সাকিব আল হাসানের নামের পাশে তখন ৪ উইকেট। হ্যারি টেক্টরের বিপক্ষে বল করছিলেন। আয়ারল্যান্ডের ইনিংসে সেটা ছিল ষষ্ঠ ওভার। শেষ বলে লেগের দিকে উড়িয়ে মারার চেষ্টা করতে গিয়ে ব্যর্থ হলেন টেক্টর, স্টাম্পে বল লাগার শব্দটা শুনেই মাথা নিচু করে ড্রেসিংরুমের পথ ধরলেন। দ্বিতীয়বারের মতো টি-টোয়েন্টিতে ৫ উইকেট পেয়ে সাকিব বিশেষ কোনো উদ্যাপনই করলেন না! ডাগআউটে বসে দৃশ্যটা দেখছিলেন স্পিন বোলিং কোচ রঙ্গনা হেরাথ। তাঁর মুখে এক চিলতে হাসি, যার অর্থ হতে পারে —এটাই তো হওয়ার কথা ছিল!
বৃষ্টির কারণে ১৭ ওভারে কমিয়ে আনা ম্যাচটায় বাংলাদেশ যখন ৩ উইকেটে ২০২ রান করে ফেলে, তখনই আসলে ম্যাচের ফল অনুমান করাটা সহজ হয়ে গিয়েছিল। তাড়া করতে নেমে সাকিবের এক স্পেলেই এলোমেলো হয়ে যায় আয়ারল্যান্ড, প্রথম ৬ ওভারেই হারিয়ে ফেলে ৬ উইকেট। ম্যাচের ফল তখনই ঠিক হয়ে গিয়েছিল আসলে। ১৭ ওভার শেষে ৯ উইকেটে ১২৪ রান করতে পেরেছে আয়ারল্যান্ড। ৭৭ রানের জয়ে এক ম্যাচ হাতে রেখেই টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতে নিল বাংলাদেশ। রানের হিসেবে এটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জয়।
পল স্টার্লিংকে ধরা হয় আয়ারল্যান্ড দলের সেরা টি-টোয়েন্টি ব্যাটসম্যান। দীর্ঘদিন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলছেন। ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটেও নিয়মিত মুখ এই আইরিশ ওপেনার। বাংলাদেশের কাজটা একটু কঠিন করতে পারলে এই স্টার্লিংয়েরই সেটা করার কথা।
কিন্তু তাসকিন আহমেদ সে সুযোগ দিলেন না! প্রথম টি-টোয়েন্টির মতো আজও তাসকিনের শিকার স্টার্লিং। সেটাও ইনিংসের প্রথম বলেই! ক্লোজ টু দ্য স্টাম্প থেকে করা তাসকিনের আউটসুইংয়ে ব্যাট ছুঁইয়ে কট বিহাইন্ড হন আইরিশ অধিনায়ক।
এরপর আইরিশ ব্যাটিংয়ে ধস নামান সাকিব একাই। নিজের স্পেলের প্রথম বলেই উইকেট পেয়ে যান তিনি। সেটাও এলো অদ্ভুত এক শটে। সাকিবের বলটা ছিল শর্ট লেংথে, গতিও ছিল না। সেটিতে লরকান টাকার হাঁটু গেড়ে পুলের মতো করতে চেয়েছিলেন, শেষ মুহূর্তে ব্যাট থামিয়ে ফেললেন। স্কয়ার লেগে তাতেই রনি তালুকদারের কাছে গেল সহজতম ক্যাচ।
পরের ওভারে এসে আরও দুইবার আইরিশ ব্যাটিং লাইনআপে আঘাত হানেন সাকিব। আরও দুটি উইকেট নিয়ে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে একাধিকবার টি-টোয়েন্টিতে ৫ উইকেট স্পর্শ করেন। টিম সাউদিকে ছাড়িয়ে টি-টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারির তালিকায় আবার শীর্ষেও উঠে আসেন সাকিব।
ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে একা লড়ে গেছেন অলরাউন্ডার কার্টিস ক্যাম্ফার। প্রতি আক্রমণের পথ বেছে নিয়ে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ফিফটি খুঁজে নেন তিনি। তাসকিনের ইয়র্কারে বোল্ড হওয়ার আগে ৩০ বলে ৫০ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলে বাংলাদেশের জয়ের অপেক্ষা বাড়ান ক্যাম্ফার।
এর আগে বৃষ্টির কারণে ম্যাচটা কমিয়ে আনা হয় ১৭ ওভারে। খেলা যখন শুরু হয়, তখনো বৃষ্টিই নেমেছে—চার-ছক্কার বৃষ্টি। আইরিশদের আমন্ত্রণে ব্যাট করার সুযোগ পেয়ে আরও একবার বিস্ফোরক ব্যাটিংয়ের প্রদর্শনী দেখালেন লিটন দাস ও রনি তালুকদার। দুজনের উদ্বোধনী জুটিতে এসেছে রেকর্ড ১২৪ রান। ১৮ বলে ফিফটি করে লিটন বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের মধ্যে দ্রুততম ফিফটির রেকর্ডও করেছেন।
সে মঞ্চে দাঁড়িয়ে হাত খুলে খেলেছেন সাকিব আল হাসান ও তাওহিদ হৃদয়। তাতে বাংলাদেশের রান গিয়ে দাঁড়ায় ৩ উইকেটে ২০২। প্রথম ম্যাচে ১৯.২ ওভারেই ২০৭ রান তুলেছিল বাংলাদেশ। আজ ১৭ ওভারেই তুলল ২০২ রান। নিজেদের ইতিহাসে প্রথমবার টানা দুই ম্যাচে ২০০ বা এর বেশি রানের স্কোর গড়ল বাংলাদেশ।