কয়েক মৌসুম ধরেই মহেন্দ্র সিং ধোনির আইপিএল ভবিষ্যৎ নিয়ে অনেক আলোচনা চলছে। ২০২০ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় বলে দেওয়া ধোনি নিজেও আইপিএলে তাঁর ভবিষ্যৎ নিয়ে কিছু বলেননি এখনো। ধোনি পরের আইপিএলেও খেলবেন কি না, সেটি নির্ভার করছে ২০২৫ আইপিএল নিয়ে তাঁর দল চেন্নাই সুপার কিংসের অবস্থান এবং টুর্নামেন্টের কিছু নিয়মে কী ধরনের পরিবর্তন আসছে, সেসবের ওপর।
বয়সের পাশাপাশি ফিটনেসও ধোনির জন্য একটা বাধা হতে পারে। কয়েক বছর ধরে হাঁটুর চোটে ভুগছেন ভারত ও চেন্নাই সুপার কিংসের সর্বজয়ী এই সাবেক অধিনায়ক। ২০২৫ আইপিএলের সময় তাঁর বয়স হবে ৪৪ ছুঁই ছুঁই। চেন্নাইয়ের সমার্থক হয়ে ওঠা ধোনিকে এরপরও ফ্র্যাঞ্চাইজিটি আগামী মৌসুমে খেলাতে চায় বলে কদিন আগে খবর বেরিয়েছিল। তাঁকে খেলাতে অভিষেকের অপেক্ষায় থাকা খেলোয়াড় হিসেবে (আনক্যাপড প্লেয়ার রুল) বিবেচনা করতে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডকে (বিসিসিআই) নাকি পুরোনো নিয়ম ফিরিয়ে আনারও প্রস্তাব দিয়েছিল চেন্নাই।
সম্প্রতি মুম্বাইয়ে আইপিএলের ১০ ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিকদের নিয়ে বৈঠকে বসেছিল টুর্নামেন্টের পরিচালনা পরিষদ। সেখানে পাঁচ বছর পরপর হওয়া মেগা নিলামের বিলোপ, ইমপ্যাক্ট বদলি রাখা না-রাখা, নিলামে বিক্রি হওয়ার পরও বিদেশিরা খেলতে না চাইলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা, সর্বোচ্চ সাত খেলোয়াড় ধরে রাখার দাবি, চুক্তির মাঝপথে খেলোয়াড়দের বেতন বাড়ানোর পরিকল্পনা, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়া খেলোয়াড়কে অভিষেকের অপেক্ষায় থাকা খেলোয়াড় হিসেবে বিবেচনা করাসহ নানা ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
২০০৮ সালে আইপিএলের প্রথম মৌসুম থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ‘আনক্যাপড প্লেয়ার রুল’ চালু ছিল। ২০২২ মৌসুমে দুটি ফ্র্যাঞ্চাইজির (গুজরাট টাইটানস ও লক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্টস) সংখ্যা বাড়ানো হলে নিয়মটি বাতিল করা হয়।
সাম্প্রতিক বৈঠকে সেই নিয়ম ফিরিয়ে আনার জন্য বিসিসিআইকে চেন্নাই সুপার কিংস অনুরোধ করেছিল বলে জানায় ক্রিকেটবিষয়ক ওয়েবসাইট ইএসপিএন ক্রিকইনফো। সেই নিয়ম অনুযায়ী, কোনো খেলোয়াড় পাঁচ বা এর বেশি বছর আগে অবসর নিলে তাঁকে ‘অভিষেকের অপেক্ষায় থাকা’ হিসেবে বিবেচনা করা হবে। সে ক্ষেত্রে স্বাভাবিকভাবেই সে খেলোয়াড়কে ধরে রাখতে কম খরচ করতে হবে।
ধোনি ভারতীয় জাতীয় দল থেকে অবসরের ঘোষণা দেন ২০২০ সালে আগস্টে। তবে শেষ ম্যাচটি খেলেন ২০১৯ সালে জুলাইয়ে ওয়ানডে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে। সেই হিসাবে এ বছরের জুলাইয়েই ভারতের হয়ে তাঁর শেষ ম্যাচ খেলার পাঁচ বছর পূরণ হয়েছে। আগামী আইপিএল নিলামেই তাই তাঁকে ‘আনক্যাপড খেলোয়াড়’ হিসেবে বিবেচনা করা হতে পারে। কিন্তু হিসাবটা যদি ধোনির অবসরের ঘোষণার সময় থেকে করা হয়, তাহলে পাঁচ বছর পূর্ণ হবে ২০২৫ সালের আগস্টে।
কিন্তু আগামী আসর এর আগেই শেষ হবে। সে ক্ষেত্রে ধোনির অবসরের ক্ষেত্রে বিসিসিআই একটি ‘কাট-অফ টাইম’ চালু করতে পারে। সেটা হলে মাত্র ৪ কোটি রুপিতেই তাঁকে ধরে রাখতে পারবে চেন্নাই।
সম্প্রতি ধোনি নিজেই তাঁর আইপিএল ভবিষ্যৎ নিয়ে মুখ খুলেছেন। হায়দরাবাদে একটি অনুষ্ঠানে বলেছেন, ‘এটার জন্য অনেক সময় আছে। তারা খেলোয়াড় ধরে রাখার ব্যাপারে কী সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, সেটি দেখতে হবে। এ মুহূর্তে বল আমাদের কোর্টে নেই।’
চেন্নাই সুপার কিংস অবশ্য বিসিসিআইকে ‘আনক্যাপড প্লেয়ার রুল’ ফিরিয়ে আনার প্রস্তাব দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছে। পাঁচবারের আইপিএল চ্যাম্পিয়ন ফ্র্যাঞ্চাইজিটির প্রধান নির্বাহী কাশী বিশ্বনাথন টাইমস অব ইন্ডিয়াকে বলেছেন, ‘এ ব্যাপারে আমার কোনো ধারণা নেই। এটা ফিরিয়ে আনার জন্য আমরা বিসিসিআইয়ের কাছে অনুরোধ করিনি। বরং বোর্ডই আমাদের বলেছে, আনক্যাপড খেলোয়াড়ের নিয়ম রাখা হতে পারে। শুধু এটুকুই কথা হয়েছে। সব নিয়মকানুন তারাই ঘোষণা করবে।’
আইপিএলের মৌসুমে ডেথ ওভারে ‘ছক্কা বিশেষজ্ঞ’ হিসেবে খেলেছেন ধোনি। মুখোমুখি ৭৩ বলে তিনি ১৩টি ছক্কার সঙ্গে মারেন ১৪টি চার। ক্যারিয়ারে প্রথমবার এক মৌসুমে ২০০-এর ওপরে স্ট্রাইক রেটে ব্যাটিং করেছেন; প্রতি ১০০ বলে তুলেছেন ২২০.৫৪ রান। ১১ ইনিংসের মধ্যে আটবারই ছিলেন অপরাজিত।