দক্ষতা নিয়ে পেশাদার ক্রিকেটে এসেছেন এই তরুণ। লাল বলের উঁচু সিম তো যেন তাঁর বন্ধু। বল সুইং ও সিম মুভমেন্টের জন্য খাড়া সিমটাই তো চাই! ৪ টেস্ট আর ৭ ইনিংসের ছোট্ট ক্যারিয়ারে হাসানের প্রভাববিস্তারী বোলিংয়ের রহস্য এটাই। তাঁকে ম্যাকগ্রার সঙ্গে তুলনা না করলেও বাংলাদেশের ‘চ্যানেল বলের রাজা’ তো তাঁকে বলাই যায়।
চাইলে বোলিং নিয়ে হাসানের গতকালের ভাবনার সঙ্গে কথাটা মিলিয়ে নিতে পারেন, ‘আমার পরিকল্পনা খুব সাদামাটাই ছিল। নতুন বলে নিজের শক্তি অনুযায়ী বোলিংয়ের চেষ্টা করেছি। যেটা আমি ভালো পারি, সেটাই পুরো সময় করতে চেয়েছি। এরই ফল পেয়েছি।’ দিন শেষের সংবাদ সম্মেলনে অন্য এক প্রশ্নে বলেছেন, ‘আমি খাড়া সিমে বল করার চেষ্টা করি, শেপটা ধরে রাখার চেষ্টা করি। সঙ্গে আজ (গতকাল) বল বের করেও নিতে চাইছিলাম।’ বলের মুভমেন্ট নিয়ে এক সাংবাদিকের সঙ্গে মজা করতে গিয়ে জানিয়েছেন নিজের দক্ষতার ওপর আস্থার কথাও, ‘যেহেতু বলের মুভমেন্ট আমি করতে পারছি, কৃতিত্ব তো আমারই (হাসি)।’
শুধু ম্যাকগ্রা নন, চেন্নাইয়ে হাসান মনে করিয়ে দিচ্ছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার কিংবদন্তি ফাস্ট বোলার ডেল স্টেইনকেও। প্রথম স্পেলেই রোহিত শর্মা, শুবমান গিল ও বিরাট কোহলিকে আউট করে তিনি আলোচনায় নিয়ে আসেন ২০০৮ সালে স্টেইনের সেই বিস্ফোরক স্পেলটিকে।
আহমেদাবাদে ২৩ রানে ৫ উইকেট নিয়ে ভারতের ব্যাটিংয়ে ধস নামিয়েছিলেন স্টেইন। সেই টেস্টে মাখায়া এনটিনিও ১৮ রানে নিয়েছিলেন ৩ উইকেট। এই তালিকায় রাখতে হবে পাকিস্তানের ইয়াসির আরাফাত ও শ্রীলঙ্কার চানাক ভেলেগেদারাকেও। ২০০৭ সালে বেঙ্গালুরু টেস্টে ইয়াসির ২২ রানে নিয়েছিলেন ৩ উইকেট। দুই বছর পর আহমেদাবাদেই শ্রীলঙ্কার ভেলেগেদারা ৩ উইকেট নিয়েছিলেন ২৮ রান।
আর গতকাল হাসান নিজের প্রথম স্পেলে ৭ ওভারে মাত্র ১৪ রান দিয়ে ফেরান ভারতের ৩ টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানকে। পরে আউট করেছিলেন ঋষভ পন্তকেও। সবই অফ স্টাম্পের বাইরের চ্যানেল বলে, সব ব্যাটসম্যানই হয়েছেন কট বিহাইন্ড।