শিরোপা হাতে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস ফ্র্যাঞ্চাইজির মালিক নাফিসা কামাল, ২০২৩ সালের ফাইনালের পর
শিরোপা হাতে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস ফ্র্যাঞ্চাইজির মালিক নাফিসা কামাল, ২০২৩ সালের ফাইনালের পর

চারবারের চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লা যে কারণে থাকতে চায় না বিপিএলে

বিপিএলের ছয় আসরে খেলে চারবারই চ্যাম্পিয়ন। বর্তমান চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের চোখ এবার পঞ্চম শিরোপায়। স্থানীয় ও বিদেশি তারকায় ঠাসা দল নিয়ে এবারও মাঠের আধিপত্য ধরে রাখার লক্ষ্য বিপিএলের সফলতম দলটির। কিন্তু প্রতিবারের মতো এবারও মাঠের লড়াই শুরুর আগে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস ফ্র্যাঞ্চাইজির মালিক নাফিসা কামাল জানিয়েছেন, পুরোনো এবং যৌক্তিক এক দাবি—বিপিএলের রাজস্ব আয়ের ভাগ দিতে হবে ফ্র্যাঞ্চাইজিদের।

বিপিএলের দল চালাতে দরকার টাকা। অথচ আইপিএল, পিএসএলের মতো বাংলাদেশের এই ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে নেই রাজস্ব বণ্টনের কাঠামো। বিপিএলে অংশ নেওয়া দলগুলো বিসিবির আয়ের ভাগ পায় না। দলগুলো তাই শুধুই স্পনসর-নির্ভর। বিপিএলের প্রতিটি আসরের আগে তাই স্পনসর জোগাড়ে হিমশিম খেতে হয় ফ্র্যাঞ্চাইজিদের।

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের অবশ্য অন্যবারের মতো এবারও স্পনসর নিয়ে চিন্তা নেই। কাল এক দিনেই তিনটি স্পনসর প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা করে দল চালানোর সব বন্দোবস্ত করে ফেলেছেন ফ্র্যাঞ্চাইজির মালিক নাফিসা কামাল, যিনি সদ্য সাবেক অর্থমন্ত্রী ও সাবেক বিসিবি সভাপতি আ হ ম মুস্তফা কামালের কন্যা। গুলশানে ফ্র্যাঞ্চাইজি কার্যালয়ে বসে নাফিসা বলছিলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য চ্যাম্পিয়ন হওয়া। যেহেতু আমার টাকাটা উঠে এসেছে স্পনসর থেকে, এখন চ্যাম্পিয়ন হতে চাই। এখন একমাত্র চিন্তা ক্রিকেট।’

নাফিসার এই স্বস্তি অবশ্য সাময়িক। বিপিএলের যে অর্থনৈতিক কাঠামো, তাতে দল চালানো আসলেই বিরাট চ্যালেঞ্জ ফ্র্যাঞ্চাইজিদের জন্য। এবারের ব্যবস্থা হয়ে গেলেও নাফিসা তাই বলেছেন, এভাবে চলতে থাকলে আগামী বিপিএলে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস অংশ নেবে না।

গুলশানে ফ্র্যাঞ্চাইজি কার্যালয়ে নাফিসা বলেছেন, বর্তমান অর্থনৈতিক কাঠামো থাকলে সামনে আর বিপিএলে অংশ নেবে না কুমিল্লা

কথাটা অবশ্য প্রতি আসরের আগেই তিনি বলেন। কিন্তু দাবি পূরণ হয় না। এবার তাই পুরোনো কথাটাই বললেন জোর দিয়ে, ‘আমি আগামী বছর বিপিএল করব কি না নিশ্চিত নই। এখন যেভাবে হচ্ছে, এভাবে হলে আমার মনে হয় না আমার পক্ষে দল করা সম্ভব হবে। এ বছর একটা মিটিং করতে চেয়েছিলাম (বিসিবির সঙ্গে)। গত বছর চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরও প্রেস কনফারেন্সে আমি এটাই অনুরোধ করেছিলাম—একটা মিটিং। মিটিং হলে রংপুরের মালিকপক্ষও বসবে। চিটাগং, ঢাকা—সবাই বসবে। সবাইকে সমান সম্মান দেওয়া উচিত। তারা সবাই কমবেশি বিনিয়োগ করছে। সবাইকে সম্মান দেওয়া উচিত।’

