একই মাঠে দুটিই লো স্কোরিং ম্যাচ। তাড়া করার দুটি লক্ষ্যও বেশ কাছাকাছি। দুটি ম্যাচই গড়িয়েছে শেষ ওভারে, শেষ বল পর্যন্ত। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। ম্যাচ বের করে আসতে পারেনি রান তাড়া করতে নামা দুই দল। হারতে হয় নিজ নিজ ম্যাচে। তাতে দুটি দেশেই চলছে সমালোচনার ঝড়। সমালোচনার ধারাও মোটামুটি একই রকম। একে বাদ দাও, ওকে খেলাও, ওর অধিনায়কত্ব ছেড়ে দেওয়া উচিত...।
বলা হচ্ছে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের কথা।
নিউইয়র্কের নাসাউ কাউন্টি স্টেডিয়ামে ভারতের বিপক্ষে সর্বশেষ ম্যাচ খেলেছে পাকিস্তান। সে ম্যাচের স্কোরকার্ড একবার স্মরণ করে দেখা যাক। ভারতের ১১৯ রান তাড়া করতে নেমে পুরো ২০ ওভার খেলেও পারেনি পাকিস্তান। ৭ উইকেটে তুলেছে ১১৩ রান।
একই মাঠে গতকাল রাতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বাংলাদেশের ম্যাচটি স্মরণ করা যাক। দক্ষিণ আফ্রিকার ৬ উইকেটে ১১৩ তাড়া করতে নেমে পুরো ২০ ওভার খেলে ৭ উইকেটে ১০৯ রানে থেমেছে বাংলাদেশ। স্কোরকার্ডে তাকিয়ে চাইলে আরেকটি মিল খুঁজে নিতে পারেন। বাংলাদেশ ও পাকিস্তান—দুই দলই রান তাড়ায় ৭টি করে উইকেট হারিয়েছে। চাইলে কাছাকাছি আরও একটি ব্যাপারও খুঁজে পাবেন। জয়ের জন্য শেষ বলে পাকিস্তানের প্রয়োজন ছিল ৮ রান। বাংলাদেশের ৬ রান।
শেষ ওভারে পাকিস্তানের লক্ষ্য বাংলাদেশের তুলনায় বেশ কঠিন ছিল। ১৮ রান প্রয়োজন ছিল বাবর আজমদের। শেষ ২ বলে এটাই নেমে আসে ১২ রানের সমীকরণে। বাংলাদেশের শেষ ওভারে দরকার ছিল ১১ রান। শেষ ২ বলে সেটাই নেমে এসেছিল ৬ রানের সমীকরণে। এসব দেখে একটি ব্যাপার মনে হতেই পারে, টি-টোয়েন্টিতে রান তাড়ায় পাকিস্তান ও বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের ধারা বুঝি একই! কথাটা জোর দিয়ে বলা না গেলেও মিল তো আছেই।
প্রথমেই একটি ব্যাপার। নাসাউ কাউন্টির উইকেট ব্যাটিংয়ের জন্য যত কঠিনই হোক, এমন স্বল্প লক্ষ্য তাড়া করে দুই দলেরই জেতা উচিত ছিল। পৃথিবীর যেকোনো উইকেটে এমন রান তাড়া করে জেতাটা সেই দলেরই আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ড। মানে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে রান তাড়ায় দলগুলোর এমন পারফরম্যান্স প্রত্যাশিতই। সেটি না হওয়ার কারণ খুঁজবেন বিশেষজ্ঞরা। আপাতত দুটি দলের কিছু বিষয় চোখে পড়ার মতো।
টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান—দুই দলের টপ অর্ডারেই স্ট্রাইক রেট নিয়ে প্রশ্ন আছে। পাকিস্তানে বাবর আজম ও মোহাম্মদ রিজওয়ানের স্ট্রাইক রেট নিয়ে প্রশ্ন ওঠা একদম নিয়মিতই। বাংলাদেশ দলের ব্যাপারটা একটু ভিন্ন। নির্দিষ্ট কোনো খেলোয়াড় নয়, টপ অর্ডারে খেলা সবাইকে নিয়েই বিভিন্ন সময়ে এই প্রশ্ন ওঠে।
তবে বাংলাদেশের টপ অর্ডার যেহেতু তেমন ধারাবাহিক নয়, তাই স্ট্রাইক রেটের চেয়ে ধারাবাহিকতা নিয়েই বেশি প্রশ্ন ওঠে। মিডল অর্ডার ও ফিনিশিংয়েও দুই দলের ধারাবাহিকতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে হামেশাই। সে যা–ই হোক, দুটি ম্যাচে তাকানো যাক।
নাসাউয়ের উইকেটে ব্যাটিং করা কঠিন কিন্তু অসম্ভব নয়। বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের সামনেও লক্ষ্য বিশেষ বড় ছিল না। রান তাড়ায় ওভারপ্রতি গড়ে ৬–এর কম করে তোলার লক্ষ্য ছিল। এমন ম্যাচকে শেষ ওভার পর্যন্ত টেনে নিলে সুবিধাটা কার বেশি? অবশ্যই প্রতিপক্ষ দলের। তাতে প্রতিপক্ষের জয়ের সুযোগ বেড়ে যায়। কারণ, শেষ ওভার কিংবা শেষ বলে যেকোনো কিছুই হতে পারে। বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের ব্যাটসম্যানরা সম্ভবত ব্যাটিংয়ের এই সহজ ব্যাপার ভুলে গিয়েছিলেন।
লো স্কোরিং ম্যাচে সময়মতো একটি-দুটি ছক্কাই ম্যাচ শেষ করে দিতে পারে। কিন্তু পাকিস্তান ও বাংলাদেশ—দুই দলই চাপটা নিয়েছে একদম শেষ দিকে। কৌশলগত দিক থেকে ব্যাপারটি অনেকের চোখে ভুল মনে হলেও বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের ব্যাটিংয়ে মিলটাও এতে ধরা পড়ে।
মিল পাওয়া যায় সমর্থনেও। পাকিস্তানের সাবেকেরা বাবর আজমদের মুণ্ডুপাত করছেন। কারণ, নিজেদের প্রথম দুই ম্যাচই হেরে পাকিস্তান এখন সুপার এইটের আগেই বাদ পড়ার শঙ্কায়। বাংলাদেশ এক ম্যাচ জিতলেও দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হারটি হজম করতে কষ্ট হচ্ছে সমর্থকদের। নাজমুল হোসেন, সাকিব আল হাসানদের তুমুল সমালোচনা চলছে। তবে আবার একটি ম্যাচ জিতলেই ভক্তরা সম্ভবত সব ভুলে যাবেন, যেটা হয় পাকিস্তানেও।
এখানেও তো মিল!