লোকে বলে পাকিস্তান অননুমেয়, ধারাবাহিক নয়। হতে পারে। যদি সেটা হয়ও, দু-একটা ক্ষেত্রে তো ব্যতিক্রম তো থাকেই। টেস্টে অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা পাকিস্তানের জন্য সেই ব্যতিক্রম জায়গা।
১৯৯৯ সাল থেকেই সেখানে ধারাবাহিক ফল উপহার দিচ্ছে পাকিস্তান। ধারাবাহিক হলেও ফল অবশ্য পক্ষে যাচ্ছে না। মানে হেরে যাচ্ছে একের পর এক টেস্টে।
পরিসংখ্যানটা কেমন জানেন? এই সময়ে অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকায় টেস্ট খেলেছে ৩০টি, যেখানে হেরেছে ২৯টিতেই। একমাত্র জয়টি এসেছে ২০০৭ সালে পোর্ট এলিজাবেথ টেস্টে, ইনজামাম-উল-হকের নেতৃত্বে।
পাকিস্তানকে এই লম্বা সময়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন অনেকেই। ওয়াসিম আকরাম, ওয়াকার ইউনুস, মিসবাহ-উল-হক, আজহার আলীরা পারেননি। পরশু রাতে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে শেষ হওয়া টেস্ট সিরিজের নেতৃত্ব যিনি ছিলেন, সেই শান মাসুদও পারেননি। এবারের সফরে পাকিস্তান হেরে গেছে ২-০ ব্যবধানে।
অস্ট্রেলিয়াতেও সর্বশেষ টেস্ট সিরিজের নেতৃত্ব ছিলেন শান মাসুদ। ২৬ বছরেই যেখানেই জয়ের দেখা নেই, সেখানে শান মাসুদের অধীনে সিরিজের ফল কী, তা আলোচনা করার প্রয়োজন কী!
অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে পাকিস্তান টেস্ট হেরেছে টানা ১৭টি। যা প্রতিপক্ষের মাঠে টানা টেস্ট হারার রেকর্ড। যে রেকর্ড নিকট ভবিষ্যতে ভাঙার সম্ভাবনা নেই। রেকর্ডটি আদৌ ভাঙবে কি না, সেই প্রশ্নও আছে। এই রেকর্ড ভাঙলে হয়তো আবার পাকিস্তানই ভাঙতে পারে। কীভাবে?
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে কেপটাউন টেস্ট হারায় প্রোটিয়াদের মাটিতে পাকিস্তানের টানা হার এখন ৯টি, যা টেস্ট ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। সমান ৯টি করে প্রতিপক্ষের মাঠে হার আছে ভারত, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও বাংলাদেশের।
ভারত ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের টানা হারের লজ্জা অস্ট্রেলিয়ায় আর বাংলাদেশের নিউজিল্যান্ডে। ২০১৯ সালে নিউজিল্যান্ডে টানা ৯ ম্যাচ হেরে রেকর্ডের দ্বিতীয় স্থানে ভারত ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গী হয় বাংলাদেশ। ২০২২ সালের জানুয়ারিতে মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টটা জিতে বেরিয়ে আসে টানা হারের সেই বৃত্ত থেকে।
এই দুটি দেশে পাকিস্তান এই সময়ে ১১ বার সফর করেছে। হারের বৃত্তের শুরু ১৯৯৯ সালের ব্রিসবেন টেস্টে। সেই টেস্টে ওয়াসিম আকরামের দল হেরেছিল ১০ উইকেটে। মজার ব্যাপার হলো, এই দুই দেশে আপাতত পাকিস্তানের সর্বশেষ টেস্টেও তারা ১০ উইকেটেই হেরেছে।
সদ্য সমাপ্ত দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে অবশ্য পাকিস্তান জয়ের কাছাকাছিই ছিল। সিরিজের প্রথম টেস্টে ১৪৮ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করা প্রোটিয়াদের ৯৯ রানেই ৮ উইকেট তুলে নিয়েছিল। তিন বছর পর পাকিস্তানের টেস্ট দলে ফেলা পেসার মোহাম্মদ আব্বাস ৬ উইকেট নিয়েই দারুণ এক জয়ের স্বপ্ন দেখাতে শুরু করেছিলেন পাকিস্তানকে।
কিন্তু মার্কো ইয়ানসেনের সঙ্গে মিলে পাকিস্তানিদের সেই স্বপ্ন কেড়ে নেন কাগিসো রাবাদা। আর পরের টেস্টে তো পাকিস্তান লড়াই করেছে ইনিংস ব্যবধানে হার এড়াতে। এই দুই দেশেই কিন্তু সর্বশেষ দুটি ওয়ানডে সিরিজে জিতেছে পাকিস্তান। তবে সাদা পোশাক পরলেই কী যেন হয় দলটির! মৃত্যুকূপে পরিণত হয় দক্ষিণ আফ্রিকা-অস্ট্রেলিয়া।