বিপিএল থেকে বিসিবির আয়ের সবচেয়ে বড় খাত সম্প্রচার স্বত্ব। গত বছর বিপিএলের নবম, দশম ও একাদশ আসরের সম্প্রচার স্বত্ব বিক্রি হয়েছে ১০৫ কোটি টাকায়। টুর্নামেন্ট থেকে আয়ের আরেকটি বড় খাত ফ্র্যাঞ্চাইজি ফি। প্রতি মৌসুমের জন্য প্রতিটি ফ্র্যাঞ্চাইজি বিসিবিকে দেয় দেড় কোটি টাকা। প্রতি মৌসুমে শুধু ফ্র্যাঞ্চাইজি ফি বাবদ বিসিবির আয় সাড়ে ১০ কোটি টাকা। তিন আসরের জন্য বিপিএলের টাইটেলসহ স্পনসরশিপ বিক্রি হয়েছে ১৬ কোটি টাকা। কিন্তু বিস্ময়কর হলেও সত্যি, যে দলগুলোর অংশগ্রহণের সুবাদে বিসিবির এত আয়, তারা বিপিএল থেকে কিছুই পাচ্ছে না!

বিপিএলের সফলতম দল কুমিল্লা

নাফিসার দাবি, আইপিএল, পিএসএলের মতো রাজস্ব ভাগাভাগির কাঠামো হতে হবে বিপিএলেও। সে ক্ষেত্রে বিসিবিকে সহযোগিতার হাতও বাড়িয়ে দিতে প্রস্তুত তিনি, ‘এ ক্ষেত্রে আমরা খুবই নমনীয় হব। ওনাদের (বিসিবি) যেটা ভালো হয় সেটাই নিতে রাজি আছি। যদি আমাদের একদম কমটাও দেয়, তবু মডেলটা অন্তত তৈরি করুক। কাঠামোটা তৈরি করুক। প্রথম পদক্ষেপটা নিক।’ পরের মৌসুমে বিসিবি এই উদ্যোগ না দিলে ভিক্টোরিয়ানসকে ছাড়াই টুর্নামেন্ট করতে হবে বলে সাফ জানিয়ে নাফিসা বলেছেন, টিকিট, মাঠ ও সম্প্রচার স্বত্ব থেকে আসা রাজস্ব আয়ের ভাগ দিতে হবে ফ্র্যাঞ্চাইজিদের। বিপিএল থেকে প্রতিবছর কত টাকা আয় হয়, সেটা অবশ্য বলা মুশকিল। বিসিবি এই একটা তথ্য কখনোই প্রকাশ করে না।

অন্য এক প্রশ্নের জবাবে বিপিএলের বিপণনে বিসিবির ব্যর্থতার প্রসঙ্গও এনেছেন তিনি। নাফিসার দাবি, ‘আমাদের তিন বছরের জন্য ওরিয়ন যে টাকা দিয়েছে, খোঁজ নিয়ে দেখেন, এটা বিপিএলের টাইটেল স্পনসর থেকে আসা আয়ের চেয়েও বেশি। এটা আমাদের কাজের কৃতিত্ব। আমরা ওই পেশাদারত্বটা রক্ষা করি।’

কিছু মানুষ আছে, যারা ক্রিকেটে আসতে আগ্রহী। কিন্তু ওইভাবে তাদের বলাই হয় না।
নাফিসা কামাল, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস মালিকের কথায় পেশাদারত্বের প্রসঙ্গ বারবারই এসেছে। তিনি বলেন, ‘কিছু মানুষ আছে, যারা ক্রিকেটে আসতে আগ্রহী। কিন্তু ওইভাবে তাদের বলাই হয় না। আমাদের স্পনসর ওরিয়ন বা ওয়ালটন যারা আছে, তারা সত্যিকার অর্থেই ক্রিকেটে স্পনসর করতে চায়। কারণ, এর বিনিময়ে তারা অনেক কিছু পায়। ক্রিকেট বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বিক্রয়যোগ্য পণ্য। তাহলে কেন আসতে চাইবে না ক্রিকেটে?’

প্রশ্নটা অবশ্য বাংলাদেশের ক্রিকেটের সব ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। এ দেশে ক্রিকেটের বাজার অনেক বড়, মুখে মুখে কথাটা যতই বলা হোক না কেন, কোনো এক রহস্যময় কারণে ক্রিকেট বিক্রি করতে গেলেই আর ক্রেতা খুঁজে পায়না বিসিবি। পেলেও পায় না উপযুক্ত মূল্য। সেটা ঘরোয়া ক্রিকেটই হোক কিংবা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট।