প্রায় নিখুঁত ক্রিকেট খেলেই বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে উঠেছে ভারত। লিগ পর্বে ৯ ম্যাচের সব কটিই জিতেছে। ব্যাটসম্যানরা দারুণ ফর্মে, বোলাররাও দুর্দান্ত। এখন সামনে সেমিফাইনাল। মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে প্রতিপক্ষ নিউজিল্যান্ড।
এমন বড় ম্যাচের আগে ভারতের প্রস্তুতিতে কোনো ফাঁক নেই। টানা জয়ের পথে আছে দল, অনাকাঙ্ক্ষিত চোটও নেই, খেলোয়াড়েরাও আছেন ফর্মে। তাহলে সেমিফাইনাল জয়ে ভারতই তো এগিয়ে! সেটা হতে পারে, কিন্তু মাঠের লড়াইয়ে ফয়সালা তো আর এভাবে হয় না। সেমিফাইনালের মতো বড় ম্যাচের ফল নির্ণয়ে সবচেয়ে বড় প্রভাবক হয়ে দাঁড়াতে পারে মাঠের বাইরের একটি বিষয়—প্রত্যাশার চাপ। সংবাদ সম্মেলনে রোহিত শর্মাকে এই প্রশ্নের উত্তর দিতে হলো সবার আগে।
ভারত এমনিতেই ক্রিকেটপাগল দেশ। ঘরের মাঠে আয়োজিত বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ওঠায় এই ম্যাচ নিয়ে দেশটির ক্রিকেটপ্রেমীদের অমিত প্রত্যাশার চাপ থাকাই স্বাভাবিক। রোহিত শর্মার দল এই চাপ সহ্য করে নিজেদের খেলাটা খেলতে কতটা প্রস্তুত? এই প্রশ্নটাই একটু ঘুরিয়ে করা হয়েছিল ভারতের অধিনায়ককে—দল যেহেতু ভালো ছন্দে আছে, তাহলে এমন বড় ম্যাচে প্রত্যাশার চাপ সহ্য করে ভালো খেলার ওপরই ম্যাচের ফল নির্ভর করছে কি না?
এই প্রশ্নের উত্তরে রোহিত চাপটা স্বীকার করে নিলেন সবার আগে, ‘হ্যাঁ, প্রথম ম্যাচ থেকে সর্বশেষ ম্যাচ পর্যন্ত এটাই হয়েছে। সর্বশেষ ম্যাচটা আমরা খেলেছি বেঙ্গালুরুতে। লিগ ম্যাচ, সেমিফাইনাল কিংবা ফাইনাল—যেটাই হোক না কেন, বিশ্বকাপের ম্যাচে চাপ থাকবেই। এটাই হবে, কারণ টুর্নামেন্টটা বিশ্বকাপ, তাই চাপ থাকাই স্বাভাবিক।’ রোহিত এরপর চাপ সামলানোর কথা বললেন, ‘সর্বশেষ ৯ ম্যাচেই আমরা চাপ খুব ভালোভাবে সামলেছি। ছেলেরা ভালো খেলেছে। আমরা শুধু নিজেদের খেলাটা নিয়েই ভেবেছি। ভালো ক্রিকেট খেলতে চেয়েছি, যেটা পেরেছি।’
ভারতের ক্রিকেটার হিসেবে প্রত্যাশার চাপটা কেমন হয়, সেটাও ব্যাখ্যা করলেন রোহিত, ‘আপনি ভারতীয় ক্রিকেটার হলে সংস্করণ যেটাই হোক, টুর্নামেন্ট যেটাই হোক, চাপ থাকবেই।’ এর কারণ হিসেবে আগামীকালের সেমিফাইনাল ম্যাচের প্রেক্ষাপট টেনে আনলেন, ‘(ভারতের) সব জায়গা থেকেই শুনতে পাবেন, আগামীকাল আমাদের জিততে হবে। শতক পেতে হবে, ৫ উইকেট নিতে হবে। দুই শ থেকে আড়াই শ ম্যাচ খেলা কেউ কিংবা ৫ থেকে ১০ ম্যাচ খেলা কেউ—সবাইকে একই পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হয়। তাই চাপের প্রশ্নে এটা ভারতীয় ক্রিকেটারদের জন্য বাধ্যতামূলক।’
রোহিত এ অমিত প্রত্যাশার চাপ কাটিয়ে দল কীভাবে খেলছে, সেটাও বলেছেন, ‘চাপ তো থাকবেই। তবে আমরা কয়েক বছর ধরেই এই ব্যাপারটিকে পাশ কাটিয়ে নিজেদের খেলা, খেলার ধরন ও কৌশলে মনোনিবেশ করেছি।’ ভারতের অধিনায়ক এরপর দার্শনিকসুলভ কণ্ঠে বলেন, ‘মাঠের বাইরে কোনো কিছু তো আর থামানো যাবে না, আর এটা থামবেও না। তাই আমাদের নিজেদের খেলা ও প্রতিপক্ষের চ্যালেঞ্জ নিয়ে মনোযোগী হওয়াই দরকার।’
যেকোনো বড় ম্যাচের আগেই ক্রিকেটাররা একটু হলেও চাপে ভোগেন। বিশ্বকাপ সেমিফাইনাল হলে তো কথাই নেই। আর অধিনায়ক? এমন ম্যাচে অধিনায়কের চাপটা সম্ভবত সবচেয়ে বেশি। দল কীভাবে খেলবে, অধিনায়ক নিজে কেমন পারফরম্যান্স করবেন—এসব নিয়ে তো ম্যাচের আগে ঘুম হওয়ারই কথা না! রোহিতের কাছেও ঠিক একই বিষয় জানতে চাওয়া হয়েছিল, এমন বড় ম্যাচের আগে তাঁর কী অবস্থা?
রোহিতের উত্তর, ‘না, এটা তো হয়ই। সে জন্যই আমি একা থাকি না। পরিবার সঙ্গে থাকে। তাই নানা বিষয় থাকে মাথায়, এটা ভালোই। হোটেল কক্ষে যাওয়ার পর ক্রিকেট থেকে দূরে থাকি। অন্য বিষয় নিয়ে অনেক কথা বলি।’ রোহিত এরপর ক্রিকেট নিয়ে বেশি বেশি না ভাবার উপকারিতাও বুঝিয়ে বললেন, ‘হাতে সময় থাকলে ক্রিকেট নিয়ে অনেক ভাবতে পারেন। অন্য কিছু নিয়ে ভাবার সুযোগ পেলে (ক্রিকেট নিয়ে) না ভাবাই ভালো। কারণ, সারা দিন এটা নিয়ে ভেবে লাভ কী? তাই অন্য কিছু নিয়ে ভাবাও গুরুত্বপূর্ণ।’