এখন থেকে তাহলে রসিকতা করে কোনো মন্তব্য করার আগেও সাবধান থাকতে হবে! জশ হ্যাজলউডকেই দেখুন না। অস্ট্রেলিয়ার এই পেসার সম্প্রতি মজা করে একটা কথা বলেছিলেন, সেটাই সবাই কি ‘সিরিয়াসলি’ নিয়ে নিয়েছিলেন।
হ্যাজলউড কী বলেছিলেন, নিশ্চয় সবার জানা। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্ব থেকে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ইংল্যান্ডকে বিদায় করতে হলে স্কটল্যান্ডের কাছে অস্ট্রেলিয়াকে হারতে হতো বা এমন ব্যবধানে জিততে হতো, যেন স্কটল্যান্ডের নেট রানরেট ইংল্যান্ডের চেয়ে বেশি থাকে।
গত বুধবার নামিবিয়াকে হারিয়ে অস্ট্রেলিয়া ‘সি’ গ্রুপ থেকে সবার আগে সুপার এইট পর্ব নিশ্চিত করার পর ইংল্যান্ডকে এভাবে বিদায় করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন হ্যাজলউড, ‘এই টুর্নামেন্টের কোনো না কোনো পর্যায়ে হয়তো ইংল্যান্ডের মুখোমুখি হতে হবে...নিজেদের দিনে তারা অন্যতম সেরা দলগুলোর একটি। টি-টোয়েন্টিতে তাদের বিপক্ষে আমরা ভুগেছিও। তাই টুর্নামেন্ট থেকে তাদের বিদায় করাটা আমাদের জন্য তো বটেই, সম্ভবত অন্যদের জন্যও ভালো।’
হ্যাজলউডের এই মন্তব্যের পর সবাই নড়েচড়ে বসে। আইসিসির ২.১১ নম্বর ধারা মনে করিয়ে দেওয়া হয় অস্ট্রেলিয়াকে। ওই ধারা অনুযায়ী, আইসিসির কোনো ইভেন্টে কোনো দল যদি ইচ্ছাকৃতভাবে এমন কৌশল গ্রহণ করে, যেটি অন্য দলের অবস্থান বদলানোর ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলে, তাহলে সেটি অসদাচরণ হিসেবে বিবেচিত হবে। জোর করে নেট রানরেটের ওপর প্রভাব ফেললেও সেটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচিত। মাঠে আম্পায়াররা এমন অভিযোগ আনতে নিষিদ্ধ হতে পারেন ওই দলের অধিনায়ক।
শেষ পর্যন্ত এ ধরনের কোনো কাণ্ড ঘটেনি। সেন্ট লুসিয়ায় স্কটল্যান্ডকে আজ ৫ উইকেটে হারিয়ে ইংল্যান্ডকে সুপার এইটে তুলেছে অস্ট্রেলিয়া।
যদিও অ্যান্টিগার হোটেলের টিভিতে খেলা দেখা জস বাটলার-মঈন আলীদের ক্ষণিকের জন্য ভয় পাইয়ে দিয়েছিল স্কটল্যান্ড। অস্ট্রেলিয়ার ফিল্ডাররা আজ ছয়-ছয়টি ক্যাচ ফেলেছেন। তাতেই স্কটল্যান্ড পেয়ে যায় ১৮০ রানের চ্যালেঞ্জিং সংগ্রহ।
১৮১ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে একসময় ৩৯ বলে ৮৭ রান দরকার ছিল অস্ট্রেলিয়ার। তবে ট্রাভিস হেডের দায়িত্বশীল ব্যাটিং আর মার্কাস স্টয়নিস ও টিম ডেভিডের ঝোড়ো ব্যাটিংয়ে ২ বল বাকি রেখে জয় পায় অস্ট্রেলিয়া। তাতে ইংল্যান্ড স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে।
যে হ্যাজলউড একটা মন্তব্য করে ইংল্যান্ডকে ভীতসন্ত্রস্ত করে রেখেছিলেন, সেই হ্যাজলউডকে এই ম্যাচে বিশ্রাম দিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। আজ ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে দলটির প্রতিনিধি হয়ে আসেন মিচেল স্টার্ক।
সংবাদমাধ্যমের দিকে অভিযোগের তির ছুড়ে স্টার্ক দাবি করেন, সতীর্থ হ্যাজলউডের রসিকতা করে বলা কথাটা বাড়িয়ে বলা হয়েছে, ‘ক্রিকেট নিয়ে আপনি এ ধরনের ইয়ার্কি করতে পারেন না। অন্যদের ম্যাচের ফল নিয়েও চিন্তা করতে পারেন না। আমরা এখানে জেতার জন্য এসেছি। এটা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট। তা ছাড়া ইংল্যান্ড এখন (সুপার এইট পর্বের) অন্য গ্রুপে। তাই আগামী তিন ম্যাচে এটা খুব বেশি পার্থক্য তৈরি করবে না। আমার মনে হয় আপনারা (হ্যাজলউডের) কথাটিকে অতিরঞ্জিত করে প্রকাশ করেছেন।’
দ্বিতীয় পর্বের প্রতিপক্ষ হিসেবে কোন দল কাকে পাবে, তা সাধারণত প্রথম পর্ব বা গ্রুপ পর্বের খেলা শেষে নিশ্চিত হওয়া যায়। কিন্তু আইসিসি এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সূচি এমনভাবে সাজিয়েছে যে দলগুলো আগেই জেনে গেছে সুপার এইট পর্বে কারা তাদের প্রতিপক্ষ হবে।
এবার গ্রুপের অবস্থান নয়, বাছাইকৃত দলগুলো (এ১, বি২, সি১, ডি২ ইত্যাদি) সুপার এইটে উঠলে খেলবে আগেই নির্ধারণ করা গ্রুপে। যেমন—টানা ৪ ম্যাচ জেতা অস্ট্রেলিয়া ‘বি’ গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরও সুপার এইটে বি১ নয়, বি২ হিসেবে খেলতে হবে। কারণ, ইংল্যান্ডকে আগে থেকে বি১ হিসেবে বাছাই করা হয়েছিল।
এর ফলে সুপার এইটের একই গ্রুপে প্রথম পর্বে চ্যাম্পিয়ন হওয়া তিনটি দলও পড়তে পারে। নতুন এই নিয়ম পছন্দ নয় স্টার্কের, ‘আগেই দল বাছাই করে রাখা নিয়ে একটা প্রশ্ন উঠতেই পারে। আমি এই নিয়মকে সমর্থন করব কি না, নিশ্চিত নই।’