সিলেটের ক্রিকেটে দ্বন্দ্ব—১

প্রতিশোধের বলি হয়ে ‘নীরব বহিষ্কার’

রেলিগেশন লিগসহ প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগ আয়োজনের দাবিতে পেশাদার ক্রিকেটাররা বর্জন করেছেন সিলেটের লিগ। দাবি না মেনে জেলা ক্রীড়া সংস্থা লিগ চালিয়েছে দায়সারাভাবে। দুই পক্ষের বিরোধে হযবরল অবস্থা জেলার ক্রিকেটের। এ নিয়ে দুই পর্বের ধারাবাহিক প্রতিবেদনের আজ পড়ুন প্রথম পর্ব—

দলে ক্রিকেটারের স্বল্পতা। তাই বলে কোচও খেলতে নেমে যাবেন! জাতীয় ক্রিকেট চ্যাম্পিয়নশিপের এবারের আসরে সিলেট জেলা দলের কোচ আল ওয়াদুদ তাঁদের শেষ ম্যাচে ঘটিয়েছেন এমন কাণ্ড। অথচ সিলেট জেলা গত জাতীয় ক্রিকেট চ্যাম্পিয়নশিপের চ্যাম্পিয়ন। দীর্ঘ ২৮ বছর পর শিরোপা জিতলেও পরের বছরই সেটি খুইয়ে প্রথম স্তর থেকে সিলেট নেমে গেছে দ্বিতীয় স্তরে। জেলা ক্রীড়া সংস্থার সঙ্গে স্থানীয় ক্রিকেটারদের চলমান দ্বন্দ্বের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াই বলতে পারেন সিলেটের ক্রিকেটের এই অবনতিকে।

রেলিগেশনসহ লিগ পদ্ধতিতে সিলেট প্রিমিয়ার লিগ আয়োজনের দাবি ছিল সিলেটের ক্রিকেটার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন (কোয়াব) ও সিলেট ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের। সে দাবি না মানাতে গত মাসে সিলেট জেলা ক্রীড়া সংস্থার অধীনে সব ধরনের ক্রিকেট বর্জন করার সিদ্ধান্ত নেন স্থানীয় ক্রিকেটাররা। মানববন্ধন করে আমরণ অনশনের হুমকিও দেন তাঁরা। তাতেও জেলা ক্রীড়া সংস্থা ইতিবাচক সাড়া দেয়নি।

আমরা আর কারও প্রতিপক্ষ হতে চাই না। আমরা একটা দাবি তুলেছিলাম, সেটা পূরণ হয়নি। এখন ওনারা নিশ্চয়তা দিক যে খেলাটা ভালোভাবে হবে। আমরাও মাঠে ফিরতে চাই।
এনামুল হক জুনিয়র, সভাপতি, সিলেট কোয়াব

জেলার পেশাদার ক্রিকেটারদের ছাড়াই সিলেট প্রিমিয়ার লিগ হয়েছে। জাতীয় ক্রিকেট চ্যাম্পিয়নশিপে সিলেট জেলার দলও গঠন করা হয় আনকোরা, অপেশাদার ক্রিকেটারদের নিয়ে। সিলেটের পেশাদার ক্রিকেটাররা মনে করেন, এভাবে তাঁদের একরকম ‘নীরব বহিষ্কার’ই করা হয়েছে সিলেটের ক্রিকেট থেকে।

ক্রিকেটারদের একটা অংশের অভিযোগ, জেলা ক্রীড়া সংস্থা ক্রিকেটারদের মাঠে ফেরার পথ বন্ধ করে আন্দোলনের শাস্তি দিচ্ছে। সিলেট কোয়াবের সাধারণ সম্পাদক ইমরান আলী বলেছেন, ‘আমরা টুর্নামেন্টটা খেলিনি, জেলা দলেও খেলিনি। পরে জেলা দলের খারাপ অবস্থা দেখে আমরা আমাদের যারা উঠতি প্রতিশ্রুতিশীল ক্রিকেটার আছে, তাদের খেলতে দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তারা (জেলা ক্রীড়া সংস্থা) সে সুযোগটাও দেয়নি। আমরা লিগ খেলিনি, তাই আমাদের দলে রাখা হয়নি। আমাদের নীরব বহিষ্কার করা হয়েছে।’

ক্রিকেটারদের অভিযোগের আঙুল সিলেট জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মাহিউদ্দিন আহমেদের দিকে। তবে তাঁর দাবি আবার উল্টো, ‘ক্রিকেটারদের তো আন্দোলন করার দরকার ছিল না। ভালোভাবেও এসবের সমাধান করা যেত। ওরা ওদের চিঠিতে পাপন ভাই (বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান), প্রধানমন্ত্রীকে পর্যন্ত উল্লেখ করেছে। শুধু আইসিসি বাকি ছিল। এত উঁচুতে যাওয়ার প্রয়োজন ছিল না। আমরাই এটার সমাধান করতে পারতাম।’

ক্রিকেটাররা কি তাহলে প্রতিশোধের বলি হলেন? এমন প্রশ্ন অবশ্য এড়িয়েই গেছেন তিনি, ‘আমরা সেটা বলছি না। আমরা বলছি, সমাধানটা অন্যভাবে হতে পারত।’

ক্রিকেটারদের দাবি ছিল রেলিগেশনসহ লিগ আয়োজন। যেন ক্লাবগুলো দায়সারাভাবে দল না বানিয়ে ভালো দল গড়ে। তাতে পেশাদার ক্রিকেটাররা খেলার সুযোগ পেতেন। খেলাও হতো প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। কিন্তু মাহিউদ্দিনের দাবি, ক্লাবগুলোই রেলিগেশনসহ লিগ খেলতে রাজি নয়, ‘এটা আমার একার সিদ্ধান্ত নয়। ক্লাবগুলোর তো রাজি হতে হবে।’

মাহিউদ্দিন সিলেট লিগের দুটি ক্লাবের মালিক। তবে শোনা যায় এ দুই ক্লাবের বাইরে তিনি আরও চার-পাঁচটি ক্লাবের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। যদিও মাহিউদ্দিন এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, ‘সব মিথ্যা কথা। আমি দুটি ক্লাব চালাই। এর বাইরে আমার একটা একাডেমি আছে। আর কিছু নেই। সব ক্লাব চাইলে আমিও রেলিগেশন দিতে রাজি আছি।’

খেলতে না পারায় এবার ক্রিকেটারদের আয়রোজগারও নেই। নেই। উপায় না দেখে তাঁরা এখন রাগীব আলী টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট টুর্নামেন্ট আয়োজনের পরিকল্পনা করেছেন। সিলেট কোয়াব ও সিলেট ক্রিকেটার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এবং জাতীয় দলের সাবেক বাঁহাতি স্পিনার এনামুল হক জুনিয়রের আশা, এতে অন্তত ঈদের আগে ক্রিকেটারদের হাতে কিছু টাকাপয়সা আসবে। কিন্তু এটা যে সাময়িক সমাধান, সেটি সবারই জানা।

এনামুল তাই সমস্যার দ্রুত সমাধান চান, ‘আমরা আর কারও প্রতিপক্ষ হতে চাই না। আমরা একটা দাবি তুলেছিলাম, সেটা পূরণ হয়নি। এখন ওনারা নিশ্চয়তা দিক যে খেলাটা ভালোভাবে হবে। আমরাও মাঠে ফিরতে চাই।’